জলবায়ু পরিবর্তন: মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশিরা
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১ সোমবার
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাব বেশি পড়ে বাংলাদেশে। দেশের উত্তর বা দক্ষিণাঞ্চল হোক বা রাজধানী ঢাকা, সব জায়গার মানুষই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় জর্জরিত। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে সমস্যাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশিদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন কেবল বন্য বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি করছে না, বরং তা পাল্টে দিচ্ছে আবহাওয়ার ধরনও। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসিক আবহাওয়া বার্তা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রীষ্মের সময় আরও বেশি গরম পড়ছে, এমনকি শীতকালের আগের মতো শীত অনুভূত হয় না। বর্ষার মৌসম মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলছে। ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে জনপ্রিয় বাংলাদেশে বর্তমানে ঋতু বৈচিত্র কমছে।
আর আবহাওয়া পরিবর্তন মানুষের শারিরীক অবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘ক্লাইমেট এফ্লিকশন’ এ জলবায়ু পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংক্রামক, পানিবাহীত এবং মশাবাহীত রোগ যেমন বাড়ছে তেমন প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যেও।
২০১৯ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের দিকে তাকালে দেখা যায়, সারাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের ৭৭ শতাংশেই হয়েছে রাজধানীতে। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সাথে আবহাওয়ার সরাসির সম্পর্ক আছে। সে বছর ঢাকায় ফেব্রুয়ারিতে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা ১৯৭৬ সালের পর সর্বোচ্চ ছিল। আর মার্চ ও জুলাই মাসে আবহাওয়া ছিল উষ্ণ, যা ডেঙ্গু সংক্রমণের গতি বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই ধরে নেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতি হচ্ছে যেভাবে
বাংলাদেশের কিছু প্রতিবেদন ও গবেষণায় দেখা গেছে, আবহাওয়া মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও হতাশা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্মের মৌসুমে মানুষের দুশ্চিন্তা কম থাকে কিন্তু বর্ষাকালে হতাশা বেড়ে যায়। পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি হতাশায় ভুগছেন আর পুরুষ দুশ্চিন্তায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিচারে লিঙ্গের পাশাপাশি স্থানও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মানুষের হতাশা বা দুশ্চিন্তা যথাক্রমে ১৬ এবং ৩১ শতাংশ বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতের কোন সমস্যা নয়। এর সাথে সাথে দেশে বাড়ছে শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা। অনেক সময় মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চায় না। তবে এ ধারা পরিবর্তন করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। বিশেষ করে বয়স্ক ও গরিবদের এই বিষয়ে সচেতনত করার প্রয়োজন বেশি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় আবহাওয়ার তথ্য ব্যবহার করে জলবায়ু-সংবেদনশীল রোগের বিবর্তন খুঁজে বের করা এবং রোগের নজরদারি জোরদার করা এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য, স্থানীয় পর্যায়ে সঠিক আবহাওয়ার ডেটা রেকর্ড করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এটিকে স্বাস্থ্য ডেটার সাথে লিঙ্ক করতে হবে।
প্রদিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে বিভিন্ন রোগ বিষয়ে নজরদারি জোরদার করে এবং একটি জলবায়ু-ভিত্তিক ডেঙ্গু প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে দেশটি ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।