রাজকীয় সিন্ধু ঈগল
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০২:১৯ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার
সিন্ধু ঈগল। নাম শুনেই বোঝা যায়, সমুদ্রের আশপাশেই এদের বসবাস। বিশাল রাজকীয় চেহারা এই সিন্ধু ঈগলের। সমুদ্রের মাছ এদের প্রিয় খাদ্য। কবি ফররুখ আহমদ এই সিন্ধু ঈগল নিয়ে কবিতা লিখেছেন- ‘পিপুল বনের ঝাঁজালো হাওয়ায় চোখে যেন ঘুম নামে; নামে নির্ভীক সিন্ধু ঈগল দরিয়ার হাম্মামে..।’
মজার ব্যাপার হলো, সিন্ধু ঈগল কখনই নিজে মাছ মেরে খায় না। সব সময়ই অন্য পাখির ধরা মাছে ভাগ বসায়। ধরা যাক, একটি চিল সমুদ্রের ওপর উড়ে একটা মাছকে খেয়াল করছে আর তক্কে তক্কে রয়েছে। সুযোগ পেলেই ধরবে। সিন্ধু ঈগল তার চেয়েও চালাক। সে একই সঙ্গে খেয়াল করছে মাছকে। সেই সঙ্গে চিলকেও। দৃষ্টি শক্তিও তার অসম্ভব তীক্ষ্ম। বহুদূর থেকেও সে দেখতে পায়। চিলটা মাছ ধরে যেই না মজা করে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর অমনি সিন্ধু ঈগল শুরু করে তার ওপর প্রচণ্ড হামলা।
সিন্ধু ঈগলের আক্রমণ চালাবার ভঙ্গিটিও অভিনব। স্বামী-স্ত্রী দু’জন দু’দিক থেকে হামলা চালাতে থাকে। তার ঠোঁট যেমন তীক্ষ্ম তেমনি ধারালো। এক একটা ঠোকরে হাড়-মাংস আলাদা হয়ে যায়। কাজেই চিল তখন মাছ ফেলে পালাতে পারলে বাঁচে।
সিন্ধু ঈগলের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবার মান অভিমানও চলে। আর সেটা সাধারণত হয় বাসা বানানোর সময়। বাসা বানাবার জন্য স্বামী বেচারা একগাদা ডালপালা নিয়ে আসে। খুঁতখুঁতে বউয়ের সেগুলো পছন্দ সই হয় না। তাই সে নেড়েচেড়ে ফেলে দেয়। এমনি চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এক সময় বেঁধে যায় তুমুল ঝগড়া। তারপর দু’জন মুখ ভার করে দু’দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে।
এক সময় অভিমান ভুলে আবার বাসা বানাতে শুরু করে। সে বাসাও হয় দেখার মতন। এক একটা বাসা প্রায় ৫/৭ হাত চওড়া। আর বছর বছর তাতে ডালপালা সংযোগ করে বানিয়ে তোলে রীতিমতো সিংহাসন। রাজকীয় চেহারা বলেই সিন্ধু ঈগল এভাবে সিংহাসন বানাতে চায়।
সিন্ধু ঈগল সাধারণত মানুষকে কিছু বলে না। বরং উল্টো মানুষ যদি ওকে তাড়া করে, তখন ভয়ে বাসা-টাসা ফেলে পালায়। তবে বাসায় যদি বাচ্চা থাকে তখন তার রূপ যায় বদলে। এই ভীতু ঈগলই তখন হয়ে ওঠে প্রচণ্ড তেজি আর মারমুখো। ভয় ডর ত্যাগ করে মানুষকে আক্রমণ করতে তখন সে মোটেও পিছপা হয় না। আসলে মানুষ তার সন্তানকে যেমন ভালোবাসে। পাখি হলে কি হবে সিন্ধু ঈগলও তার সন্তানকে ঠিক তেমনই ভালোবাসে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে সিন্ধু ঈগলের [শেষের ছবি] ছবিটি তুলেছেন: ফরিদী নুমান।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।