কর্ণফুলী টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজও শেষ
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩১ এএম, ৮ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার
এর মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেলের দুটি সুড়ঙ্গের খননই শেষ হলো
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ বা টিউবের খননকাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে খননকাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া এই টিউব এসে মিশেছে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে।
এর মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেলের দুটি সুড়ঙ্গের খননই শেষ হলো। এখন বাকি শুধু সুড়ঙ্গের ভেতর রাস্তা তৈরির কাজ।
টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালে টানেল দিয়ে চলবে গাড়ি।
এটি খনন করতে সময় লেগেছে ১০ মাস। এর আগে প্রথম টিউবের খননকাজ করতে সময় লেগেছিল ১৭ মাস। এই টিউবটি পরিষ্কার করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগবে। টিউবের ভেতরে যে অংশের ওপর দিয়ে গাড়ি চলবে, সেখানে স্ল্যাবের কাজ আগামী জানুয়ারিতে শুরু হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেছেন, এই প্রকল্পের একটি ইতিবাচক দিক হলো, এর মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হয়নি। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হচ্ছে। তবে আগেও শেষ হয়ে যেতে পারে।
কর্ণফুলী নদীতে তিনটি সেতু নির্মিত হলেও তা যানবাহনের চাপ সামলাতে যথেষ্ট নয়। এ জন্য টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে টানেল নির্মাণে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তি সই হয় ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। আর চীন সরকার এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে।
এই টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে হবে না। সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম শহরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে এই খননকাজ শুরু হয়েছিল। ওই সময় ভার্চ্যুয়ালি দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে প্রথম সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় গত বছরের ২ আগস্ট। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন।
প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ-
সেপ্টেম্বর মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭৩ শতাংশ।
গত বছর খনন শেষ হওয়া প্রথম সুড়ঙ্গে এখন সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ৬৪০ মিটার স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে উড়ালসেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া নগর ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজও চলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ প্রকল্পে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে চারটি লেন থাকবে।
দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে সংযোগ সড়ক থাকবে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটির প্রশস্ততা ৩৫ ফুট। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা