অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেসব ভুলে নষ্ট হয়ে যায় ছাদ বাগান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২১ সোমবার  

বর্তমানে দেশে ছাদ বাগানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার ছাদ বাগানে আগ্রহ হারানো মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তার কারণ হলো ছাদ বাগান করার শুরুতেই অনেকের গাছ মারা যাওয়া বা প্রত্যাশা মতো ফলাফল না পাওয়া। তাই যেসব ভুলে গাছগুলো মারা যায় বা ভালো ফলন পাওয়া যায় না সেগুলো ধরেছেন কৃষিবিদ মো. আল মামুন শিকদার। 

সঠিক গাছ কেনা

ছাদ বাগানের জন্য খুব বেশি বড় হয় না এমন গাছ কিনতে হবে। ঝোপালো গাছগুলো বাছিই করা ভঅরো। বিশেষ করে যেসব গাছ সারাবছর ফল দেয় সেগুলো লাগানো উচিত। সবজির ক্ষেত্রেও সারাবছর ধরা গাছ লাগানো ভালো। 

গাছ রোপণের সময় ভুল

গাছ লাগানোর সময়ও আমরা অনেক ভুল করে থাকি। প্রথমত কখনও ভেজা মাটিতে গাছ লাগানো যাবে না। সবসময় শুকনো মাটিতে গাছ লাগাতে হবে। তারপর খেয়াল রাখতে হবে গাছ কেনার সময় গোড়ায় যে মাটি আছে তা যাতে নষ্ট না হয় বা ভেঙে না যায়। 

পটিং মিক্সচার

অনেকে সব ধরনের গাছের জন্য একই পটিং মিক্সচার (মাটি, সার মেশানো) করে থাকেন। কিন্তু সেটা করা যাবে না। ফল ও ফুল গাছের জন্য একরকম আবার অর্কিড বা ক্যকটাসের জন্য আলাদা পটিং মিক্সচার করতে হবে। 

পানি দেয়া

ছাদ বাগানে পানি বেশি দেয়া বা কম দেয়া দুটোই গাছের জন্য ক্ষতিকর। সবচেয়ে ভালো হলো টবের মাটিতে আঙুলে চাপ দিয়ে দেখা। যদি আঙুলে মাটি লেগে থাকে তবে বুঝতে হবে পানি দেয়া লাগবে না। আর মাটি না লাগলে পানি দেয়া লাগবে। 

পানি দেয়ার সঠিক সময়

পানি কখন দেবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে দুপুরে গাছে পানি দেন। কিন্তু এটা কখনও করা যাবে না। বিশেষ করে গাছের গোড়ায় বা পাতায় ভুলেও এসময় পানি দেয়া যাবে না। কারণ যখন তাপমাত্রা বেশি থাকবে তখন পানি দিলে পাতা রোদে পুড়ে যায়। আর মাটিতে দিলে তা শেঁকড় নষ্ট করে দেয়। 

তাই সবময় সম্ভব হলে খুব ভোরে গাছে পানি দিতে হবে। সম্ভব না হলে বিকেলে বা সন্ধ্যায়। 

সার দেয়ায় ভুল

একেবারে সার না দেয়া ও সার বেশি দেয়ার কারণেও গাছ মারা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো মাটির পরিমাণ, গাছের বয়স, পাতা, ফল ও ফুল অনুযায়ী সার দেয়া। ছাদ বাগানে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। আর জৈব সার অধিক পরিমাণ হলেও কোন সমস্যা নাই। 

ছত্রাক বা বালাইনাশক ব্যবহার

সাধারণত ছাদ বাগানে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা ভালো। এটা করতে হবে নির্দিষ্ট সময় পরপর। সেটা এক সপ্তাহ হতে পারে বা ১৫ দিনও। অনেকে গাছ রোগাক্রান্ত হলে ছত্রাকনাশক দেন। সেটা না করে নিয়মিত দিয়ে যেতে হবে। 

এখানে আরেকটি ভুল হলো ছত্রাকনাশকের পরিমাণে ভুল। মনে রাখতে হবে কীটনাশকের গায়ে তার পরিমাণ লেখা থাকে। সে অনুযায়ী গাছে ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বাচ্চাদের সিরাপ খাওয়ানোর ড্রব দিয়ে মেপে দেয়া। 

ছত্রাকনাশক ব্যবহারের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বিকেলে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে গাছের পাতার উপরে নয়। পাতার নিচেও দিতে হবে। বিশেষ করে নতুন পাতায় ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া রোগাক্রান্ত গাছে শুধু না দিয়ে পুরো বাগানে দিতে হবে। 

গাছ রোপণের স্থান নির্ধারণ

ছাদ বাগান করতে গিয়ে অনেকে শুরুতেই ভুল করে বসেন। তা হলো ছাদে কি পরিমাণ আলো আসে তা বিবেচনায় না নেয়া। যেসব গাছ ছায়া পছন্দ করে সেগুলো রোদে রোপন করি। আর যেসব গাছ আলো পছন্দ করে সেগুলো ছায়ায় রাখি। তা না করে আগে গাছ সম্পর্কে জানতে হবে। 

হিট শক

অনেক সময় যেসব পাত্রে গাছ লাগানো হয় সেগুলো ছাদের উপর রেখে দেয়া হয়। এতে হিট শক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ছাদের গরম ড্রাম বা টব গরম করে। সেটা শেকড় নষ্ট করে দেয়। 

প্রুনিং করা

মনে রাখতে হবে ছাদের গাছ সবসময় মানুষের লম্বার সমান রাখতে হবে। এরচেয়ে বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না যাতে নিজ হাতে ফল আহরণ বা বালাইনাশক ব্যবহার করা যায়। তাই ছাদের গাছগুলো নিয়মিত ডালপালা কেটে রাখতে হবে।

মালচিং

অনেক সময় জৈব সার দেয়ায় গাছের সাথের আগাছা গুলো বড় হয়ে যায়। যা গাছের চেয়ে সার বেশি গ্রহণ করে থাকে। তাই আগাছা মুক্ত রাখতে মালচিং করতে হবে। মালচিং করলে আগাছা থাকে না। পানি কম প্রয়োজন হয়, গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। শুকনো পাতা দিয়েও মালচিং করা যায়।