তিন কর্মসূচিতে তথ্যমন্ত্রীর ব্যস্ত দিন
ক্লিনফিড, জ্ঞানভিত্তিক গণমাধ্যম, সম্প্রীতির বন্ধন উঠে এল বক্তব্যে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৭:১৯ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২১ বুধবার আপডেট: ০৭:২১ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২১ বুধবার
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতাদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী
বুধবার (৬ অক্টোবর) ব্যস্ততায় ভরা দিন কাটিয়েছন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সচিবালয় ও সচিবালয়ের বাইরে তিনটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম আলোচনার বিষয় ক্লিনফিড নিয়ে। এছাড়া জ্ঞানভিত্তিক গণমাধ্যম ব্যবস্থার কথা বলেছেন। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভ মহালয়ায় যোগ দিয়ে জোর দিয়েছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর।
বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্য অঙ্গণের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকে বিদেশি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, উপদেষ্টা চিত্রনায়ক রুবেল, ডিপজল, আনোয়ার সিরাজী, টিভি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত জোট ফেডারেশন অভ টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন-এফটিপিও সভাপতি মামুনুর রশীদ, ডিরেক্টরস গিল্ড সভাপতি সালাহউদ্দীন লাভলু, যুগ্ম সম্পাদক পিকলু চৌধুরী, টিভি প্রযোজক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির, অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, নাট্যকার সংঘের সাধারণ সম্পাদক এজাজ মুন্না এবং প্রেজেন্টার্স প্লাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক আনজাম মাসুদ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: মুরাদ হাসান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান-উল-আলম এসময় উপস্থিত ছিলেন। এফটিপিও নেতৃবৃন্দ এসময় মন্ত্রীকে তাদের অভিনন্দনপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড আমরা পয়লা অক্টোবর থেকে কার্যকর করেছি, এখন ক্লিনফিডই চলছে, যারা আগে ক্লিনফিড পাঠাতো না, ইতোমধ্যেই পাঠানো শুরু করেছে, বাকিরাও পাঠাবে। আমরা নতুন করে কাউকে আর সময় দেবো না। এখন থেকে যেসমস্ত চ্যানেল ক্লিনফিড হয়ে আসবে, তারাই শুধু সম্প্রচারের সুযোগ পাবে, বাকিরা পাবে না।’
দেশের গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ, গণমাধ্যমকর্মী বিশেষ করে সম্প্রচার সাংবাদিকবৃন্দ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গণের সবাই আইন বাস্তবায়নের এ কাজে সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একটি মহল এর বিরোধিতা করলেও সকলপক্ষ দেশ ও আইনের স্বার্থে অবস্থান নিয়েছে বিধায় এটি করা সম্ভব হয়েছে।
নাটক ও চলচ্চিত্রের শিল্পী ও নির্মাতা প্রতিনিধিদের বক্তব্যের সূত্র ধরে মন্ত্রী জানান, দেশের শিল্পী ও গণমাধ্যমের স্বার্থরক্ষায় আমরা সম্প্রতি বিদেশি শিল্পী দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণে নির্মাতাকে দুই লাখ টাকা এবং সেধরণের বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচারে টেলিভিশনগুলোকে বিজ্ঞাপন প্রতি বিশ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে দেয়ার বিধান করা হয়েছে। এটিও সরকার কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করবে।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান এসময় সরকারের আইন প্রয়োগের উদ্যোগের পাশে থাকায় শিল্পী কলাকুশলী ও সকল গণমাধ্যমকর্মীকে ধন্যবাদ জানান।
এফটিপিও সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ আইন না মানার অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার একটি অনন্য নজির। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ বক্তারা বৈঠকে সরকারের এই পদক্ষেপের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে গণমাধ্যমের ভূমিকায় জোর
এর আগে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় প্রধান তথ্য অফিসার মো: শাহেনুর মিয়া এসময় বক্তব্য রাখেন।
সমাজ গড়তে গণমাধ্যমের গুরুত্বের পাশাপশি ক্যাবল অপারেটিং প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘আগে টেলিভিশনের পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে দেখা যেতো ক্যাবল অপারেটরদের কাছে নানা ধরণের দেন-দরবার করতে, দ্বারে দ্বারে ঘুরতে যে, আমার সিরিয়ালটা একটু ওপরের দিকে দেন। আর ক্যাবল অপারেটররা কারোটা ওপরে তুলতো, কারোটা নামাতো। এই তোলা, নামানোর পিছনে নানাধরণের কাহিনী যুক্ত হতো। দায়িত্ব নেয়ার পর শক্ত হাতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা টেলিভিশনের ক্রম ঠিক করে দিয়েছি। এখন সারাদেশে সে অনুযায়ী অর্থাৎ যে টেলিভিশন যখন থেকে সম্প্রচার শুরু হয়েছে সে অনুযায়ী তারা তালিকায় স্থান পেয়েছে। যারা আগে সম্প্রচার শুরু করেছে তাদের স্থান ওপরের দিকে থাকবে।’
