জলবায়ু পরিবর্তন: লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, কম দোষীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৮:০১ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার
ঘনঘন বন্যায় এভাবেই জীবন যাপন করতে হয় অনেক বাংলাদেশিকে। ছবি: মনিরুজ্জামান সজল
জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও বিভিন্ন দেশের সংবিধান অনুযায়ী, বিশ্বে জন্ম নেয়া সব শিশু সমান অধিকার নিয়ে আসে। একজন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো হলো তার বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক মানবাধিকার বিষয়টিকে উপহাসে পরিণত করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে এভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনে মানবাধিকার পরিস্থিকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী মানুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে আবহাওয়া সংক্রান্ত দুর্যোগ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় এসব দুর্যোগে মারা গেছেন অন্তত ২০ লাখ মানুষ। আর তার বেশিরভাগই এমন দেশের বসবাসকারী ছিলেন যারা বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য সবচেয়ে কম দায়ী।
মৌলিক অধিকারের পরে আসে স্বাধীনতার অধিকার। যেমন, কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার ও সম্পদ অর্জনের অধিকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এই অধিকার থেকেও অনেক মানুষতে বঞ্চিত করছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, অন্তত ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করেছে। যা সংঘর্ষ বা দ্বন্দের চেয়ে দ্বিগুণ।
তবে বর্তমানে আরও এক অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। তা হলো জাতিসত্তা। আর সেটাও কিছুদিন পর অনেক মানুষের নাও থাকতে পারে, কেননা সমুদ্রের উচ্চতা বৃ্দ্ধির চলমান ধারা চলতে থাকলে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো হারিয়েও যেতে পারে।
জলবায়ু সংকটের এমন ধারা মানুষের অগ্রগতিতে আবারও পেছনের দিতে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের এই সংকটের মুখে আছে। আর তাদেরই সেটা মোকাবেলার করার সামর্থ কম বা নেই বললেই চলে। আর যখন ক্ষতিগ্রস্থরাই শরণার্থী হতে হয় তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। এখন অনেক মানুষই সবকিছু হারানোর পাশাপাশি নিজের বাসস্থান ত্যাগের দুঃস্বপ্ন নিয়ে রাত পার করে।
চলতি বছর গ্রীষ্মে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভূমিধ্বস হয়, তখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা আবারও সবকিছু হারানোর শঙ্কায় পড়েন।
তবে জলবায়ু শরণার্থীদের চরম বাস্তবতা হলো, ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী তারা এখনও শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত নয়। এমনকি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেও তাদের জন্য নূন্যতম কোন নিরাপত্তা রাখা হয়নি।
তবে জলবায়ু শরণার্থী, তরুণ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার এখন আদালতের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। জলবায়ু মামলা বাড়ছে। শেষ গণনায়, বিশ্বের কয়েক ডজন দেশে এক হাজার ৮০০ এর বেশি মামলা দাখিল হয়েছে।
কিছু কিছু দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। নেদারল্যান্ডসে আদালতের মাধ্যমে সারাদেশে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশকে স্বাধীনতা দেয়া হয়ে শিল্প কারখানা বন্ধ করার। তবে সেগুলো এখনও যথার্থ নয়।
জাতিসংঘের প্রধান বিজ্ঞানী চলতি বছরের আগস্টেই বলেছেন, যদি আমরা এখনই কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করি তবুও এতদিনের প্রভাব আরও কয়েক যুগ বয়ে বেড়াতে হবে।