অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ফাইট খিদ্দা, ফাইট...

পার্থ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা

প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০ বুধবার   আপডেট: ০২:৫৮ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০ বুধবার

ফাইট খিদ্দা, ফাইট। দুদিন ধরেই বাঙালির ফেসবুক পেজগুলোতে ভেসে ভেসে আসছে এই আর্তি। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে মতি নন্দীর লেখা উপন্যাসের চিত্ররূপ তৈরি হয়েছিল, আর সেই ছবিতে সাঁতারের কোচ ক্ষিতিদা ওরফে খিতদার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন সৌমিত্র। তাঁর ফাইট কোনি ফাইট- হয়ে উঠেছিল বাঙালির অন্যতম অনুপ্রেরণামূলক শব্দবন্ধ। এখন সেই শব্দবন্ধেই প্রিয় অভিনেতার কাছে আর্জি, ফিরে এসো। মধ্য কলকাতার এক হাসপাতালে বাঙালির প্রিয় ফেলুদার শরীরে নতুন নতুন কলোনি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস। এই সম্মিলিত আর্তি তাঁকে পাল্টা লড়াইয়ের শক্তি জোগাক।

বুধবার (১৪ অক্টোবর) আবার করোনা পরীক্ষা হবে সৌমিত্রর। ডাক্তাররা অবশ্য জানিয়েছেন করোনা সংক্রমন বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে অভিনেতার শরীরে। কিন্তু অশীতিপর ফেলুদার অন্যান্য অসুখবিসুখ তাঁকে এখনও সঙ্কটের মধ্যে রেখেছে। প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। সঙ্গে সিওপিডির সমস্যাও ছিল। নতুন করে যোগ হয়েছিল মুত্রনালীর সংক্রমন। আর স্নায়ুরোগ থেকে মস্তিস্কে শুরু হয়েছিল বিশেষ ধরণের প্রদাহ, যার পোশাকি নাম এনসেফেলাইটিস। তাই সোমবারও যিনি হাসপাতালের  সোফায় বসে বই পড়েছেন, মঙ্গলবার আচমকাই হয়ে পড়েন চেতনাহীন। একসময় শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়মিত রাখতে তাঁকে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনের সাপোর্ট দিতে বাধ্য হন ডাক্তাররা। 

তবে আশার কথা, মঙ্গলবার বিকেলের পর অবস্থা অনেকটা ভাল। বাইপ্যাপ লাগছে না। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকঠাক কাজ করছে। শুধু একমাত্র ব্যতিক্রম মস্তিষ্ক। তাই সত্যজিতের অপু খুব ভাল আছেন, একথা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এরই মধ্যে বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি কম ছড়াচ্ছে না, অপুর অসুখ নিয়ে। মঙ্গলবার সোশ্যাল সাইটে রটে যায়, সৌমিত্র আর নেই। অনেকেই প্রয়াত সৌমিত্রকে নিয়ে নানা ব্যক্তিগত আবেগের কথা লিখতে শুরু করেন। অবশ্য কিছুক্ষনের মধ্যে সে বিভ্রান্তির অবসান ঘটে। দ্বিতীয় বিতর্ক শুরু হয় অসুস্থ সৌমিত্রর ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর। অভিনেতার অসংখ্য অনুরাগী এর প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠেন। ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনও অসুস্থ মানুষের ছবি তাঁর অনুমতি ছাড়া এভাবে প্রকাশ করা যায় না। একসময় প্রতিবাদ করেন প্রবীন অভিনেতার বাড়ির লোকেরাও। মঙ্গলবার রাতে সৌমিত্রর মেয়ে পৌলমী বসু ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, ডাক্তাররা মনে করছেন অভিনেতার শারীরিক অবস্থার  এক শতাংশ উন্নতি হয়েছে মাত্র। তবে এক্ষুনি তাঁকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের সাপোর্ট দেওয়ার দরকার হচ্ছে না।

তবে ছিয়াশি পেরোনো অভিনেতার লড়াইটা বেশ লম্বা। বুধবার করোনা পরীক্ষার পর বোঝা যাবে করোনাকে কাবু করতে পেরেছেন কিনা। কিন্তু শুধু করোনাকে হারালেই হবে না। ভয়ঙ্কর ওই ভাইরাসের দৌলতে নানা পুরোনো অসুখবিসুখ নখ-দাঁত বিস্তার করে ফেলেছে। জিততে হবে সেই লড়াইতেও। বাঙালী আশায় আছে, উদয়ন মাস্টাররা এতো সহজে হারবে না।
 

পার্থ বন্দোপাধ্যায়: কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক।