জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আপনি যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৭ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২১ বুধবার আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার
আপনিও পারেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমশ এতই সংকটপূর্ণ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে যে অনেকে মনে করছেন নিউক্লিয়ার যুদ্ধে পৃথিবী ধ্বংস না হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত থেকে এটি ঠিকই রক্ষা পাবে না। কোনো স্বাভাবিক মানুষই চান না স্রেফ নিজেদের নির্বুদ্ধিতার কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক। এ সুন্দর গ্রহটির প্রতি আপনারও কিছু দায়িত্ব আছে। এটিকে পুনরায় বাসযোগ্য করে তুলতে আপনি নিজেও ভূমিকা রাখতে পারেন।
আপনার কাছে মনে হতে পারে আপনি কি-ই-বা অবদান রাখবেন যেখানে এ সংকটের মাত্রা অনেক বেশি জটিল ও গভীরে প্রোথিত। কিন্তু আপনার কিছু ছোট ছোট কাজই রাখতে পারে বৃহত্তর ভূমিকা। আর এ প্রতিরোধযুদ্ধে আপনি তো একা নন, আপনার পাশাপাশি আরও অনেকর সম্মিলিত প্রচেষ্টা হয়তো দারুণ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে সামগ্রিক সমস্যাটির সমাধানের ক্ষেত্রে। আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক সেরকম কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদক্ষেপের কথা।
প্রতিবাদই প্রথম পন্থা
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হচ্ছে এ নিয়ে সোচ্চার থাকা। আপনার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর অন্যকে শোনান। আপনার এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বলুন যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে যেকোনো প্রতিবাদসভা, সেমিনারে যোগ দিতে পারেন। আপনার আশেপাশের মানুষদের মধ্যে জলবায়ু সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য আপনি ও আপনার বন্ধুরা কাজ করতে পারেন। জলবায়ু সংকটের রাজনৈতিক-অর্থনীতি নিয়ে ধারণা রাখুন।
খাবারটাও হোক 'জলবায়ুবান্ধব'
আপনার প্রিয় খাবারটা হতে পারে কার্বন নিঃসরণের একটি বড় উৎস। মাংস জাতীয় খাবারগুলো প্রচুর কার্বন নিঃসরণ করে। তবে তার মানে এই নয় যে আপনাকে পুরোপুরি মাংস খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। তবে আপনি যদি মাংস খাবার পরিমাণ অর্ধেকে কমিয়ে আনতে পারেন তাহলে আপনার খাবার থেকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৪০ শতাংশ কমে যাবে।
খাবার অপচয় করা যাবে না একদম। স্থানীয়ভাবে ও জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন খাদ্যদ্রব্য বেশি খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এরচেয়ে ভালো হয় নিজের খাবার নিজে চাষ করতে পারলে। সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়, কিন্তু গ্রামের দিকে অনেকে চাইলে ছোটখাটো চাষবাস করে দুবেলা একপদের খাবারের যোগানটা নিজেরাই করতে পারেন।
নবায়নযোগ্য শক্তি
বাড়িঘরে শক্তির উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। বিদ্যুৎশক্তি অপচয় করা আমাদের জন্য খুব বেশি স্বাভাবিক একটা ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র বা সেবা যেমন ব্যবহার করা যাবে না, তেমনিভাবে এগুলো ব্যবহারের কর প্লাগ থেকে খুলে রেখে সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে। যেসব বৈদ্যুতিক বাতি, ফ্যান বা অন্য যেকোনো যন্ত্র কম বিদ্যুৎ খরচ করে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
পদব্রজে চলুন, আকাশপথেও নাস্তি
নিজের গাড়ি না চালিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। এত বড় ত্যাগ হয়তো আপনার পক্ষে করা সম্ভব হবে না, তবে নিদেনপক্ষে গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক রাখুন যেন তা থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস বেশি না ছড়ায়। হাঁটাপথ দূরত্ব হেঁটে কাবার করাই সচেতন মানুষের কাজ। সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। আর যেসব গন্তব্যে গাড়িতে করে যাওয়া সম্ভব, সেগুলোতে উড়োজাহাজে না চড়া খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ, এ বায়ুযানটি পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে অনেক বেশ অবদান রাখে।
অপচয় আর নয়
আপনি জানেন কি আপনার ফেলে দেওয়া প্যান্ট-শার্টের কারণে পৃথিবী দূষিত হচ্ছে? আপনি হয়তো নতুন জামাকাপড় কিনলেন, পুরনোগুলো ফেলে দিলেন। এতে হয়তো অর্থনীতির চাকা সচল হলো, কিন্তু আপনার জন্য আরেক সেট নতুন জামা বানাতে কী পরিমাণ পানির খরচ হয়েছে সে কথাটাও একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনি আগের জামাগুলো আরও কিছুদিন ব্যবহার করলে তাতে কিন্তু এ ক্ষতিটা হতো না।
আবারও বলছ, এটা একটা সামগ্রিক হিসেব। আপনার মতো আরও অনেকের ভালো কাজের সামগ্রিক ফলাফলের কথাই সবসময় বলা হচ্ছে। জামাকাপড়ের মতো অন্য যেকোনো কিছুই অপচয় করা যাবে না। খাবার অপচয় করা যাবে না, পানি নষ্ট করা যাবে না, পরিবেশ দূষণ করা যাবে না। এসব কাজ করার আগে একটু ভাবলে আপনি সগর্বে বলতে পারবেন এই পৃথিবীকে বাঁচাতে আপনার সরাসরি ত্যাগ রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট