প্রথমবারের মতো টি টুয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৭ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১ সোমবার
প্রথমবারের মতো টি টুয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুললো অস্ট্রেলিয়া। রবিবার সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে অজিরা।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ঝড়ো ৮৫ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। এমন ইনিংসের পরও নিউজিল্যান্ডকে হার থেকে রক্ষা করতে পারেননি উইলিয়ামসন। মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নারের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৭ বল বাকি রেখেই ২ উইকেটে ১৭৩ রান তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। মার্শ অপরাজিত ৭৭ ও ওয়ার্নার ৫৩ রান করেন।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ড্যারিল মিচেল। ভালো শুরু করেও, চতুর্থ ওভারে দলিয় ২৮ রানে বিচ্ছিন্ন হন তারা। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৭২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা মিচেলকে বিদায় দেন অস্টেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউড। ১টি ছক্কায় ৮ বলে ১১ রান করেন মিচেল।
এরপর উইকেট ধরে খেলে সাবধানতার সাথে এগোতে থাকেন গাপটিল ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মিচেলের আউটের পর ২৮ বল কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি মারতে পারেননি গাপটিল ও উইলিয়ামসন। আর ১০ ওভার শেষে রান ছিলো ১ উইকেটে ৫৭।
১১তম ওভারের চতুর্থ বলে হ্যাজেলউডের হাতে জীবন পান উইলিয়ামসন। স্টার্কের ফুলটস বল ওভার বাউন্ডারির উদ্দেশ্যে মেরেছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক, ফাইন লেগে বাউন্ডারির কাছে জীবন পান উইলিয়ামসন। তখন তার নামের পাশে ছিলো ২১ রান।
১২তম ওভারের প্রথম বলে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন স্পিনার এডাম জাম্পা। ৩৫ বলে ৩টি চারে ২৮ রান করা গাপটিলকে শিকার করেন জাম্পা। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৪৮ রান যোগ করেন উইলিয়ামসন-গাপটিল।
গাপটিল ফিরে গেলে, নিউজিল্যান্ডের রান তোলায় ভাটা পড়েনি। দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন উইলিয়ামসন। ১৩তম ওভারে স্পিনার ম্যাক্সওয়েলকে দু’বার ছক্কা মারেন তিনি। ঐ ওভার থেকে ১৬ রান পায় নিউজিল্যান্ড। ৩১ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান উইলিয়ামসন।
১৬তম ওভারে স্টার্ককে তুলোধুনো করেছেন উইলিয়ামসন। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ রান তুলেন তিনি। তবে ১৮তম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন হ্যাজেলউড। গ্লেন ফিলিপসকে ১৮ ও উইলিয়ামসনকে ৮৫ রানে আউট করেন অসি পেসার। ৪৮ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসটি সাজান উইলিয়ামসন। তৃতীয় উইকেটে ফিলিপসের সাথে ৩৭ বলে দলকে ৬৮ রান এনে দেন উইলিয়ামসন। এই জুটিতে উইলিয়ামসনের অবদান ছিলো ২০স বলে ৪৬ রান। উইলিয়ামসনের ৮৫ রান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালের মঞ্চে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। ২০১৬ সালে কোলকাতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস।
উইলিয়ামসন যখন ফিরেন তখন নিউজিল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ১৪৮। বল বাকী ছিলো ১৩টি। শেষদিকে জেমস নিশাম ও টিম সেইফার্ট অবিচ্ছিন্ন ২৪ রান যোগ করেন। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭২ রানের বড় সংগ্রহই পায় নিউজিল্যান্ড। নিশাম ৭ বলে ১৩ ও সেইফার্ট ৮ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার সফল বোলার ছিলেন হ্যাজেলউড। ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি।
জয়ের জন্য ১৭৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে ৫ রানে থামান নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।
দলীয় ১৫ রানে ফিঞ্চকে হারানোর পর দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। পাওয়ার প্লেতে সুবিধা করতে না পারায় ৪৩ রান তোলেন তারা। তবে ১২তম ওভারে দলের স্কোর শতরানে নিয়ে যান ওয়ার্নার ও মার্শ। ১৩তম ওভারে ওয়ার্নারকে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরার পথ দেখান বোল্ট। ৫৩ রান করতে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন ওয়ার্নার। মার্শের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৫৯ বলে ৯২ রান যোগ করেন ওয়ার্নার। ২১তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৩৮ বল খেলেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৬৬ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। বল ছিলো ৪৬টি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন মার্শ ও ম্যাক্সওয়েল। ১৪ থেকে ১৬ ওভারে ৪০ রান তুলেন তারা। এতে ম্যাচ হাতে মুঠোয় চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার। শেষ ৪ ওভারে ২৪ রানের প্রয়োজন পড়ে অজিদের।
প্রয়োজনীয় ২৪ রান হেসে খেলে তুলে ফেলেন মার্শ ও ম্যাক্সওয়েল। ৭ বল বাকী রেখে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন তারা। সেই সাথে প্রথম শিরোপাও। ৫০ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৭ রান করেন মার্শ। ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরিতে দলের জয়ের পেছনে বড় অবদান ছিলো মার্শের। ১৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।