একজন ক্যাপ্টেন নওশাদ ও এভিয়েশন কর্মীর দায়িত্বশীলতা
মো. কামরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ০৬:২৬ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার আপডেট: ০৭:২৬ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার
বাংলাদেশ হারিয়েছে একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিক ও আকাশযোদ্ধা ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুমকে। ক্যারিয়ারে একটা দীর্ঘকাল আকাশপথের যাত্রীদের সেবা দিয়ে বলা চলে আকাশেই জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন। যখন মৃত্যু কড়া নাড়ছে দুয়ারে তখনো দেশত্ববোধ আর যাত্রীসেবার কথা ভুলে যাননি। দেশের সম্পদ হাজার কোটি টাকার উড়োহজাহাজ, পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে নিজের সহকর্মীদের আর ১২৪ জন প্রবাসী ভাইবোনদের জীবনকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রায় ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা নিয়ে সহকর্মীকে সঠিক নির্দেশনা এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে যাওয়া কতটুকু দায়িত্ব সম্পন্ন এভিয়েশন কর্মী হলেই সম্ভব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এমপি তৎক্ষণাৎ ক্যাপ্টেন নওশাদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু বিধাতা ক্যাপ্টেন নওশাদকে আর আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেননি। তৎক্ষণাৎ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসায় এ সেক্টরের একজন কর্মী হিসেবে নিজেদেরকে আসস্ত করতে পারি, আমরা আকাশ পথের যাত্রীদের সেবক হিসেবে গুরুত্ব বহন করে থাকি।
যাত্রীদের সময় আর অর্থকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি এভিয়েশন কর্মী সেবা দিয়ে থাকে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে পাইলটদের সহায়তায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়াই এভিয়েশনে কর্মীদের দায়িত্ব। পাইলটরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের জীবনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন সবসময়। পাঁচ বছর আগে সদ্য প্রয়াত ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম মাস্কাট থেকে ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ফেরার পথে প্লেনের চাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজের মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে দৃঢ়চেতা মানসিক শক্তি দিয়ে সকল যাত্রীকে সুস্থভাবে এবং উড়োজাহাজকে অক্ষত রেখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
সাধারণত তিনটি কারণে বিমান দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রথমতঃ টেকনিক্যাল, দ্বিতীয়তঃ আবাহাওয়াজনিত আর তৃতীয়তঃ হিউম্যান এরোর। ক্যাপ্টেন নওশাদ আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনটির একটি কারনেও ঘটেনি দূর্ঘটনা। দুঃখজনক হলেও সত্য জীবনের শেষ সময়ে এসেও কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর দায়িত্বজ্ঞানই নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে থেকেও উড়োজাহাজকে অক্ষত রাখতে সহায়তা করেছেন, বাঁচিয়েছেন ১২৪ জনের জীবন। তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠাই ক্যাপ্টেন নওশাদ বাংলাদেশ এভিয়েশন তথা বিশ্ব এভিয়েশনের মণিকোঠায় স্থান করে নিবেন।
এভিয়েশনের কর্মী হিসেবে প্রত্যেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে যাত্রীসেবায় অনন্য মডেল হিসেবে হৃদয়ে স্থান দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে। আমাদের অগ্রযাত্রায় অগ্রসৈনিক হিসেবে স্থান করে নিবে ক্যাপ্টেন রোকসানা, ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, ক্যাপ্টেন নওশাদসহ যেসকল বৈমানিক তাদের জীবন দিয়ে এভিয়েশন সেবাকে সুউচ্চ অবস্থানে স্থান করে দিয়েছেন।
ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বাংলাদেশের এভিয়েশনে এক অনন্য বীরসেনানী। ২০১৮ সালে ইউএস-বাংলার একটি এয়ারক্রাফটের নোজ গেয়ার ত্রুটির কারনে ১৬৭ জনের জীবন সংকটে পতিত হয়। ক্যাপ্টেন জাকারিয়া ও তার সহযোগী কো-পাইলটের অসীম সাহস আর কেবিন ক্রুদের অকৃত্রিম দৃঢ়চেতায় সবার জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয় সাথে এয়ারক্রাফটকে অক্ষত রাখতেও সক্ষম হয়েছিলো। নিজের জীবনের চেয়ে যাত্রীদের জীবন রক্ষা তখনই সম্ভব হয় যখন নিজের প্রতি ইস্পাতকঠিন মনোবল থাকে।
ক্যাপ্টেন জাকারিয়াদের মতো বৈমানিক আছে বলেই আমাদের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যাপ্টেন নওশাদের মতো বৈমানিকরা ছিলেন বলেই যাত্রীরা নিরাপদ থাকেন। ক্যাপ্টেন রোকসানা, ক্যাপ্টেন লারা, ক্যাপ্টেন আবিদের মতো পাইলটরা ছিলেন বলেই আমাদের পাইলটরা আজ মৃত্যুঞ্জয়ী।
ক্যাপ্টেন নওশাদসহ সকল ক্যাপ্টেনদের জন্য রইলো সশ্রদ্ধ সালাম। আমাদের পাইলটরা আমাদের এভিয়েশনের গর্ব, বিশ্ব এভিয়েশনে আমাদের পাইলটদের সাহসী ভূমিকা প্রতিফলিত হোক এভিয়েশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে।