যবিপ্রবি এর উদ্যোগে সরপুঁটি মাছ ফিরবে খালে বিলে!
মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ০৩:৪৩ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার
২০ বছর আগেও খালে বিলে অহরহ পাওয়া যাওয়া অতি সু-স্বাদু মিঠা পানির মাছ সরপুটি কি আবার ফিরে আসবে? সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে যশোরের এ্যাকুয়াটি বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) তৈরি করা হয়েছে এই অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম। এতে সংরক্ষণ করা হয়েছে বিলুপ্ত ও বিলুপ্ত প্রায় স্বাদু পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ ও অন্য জলজ প্রাণী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের উদ্যোগে যবিপ্রবির নিজস্ব অর্থায়নে এই জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরনের কোনো জাদুঘর ছিলনা, এটিই প্রথম। মাছ সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন, ইথানল, রেজিনসহ কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ফরমালিন কম মূল্যের হলেও ইথানল ও রেজিনে মাছের নমুনা সংরক্ষণ করা তুলনা মূলক ব্যয় বহুল।
জাদুঘর তৈরি প্রকল্পের পরিচালক ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পূজা বৈদ্য। জাদুঘর তৈরিতে বিভাগের আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইইউসিএন এর তথ্য অনুযায়ি বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ ও ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে খোঁজ করতে গেলে শত প্রজাতির স্বাদু পানির মাছের দেখা মিলছে না। দেশীয় বহু প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম সরপুটি মাছ।
বাংলাদেশের খালে বিলে আগে এই অতি সু-স্বাদু সরপুটি মাছ পাওয়া যেত। কিন্ত বিগত ২০ বছর ধরে তা ছিল অনুপস্থিত। অনেক দেশী প্রজাতির সু-স্বাদু মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ মাছ প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে। জাদুঘরে সংগৃহীত নমুনা মাছের তথ্য থেকে মাছের বিলুপ্তি রোধে সচেতনতা তৈরি হবে। একই সাথে আগে বিলুপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রজাতির পরিসংখ্যান জানাও সম্ভব হবে। এই উদ্যেগ নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মৎস্য ভান্ডারের সমৃদ্ধতার অতীত ইতিহাস জানতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও জানান, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়ো সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মাছ চিহ্নিত করতে পারা অত্যাবশ্যকীয়। তারা এ মিউজিয়াম থেকে মাছ ও মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে সাধারণত ৬০-৭০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এর বাইরে সামুদ্রিক মাছের যে বিপুল প্রজাতি রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চেনা-জানা ও দেখার সুযোগ হয় না।
সিরাজুল ইসলাম আরো জানান, অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়ামে বর্তমানে স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক পানির মোট ২৫০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষিত রয়েছে এবং মাছের অন্য প্রজাতি সংগ্রহের কাজ চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত।
জাদুঘরের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উন্নয়ন ও গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম একটি প্রকল্প। যশোর অঞ্চলকে বলা হয় মাছের উর্বর ভূমি। এই জাদুঘরটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা খুব সহজেই বিচিত্র সব মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।