বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক
প্রকাশিত: ০৮:০৪ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের অপর নাম, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, তিনি বঙ্গবন্ধু, তিনি মহামানব, তিনি মহানায়ক, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, আরো কতো কি! তাঁর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে, যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন স্বাধীনচেতা, তিনি দেশকেও স্বাধীন করেছেন, তাঁর নিজ উদ্যোগে। বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে তিনি বিচরণ না করেছেন, মানুষকে সমবেত করেছেন। তিনি মানুষের মাঝে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন, স্বাধীকার আন্দোলনের চেতনা এবং বীজ দু’টোই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন সমস্ত বাঙালীর মনে। অধিকার চেতনাবোধ জাগ্রত করেছেন। মানুষের মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। কিন্তু কোনো লোভ-লালসার কাছে তিনি মাথা নত করেননি, আত্মসমর্পণ করেননি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ- এ দু’টো প্রত্যয়, দু’টি শব্দ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আজ বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের আলাদা অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই, এতদিনেও আদৌ বাংলাদেশের জন্ম হতো কিনা, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতো কিনা-তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থেকে যেতো! ১৯৭১ সালে এই ক্ষণজন্মা মহান পুরুষের কালজয়ী ও গতিশীল নেতৃত্বেই বাঙ্গালী জাতি মুক্তির স্বাদ লাভ করেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যে সকল মহান নেতারা পৃথিবীর কোনো জাতির মুক্তির জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন-তাঁরা কোন না কোন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত থেকেই সেই মহান কাজটি করেছেন; তবে সে জন্য তাঁরা পরবর্তী সময়ে শুধুমাত্র সেই নির্দিষ্ট দলের সংকীর্ণ পরিচয়ের গ-িতে আবদ্ধ থাকেননি বরং সামগ্রিকভাবে সেই জাতি তাঁদেরক স্থান দিয়েছে সকল ধরনের দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সর্বজনীনভাবেই সবার শীর্ষে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুকেও আজ আর কোন বিশেষ দলীয় পরিচয়ের গ-িতে আবদ্ধ রাখা যায় না-বঙ্গবন্ধু সবার, শুধু এই বাঙালী জাতি কিংবা বাংলাদেশ নয়; আজ সারা বিশ্বের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একটি অজেয়, অক্ষয় নাম! তাঁর মতো তেজোদীপ্ত অসম সাহসী নেতা সারা বিশ্বের ইতিহাসে সত্যি বিরল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতিসত্তার এক মহান নির্মাতা। এ জন্যই বোধ হয় বিদেশীরা বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করে থাকেন ‘ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্যা নেশন হিসেবে’। বাঙালি জাতিসত্তার নির্মাতা তিনিই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সত্যিকারের এবং খাঁটি একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন।
এই দেশের মানুষের স্বপ্নের স্বাধীনতা তিনি উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের আজ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন! বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে অবাধ বিচরণ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের আজ যে দৃপ্ত পদচারণা তার সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি একটি স্বাধীন দেশ না পেতাম তাহলে আজো পকিস্তানের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতো, নিষ্পেষিত হতে হতো। স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা স্বাধীনভাবে সব কিছু চিন্তা করতে পারি। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা বঙ্গবন্ধুর কল্যাাণেই সম্ভব হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে এ সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার কল্যাণে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তাই নয়, একই সাথে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভয়কে জয় করার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও দিক্ষিত করেছেন পুরো জাতিকে।
জাতির পিতা জানতেন বাঙালির উন্নতির জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই তিনি নাগরিকদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক, সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের ওপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছিলেন।
বিক্ষুব্ধ উত্তাল সময় পাড়ি দিতে দিতে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও জেল-জুলুম সহ্য করতে করতে সঞ্চারিত যে অভিজ্ঞতা, তার উত্তাপে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মাণ করেছেন আমাদের সুন্দর এই মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের সর্বত্র ছিল নানাবিধ সংকট। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। অভাব আর হাহাকারের ভারি বাতাসে মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছিল, তখন জাতির পিতা দেশে ফিরে হাল ধরলেন দক্ষ নাবিকের মতো। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। চারিদিকে বইয়ে দিলেন শান্তির সুবাতাস। নিদারুণ সংকট থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন। বিশ্বের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাদের আজীবন প্রাণশক্তির জন্য যে কোন সংকটে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজবে।
বঙ্গবন্ধু সবসময় এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছেন। কাজেই আমাদের একটি কথাই বারবার মনে হয় যা বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন, অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। সেই অর্জনগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোনো মতেই যেন এই অর্জন কেউ ভবিষ্যতে নস্যাৎ করতে না পারে, সেদিকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা নত আমার মাথা নত করবো না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না’। আমাদের যতটুকু সম্পদ যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে বিশ্বব্যাপী আমাদের এখন অবাধ বিচরণ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চরেছে বাংলাদেশ। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বলা বাহুল্য যে সবই সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতার বদৌলতে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করে গিয়েছেন তাই নয়, একই সাথে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে বারবার উদ্বুদ্ধ রেছেন বংশানুক্রমিক ভয়কে জয় করবার মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় সেই মন্ত্রটি ছিলো ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর এই মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ সামনে রেখেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেটা বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকুরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী পরিত্যক্তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল জনগণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এবং জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন তিনিই জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সেই সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আামাদের প্রিয় বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হবে।
ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিক সেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখন স্বপ্ন নয় এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা।
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো বিএনএনআরসি