হারিয়ে গেছেন মগবাজারের হারুনর রশীদ
সারাহ সাদিয়া স্বর্ণ
প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ২৮ জুন ২০২১ সোমবার আপডেট: ১২:৫৬ এএম, ২৯ জুন ২০২১ মঙ্গলবার
‘মা গো, অতো ধুপধাপ কইরা চইলো না, কহন কি হয়! উত্তর ছিল, অবশ্যই চাচা’ ...তার সঙ্গে এটাই আমার শেষ কথা। সেটিও কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কায় হোম অফিস শুরুর আগে। এই শহরের আরও হাজার হাজার নিম্নআয়ের মানুষদের মতো তিনিও একজন, যাকে পেটের টানে বৃদ্ধ বয়সেও পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকে চাকরি করে যেতে হয়েছে। আজ তিনি একজন হারিয়ে যাওয়া হারুনর রশীদ।
মগবাজার ওয়্যারলেসের কাছে ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের ভয়াবহ বিস্ফোরণে যে কটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তিনি তারই একটির দায়িত্বে ছিলেন। এই ভবনটিরই তৃতীয় তলায় আমাদের অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজেয় বাংলার অফিস। তিনি আমাদের কেয়ারটেকার চাচা।
হারুনর রশিদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী নেই। এই ভবনে তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে প্রায় আড়াই বছর ধরে চাকরি করেন। থাকতেন নিচতলার একটি রুমে। সকাল ১০টা, সাড়ে দশটার দিকে আমার অফিসে ঢোকার সময়টা ছিল তার রান্না করার। সিড়িতে ওঠার সময় একটু উঁকি দিতাম, বৃদ্ধ হাসতেন স্নেহের হাসি।
ফেরার পথে দেখতাম গেইটের কাছে বসেছেন মোবাইল নিয়ে, উচ্চস্বরে দেশের বাড়িতে জমিজিরাতের খোঁজ নিতেন। আমার চলাফেরার অস্থিরতা বোধকরি তার নজরেও এসেছিল, তাইতো একটু বুঝে চলতে বলতেন।
রবিবারও হারুনর রশীদ ডিউটি করেছেন। রাতের বিস্ফোরণের পর থেকে এতোখানি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভবনের নিচে, সামনের রাস্তা, পাশের গলিতে বা কোথাওই তিনি নেই। বারবার চেষ্টা করেও তার মুঠোফোন বন্ধই পাওয়া গেছে।
দিনভর তার মেয়ে বাবার ছবি হাতে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন এ হাসপাতার থেকে ও হাসপাতালে। কেউ যদি একবারের জন্যেও কোনো সন্ধান দিতে পারে!
কিন্তু পাওয়া যায়নি। অপরাজেয় বাংলার প্রত্যেক সদস্য ব্যথিত, শোকাহত। বয়স্ক মানুষটির কথা ভাবনায় আসতেই ঝাপসা হচ্ছে চোখ। শুধু কানে ভাসছে 'কহন কি হয়'। সত্যিই হারিয়ে গেছেন হারুনর রশীদ!