সিনেমায় ম্যাকগাফিন-এর রহস্য
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার
'পাল্প ফিকশন' (১৯৯৪) সিনেমায় যেই ব্রিফকেইসটা নিয়ে এত কাণ্ড, তার ভেতরে কী আছে সেটার কথা কি কেউ কখনো জানতে পেরেছে? অথবা 'রোনিন' (১৯৯৮) সিনেমার সেই স্যুটকেসটাতেই বা কী এমন মহার্ঘ বস্তু ছিল যার জন্য এত হাঙ্গামা হলো? সিনেমায় এরকম অনেক জিনিসপত্র দেখা যায় যেগুলো নিয়ে দর্শকের আগ্রহের কমতি থাকে না, যেগুলোর ওপর ভর করে সিনেমার গল্প এগিয়ে যায়। এ রহস্যময় সিনেম্যাটিক উপাদানগুলোকে বলা হয় ম্যাকগাফিন।
ম্যাকগাফিন হচ্ছে সিনেমার প্লট ডিভাইস। এটি হতে পারে একটি বস্তু, একজন ব্যক্তি, কোনো লক্ষ্য, কোনো ধারণা ইত্যাদি। এই ম্যাকগাফিন গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিবাচক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
ম্যাকগাফিনের নিজস্ব কোনো ভ্যালু নেই। এটির কাজই কেবল সিনেমার গল্পকে তরতর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা। এই যেমন 'দ্য বিগ লেবাওস্কি' (১৯৯৮) সিনেমায় একটি মাদুরের জন্য কত জল গড়াল, কিন্তু মাদুরটির তাতে কিছুই যায় আসেনি। অর্থাৎ ওই মাদুরের কোনো নিজস্ব বিশেষত্ব নেই, অথচ সিনেমার গল্পের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ম্যাকগাফিন-এর ধারণাটি প্রথম জনপ্রিয় করেন 'মাস্টার অভ সাসপেন্স'খ্যাত আলফ্রেড হিচকক। যদিও অনেকে মনে করেন চিত্রনাট্যকার অ্যাঙ্গাস ম্যাকফালি সর্বপ্রথম এ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। হিচককের মতে ম্যাকগাফিন অমূলক, নিতান্তই তুচ্ছ, অন্তঃসারশূন্য একটি বস্তু।
হিচককের অনেক সিনেমাতেই ম্যাকগাফিনের সরব উপস্থিতি ছিল। তার 'নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট' (১৯৫৯), 'সাইকো' (১৯৬০), 'ভার্টিগো' (১৯৫৮), 'ডায়াল এম ফর মার্ডার' (১৯৫৪) ইত্যাদি সিনেমা ম্যাকগাফিন ব্যবহারের চমৎকার উদাহরন।
আধুনিককালের সিনেমাগুলোতেও ম্যাকগাফিনের ব্যবহার অহরহ দেখা যায়। যেমন 'অ্যাটমিক ব্লন্ডে' (২০১৭), 'মিশন ইম্পসিবল ৩' (২০০৬), 'জাঙ্গল ক্রুজ' (২০২১) ইত্যাদি। তবে কোনো উপাদান সিনেমার গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করলেই সেটা ম্যাকগাফিনের পরিণত হবে না। যেমন মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স-এর ইনফিনিটি স্টোনগুলোর জন্য প্রোটাগনিস্ট আর অ্যান্টাগনিস্টদের মধ্যে এত দ্বন্দ্ব, যার ওপর ভিত্তি করে একের পর একের সিনেমা তৈরি হয়েছে, সেখানে পাথরগুলো ম্যাকগাফিনের মতো আচরণ করলেও এগুলো তা নয়। কারণ এগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, স্রেফ সিনেমাকে টেনে নেওয়ার বাইরেও দর্শকের কাছে এগুলোর স্থান আরও ওপরে।