আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠানে এসে ২৫ বছর পর বাবা-মাকে খুঁজে পেলেন মেয়ে
ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১২:০১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার আপডেট: ০৮:৫৪ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার
বা-মায়ের মাঝে বসে আছেন আকলিমা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ৬ বছরের আকলিমা (আঁখি নূর) কে (৩১) খুঁজে পেলেন বাবা-মা। সম্প্রতি জনপ্রিয় উপস্থাপক আর জে কিবরিয়ার স্টুডিও অব ক্রিয়টিভ আর্টস-এর ইউটিউবভিত্তিক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’য় আঁখি নূরের একটি সাক্ষাতকার ভাইরাল হলে তার সন্ধান পায় পরিবার।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে । আঁখি নূর এখন সাভারের আশুলিয়া এলাকার মাসুম মোল্লার স্ত্রী। আঁখি নূর স্বামীর সঙ্গে সেখানেই বসবাস করছিলেন। এখন তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের মা।
বাবা মানিক মিয়া (৬০) বলেন, তিনি ১৯৯৬ সালে তার মেয়ে আঁখি নূরকে নিয়ে ঢাকা যান। তখন আকলিমার (আঁখি নূর) বয়স ৬ বছর। গুলিস্তান মোড়ে একটি পানের দোকানের সামনে পান দোকানীকে বলে দাঁড় করিয়ে একটু দূরে যান মানিক মিয়া। সেখানে তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।
দীর্ঘ সময় তাকে আটক রেখে টাকা পয়সা হাতিয়ে ছেড়ে দিলে মানিক মিয়া তাঁর মেয়েকে আর খুঁজে পাননি। তিনি বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে বুকে কষ্ট চাপা দিয়ে বাড়িতে ফেরে এসে ২৫ বছর ধরে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলেন না।
দেশের বহু জায়গায় তিনি মেয়েকে খুঁজে ফিরেছেন এই ২৫ বছর ধরে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আঁখি নূরের সন্ধান মেলেনি। আকলিমার (আঁখি নূরের) সন্ধানে ঢাকায় মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
আকলিমা (আঁখি নূর) বলেন, বাবাকে না পেয়ে তিনি অনেক কান্নাকাটি করে একটি বাসে উঠে পড়েন। তাকে কাঁদতে দেখে এক লোক তাকে নিয়ে যান। পরে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে তাকে দিয়ে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় নতুন নামে আঁখি নূর- আকলিমার নতুন এক জীবন।
তিনি মোবাইলে আর জে কিবরিয়ার আপন ঠিকানা অনুষ্ঠান দেখে আবেদন করেন সাক্ষাৎকার চেয়ে। পরে এই সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়।
এর অনেক আগে আশ্রয় কেন্দ্রে বড় হয়ে বিউটি পার্লার এর কাজ শুরু করেন আকলিমা। এক সময় মোবাইলের মাধ্যমে আশুলিয়ার মাসুম মোল্লার সাথে পরিচয় হয় পরে বিয়ে করেন তারা।
হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ২৫ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ) বাবা-মাকে কাছে পেয়ে আবেগআপ্লুত আকলিমা (আঁখি নূর) তাদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আনন্দে কাঁদেন বাবা-মা ও আঁখি নূরের ছোট বোন ও ভাইয়েরা।
আঁখি নূরের ছোট বোন আমেনা বলেন, ‘বোনের ছোট বয়সের অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। বোনকে হারানোর পর সব সময় মন খারাপ থাকতো। ভাবতাম বোনকে বুঝি কখনও পাবো না। তবে মা বলতেন- এই দেশটা ছোট, একদিন না একদিন ঠিকই আকলিমাকে খুঁজে পাবেন। আজ আমাদের সবার আশা পূরণ হয়েছে।’
বাবা মানিক মিয়া বলেন, ‘এভাবে মেয়েকে খুঁজে পাবো তা কখনও কল্পনাও করিনি। মেয়ে হারানোর পর সময় যে কত কষ্টের, তা সেই বাবা-মাই বোঝেন; যাদের সন্তান হারিয়েছে। বহু দিনের বুকের কষ্ট আজ দূর হলো।’
আকলিমার স্বামী মাসুম মোল্লা বলেন, ‘আমি সব কিছু জেনেই আঁখিকে বিয়ে করি। বিয়ের পর তার পরিবারের সন্ধান পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমত থাকায় সেই চেষ্টা সার্থক হয়েছে। আমি খুবই খুশি।’