পবিত্র হজ আজ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২১ সোমবার আপডেট: ০১:৩৩ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২১ সোমবার
মহামারির কারণে ৬০ হাজার হজযাত্রী নিয়ে এবারও সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে
আজ পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে পবিত্র আরাফাত ময়দান। এর অর্থ-হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
১৫০টি দেশের মোট ৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৭০ জন এ বছর হজ পালনের জন্য আবেদন করেছিলেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৬০ হাজার হজযাত্রী নিয়ে এবারও সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোমবার (১৯ জুলাই) ভোরে হজ পালনের অংশ হিসেবে আরাফাত ময়দানে জড়ো হয়েছেন মুসল্লিরা।
গত বছরের মতো এ বছরও সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না মুসল্লিরা। যারা করোনার টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, শুধু তারাই সুযোগ পাচ্ছেন।
রবিবার সারা দিন মুসল্লিরা মিনায় থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছেন। মিনায় তাঁবুতে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নামিরাহ মসজিদে একসঙ্গে সংক্ষিপ্ত জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। এরপর তারা হজের খুতবায় অংশ নেবেন।
এবার খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। প্রতিবছর হজের দিন কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজও কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হবে।
গত বছর হজের খুতবায় সামাজিক সংহতি এবং করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্কতায় জোর দেয়া হয়। এবারও তাই করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকতা-
সোমবার সূর্যাস্তের পর মুসল্লিরা আরাফাতের ময়দানেই থাকবেন, সারা দিন ইবাদতে মশগুল থাকবেন। পরে এ ময়দান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করবেন।
শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। পবিত্র স্থানটিতে আসার পর মাগরিবের নামাজ পড়বেন তারা। এরপর পড়বেন এশার নামাজ।
মঙ্গলবার ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর মারবেন, দমে শোকর বা কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে গোসল করবেন।
সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড়ও বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মসজিদুল হারামে গিয়ে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এ ছাড়া সাফা-মারওয়া সাঈ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। তাওয়াফ ও সাঈ শেষে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানের উদ্দেশে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। এভাবেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
২০১৯ সালে রেকর্ড ২৫ লাখ মুসল্লি হজে অংশ নেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার। স্বাস্থ্যবিধি ও হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ‘স্মার্ট হজ কার্ড’ চালু করা হয়েছে এবার।
বয়স সীমিত করে দেয়া হয়েছে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া, যারা হজে অংশ নিচ্ছেন তাদের থাকতে পারবে না কোনো গুরুতর অসুস্থতা বা রোগের ইতিহাস। মাস্ক পরাসহ নানা রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে তাদের।
গত বছর মহামারির সময় আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে সীমিত পরিসরে হজ হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতায় হাজিদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঘটেনি সেবার।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে মুসল্লিরা এবার ২০ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদাভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন। করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শ আসা ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে এমন ব্যবস্থা।
দিনভর কাবা প্রাঙ্গণে স্যানিটাইজার ছিটানোর জন্য মোতায়েন করা হয়েছে রোবট। মুসল্লি ও তাদের সেবাদানে নিয়োজিত কর্মীদের পবিত্র জমজমের পানিও দেয়া হবে রোবটের মাধ্যমে।