এই আলোচনাতেও উঠে আসে ক্লিনফিডের বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের বিষয়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী টেলিভিশনগুলোকে ক্লিনফিড চালাতে হবে সেবিষয়ে দু’ বছর আগে থেকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, ‘তাগাদা দেয়ার পর বেশ কয়েকবার তাদের সাথে বসেছি। মাঝখানে করোনার কারণে আমরা খুব চাপ দেইনি। সর্বোপরি মাস দেড়েক আগে আমরা আবার বসেছিলাম, সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে পয়লা অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পয়লা অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে টেলিভিশন আমাদের দেশে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে চায় ক্লিনফিড পাঠানোর দায়িত্ব প্রথমত তাদেরই। তারা অন্যান্য দেশে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফিড পাঠায়, আমাদের দেশে পাঠায় না। এখন তারা সেই উদ্যোগ নিয়েছে। যখন পাঠাবে তখন থেকে সম্প্রচার শুরু হবে। তার আগে আমি সময় দেয়ার কোনো পক্ষপাতি নই। এটি হলে আমাদের পুরো গণমাধ্যম উপকার পাবে। খুব সহসাই এর উপকার আপনারা দেখতে পাবেন। গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সাংবাদিক, কলাকুশলী, অভিনয়শিল্পী, অভিনয়ের সাথে যুক্ত লেখক সবাই এর সুফল পাবে।’
ক্যাবল অপারেটিং থেকে আয় প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ জানান, ‘দেশে সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টেলিভিশন গ্রাহক রয়েছে। তারা শহর অঞ্চলে প্রতিমাসে গ্রাহকপ্রতি চার থেকে পাঁচশ’ টাকা আর সারাদেশে দেড়শ’ থেকে তিনশ’ টাকাও নেয়। গড়ে প্রতিমাসে গ্রাহকপ্রতি আড়াইশ’ টাকা করে নিলেও সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক থেকে ক্যাবল অপারেটররা কত টাকা পায়, সেটি সহজেই অনুমেয়। এখান থেকে কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট সরকার পায় না। যে ক্যাবল অপারেটরের গ্রাহক ১ লাখ, তারা ঘোষণা করে ১ হাজার, যার গ্রাহক ১০ হাজার সে ঘোষণা করে ৫শ’। এখানে প্রচুর ফাঁকি দেয় তারা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের এই ফাঁকিটাও আমরা বন্ধ করবো। পয়লা নভেম্বর থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল হতে হবে। এটা তারা মেনেই নিয়েছে। সেটি আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যখন ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল হবে, তখন এই ফাঁকি দেয়াটা সম্ভবপর হবে না।’
সম্প্রীতির বন্ধনেই দেশ পৌঁছুবে স্বপ্নের ঠিকানায়
দিনের কর্মসূচি শুরু হয় হিন্দ ধর্মাবলম্বীদের শুভ মহালয়ায় অংশনেওয়ার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বুধবার ভোরে রাজধানীর বনানী পূজামন্ডপে শুভ মহালয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা বলছিলেন সবার মিলিত রক্ত¯্রােতের বিনিময়ে যেমন দেশ রচিত হয়েছে, তেমনি সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বন্ধনেই দেশ স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।
গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি দিলীপ দাস গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক অলক সাহা, সমন্বয়ক সন্তোষ শর্মা প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেমন বলেন ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’, আমি আশা করবো এই উৎসবের আনন্দ সবার মাঝে সঞ্চারিত হয়ে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। আজকে শুভ মহালয়ার লগ্নে এটিই আমার প্রার্থনা, আমার কামনা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সব ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষের কল্যাণ, সেটি হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান ধর্ম হোক। এমনকি কোনো কোনো ধর্ম জীবের কল্যাণের কথাও বলেছে। ধর্মের মূল মর্মবাণী আমরা বুকে ধারণ করে যদি অনুশীলন করি তাহলে পৃথিবী অনেক শান্তিময় হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ধর্মের অনেক অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা হয়। সেই কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নানাধরণের হানাহানি সৃষ্টি হয়, কিন্তু কোনো ধর্ম এই হানাহানির কথা বলেনি।’
সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আসুক, সবার জীবন শান্তিময় হোক, পৃথিবী থেকে খুব সহসা করোনা দূরীভূত হোক, আবার মুক্ত পৃথিবীতে মুক্তভাবে আমরা নি:শ্বাস নিতে পারি এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তথ্যমন্ত্রী।