দূষিত বায়ু যেভাবে টাইলসে পরিণত হচ্ছে
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার আপডেট: ০১:৪০ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার
দূষিত বায়ু সারা বিশ্বে অসুস্থতার একটি প্রধান কারণ, কিন্তু একজন ভারতীয় আবিষ্কারক আশা করছেন বায়ু থেকে দূষিত কণা পৃথক করে এবং এটিকে পুনর্ব্যবহার করে মানুষের শ্বাস নেওয়া সহজ করা সম্ভব হবে। এমন যন্ত্র তৈরি করে সে কণা থেকে এখন টাইলসও তৈরি করা হচ্ছে। বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় ধোঁয়া থেকে টাইলস তৈরির সে গল্প।
দশ বছর বয়সে মুম্বাইতে বসবাস করতেন অঙ্গদ দরিয়ানি। প্রায়ই ফুটবল ম্যাচের সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হতো তার। কারণ ভারতীয় এই শহরের ধোঁয়া অনেক বেশি দূষিত। প্রচণ্ড দূষিত বায়ু তার হাঁপানি বাড়িয়ে তুলত।
বর্তমানের ২৩ বছর বয়সী দরিয়ানি বলেন, "যখন আমি মুম্বাইয়ে বাইরে খেলতে যেতাম, তখন দূষণের কারণে আমি সবসময় কাশি দিতাম। বড় হয়ে আমার হাঁপানি হয়েছে। এটা ফুটবল মাঠে স্প্রিন্ট করার ক্ষমতাকে ধীর করে দিয়েছে।"
বায়ূ দূষণে ভারতের অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ। বিশ্বের ৩০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতেরেই থাকে ২২টি। যার ফলে প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ মানুষ মারা যায়।
ভারতের শহরে ধোঁয়াটে বাতাস প্রায়ই বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রার সূক্ষ্ম কণা পদার্থ ধারণ করে, যা পিএম২.৫। যা মানুষের ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
দরিয়ানি বলেন, "ভারতে বাইরে বের হলেই আপনি প্রাণশক্তি হারাতে শুরু করবেন। দূষণের কারণে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।"
অঙ্কদ দরিয়ানি
নিজের স্বাস্থ্যের উপর বায়ুর প্রভাব প্রত্যক্ষ করে দরিয়ানিভারতের আকাশ পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন। তার সমাধান হলো ধোঁয়ার কালির গুঁড়া বা ঝুল এবং অন্যান্যা কণা সংগ্রহ করা এবং তা ফ্লোরের টাইলস বা প্রয়োজনীয় বন্তুতে রূপান্তর করা।
করোনা মহামারির্ বিষয়টি সামনে এনে দরিয়ানিবলেন, প্রতিবছর বায়ু দূষণে বিশ্বে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় কিন্তু সেটাকে আমরা করোনার মতো গুরুত্বের সঙ্গে নেই না।
তার মতে আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনই বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, সব ধরণে পরিবহন ইলেকট্রিক করতে আরও অন্তত ৩০ বছর লাগবে। এসময় সব শহরে দূষিত বায়ুতে পরিপূর্ণ থাকবে।
দরিয়ানার কাছে এই সমস্যার সহজ সমাধান হলো বায়ু থেকে খুব কম খরচে অন্য কিছু তৈরি করা।
জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়ার সময় দরিয়ানিএক পদ্ধতির ডিজাইন করেন যা বায়ু থেকে পিএম২.৫ সহ বিভিন্ন কণা সরিয়ে দিতে সক্ষম। সে ডিভাইসটি বায়ু থেকে কণা সরিয়ে নিতে একটি কন্টেইনারে রাখে।
তারপর ২০১৭ সালে ‘প্রাণ’ নামে একটি স্টার্ট আপ ব্যবসা শুরু করেন দরিয়ানিযার লক্ষ্য ছিল বাইরের বাতাস পরিষ্কার করে এমন দক্ষ যন্ত্র তৈরি। পরে গবেষণা করে ১৭৬ সেন্টিমিটার লম্বা একটি মেশিন বানায় দরিয়ানা যার মূল্য ১৮১০ ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
দরিয়ানি তৈরি যন্ত্রটি প্রতি মিনিটে ৩০০ কিউবিক মিটার বাতাস পরিষ্কার করে এবং ১১ হাজার ৫৪০ সেন্টিমিটার দূষিত কণা সংগ্রহ করে। বায়ু কতটা দূষিত তার উপর নির্ভর করে প্রতি দুই থেকে ছয় মাস পর সে কণাগুলো যন্ত্র থেকে ফেলে দিতে হয়।
‘প্রাণ’ কোম্পানির তৈরি বায়ু পরিষ্কার করা যন্ত্র।
দরিয়ানি ও তার সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেয় সে দূষিত কণাগুলো তারা ফেলে না দিয়ে ভারতের এক জনপ্রিয় কারবন ক্রাফ্ট ডিজাইন নামে প্রতিষ্ঠানকে দেবে। যারা সেগুলো গুঁড়া পাথর ও সিমেন্টের মিশেলে নান্দনিক টাইলস তৈরি করে।
বর্তমানে তাদের যন্ত্রের দাম আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে ‘প্রাণ’। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তার কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। দরিয়ানি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্রসীমায় বাস করে। তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করে।
দরিয়ানি একটি নতুন যন্ত্রের নকশাও শুরু করেছে যা কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ করতে পারে। আশা করেন যে এমন একটি যন্ত্র থাকবে যা বছরে ভারতে বায়ু থেকে এক টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতে পারে।
দরিয়ানি বলেন "পরবর্তী প্রজন্মের মনে করে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে তাদেরও ভবিষ্যত আছে" ।