অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার বাঁশ শিল্প

রাজিব শর্মা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২১ সোমবার  

বাঁশ দিয়ে সোফা তৈরি করছেন এক রাখাইন কারিগর।

বাঁশ দিয়ে সোফা তৈরি করছেন এক রাখাইন কারিগর।

বাঁশঝাড় ও বেত বনের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। তবে, কালের বিবর্তনে ও নগরায়নের ফলে বাঁশঝাড় কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প।

ষড়ঋতুর দেশে আদিকাল থেকে বাঁশের ব্যবহার বহুমাত্রিক। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় গ্রাম বাংলার এক চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় অজস্র গাছপালা। বাংলাদেশের জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাঁশ শিল্প।

নিত্য ব্যবহার্য এই বাঁশ কালক্রমে লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির এক প্রতীক। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্পকর্ম বংশপরম্পরায় চলে আসছে।

বংশপরম্পরায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের চকরিয়ার পাহাড়ি জনপদ মানিকপুরের রাখাইন পাড়ায় বাঁশের তৈরি কারুশিল্পের গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত বছর আগে। বাঁশ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হয় এখানে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- ঝুড়ি, ঝাকা, চালুন, খাঁচা, পাটি, খাড়ি, ঝাড়ু, কুলা, হাতপাখা, মাদুর, বাঁশের দোচালা ও চারচালা ঘর; বাড়ি-ঘরের বেড়া, ঘরের খুঁটি, ঘরের ঝাপ, বেলকি, কার, ঘরের মাচা, ঘরের খাট, ঘরের আসবাব হিসেবে মোড়া, চাটাই, সোফা, বুকসেলপ, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, সিগারেট রাখার ছাইদানি, নূনদানি, পানদানি, চুনদানি, ইত্যাদি।

মেকিন রাখাইন নামে এক কারিগর বলেন, একসময় কাঁচামাল প্রচুর থাকায় ব্যবসাও ভাল হত। বন থেকে বাঁশ পাচার হচ্ছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরির কারিগরের অভাব। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নত যন্ত্রপাতি দিয়ে এখানকার বাঁশ-বেতের শিল্প-কারখানায় মজবুত ও টেকসই সামগ্রী উৎপাদন করা গেলে এ শিল্পে তৈরি হবে ব্যাপক সম্ভাবনা। এতে দ্রুত বিপুল অর্থ অর্জন সম্ভব। দূর হবে বেকারত্ব। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষকতা।

আরেক কারিগর শচীন রাখাইন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে বেচাকেনা কম। বাজারে প্লাস্টিক ও অটোবি সামগ্রীর কারণে এসব শিল্পের বাজার এখন মন্দা। অনেকে এসব পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আগের মত পাহাড়ি এলাকা থেকে পর্যাপ্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করা যায় না। আমাদের উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু লোকজনের মধ্যে চাহিদা না থাকায় বেচাকেনা নেই। বাইরে বাজারজাতও নেই। অর্ডার পেলে সরবরাহ করে থাকি।

বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক মোতাহের হোসেন বলেন, বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। বাঁশ শিল্পকে বাঁচাতে এখনই আমাদের সবার এগিয়ে হবে। তিনি কারিগরদের আধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের অনুরোধ জানান।