শরমা হাউসের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অরক্ষিত: ফায়ার সার্ভিস
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০২:১০ এএম, ২৮ জুন ২০২১ সোমবার আপডেট: ০২:১১ এএম, ২৮ জুন ২০২১ সোমবার
এই ভবন অবশ্যই বসবাসের অনুপযোগী, বক্তব্য ফায়ার সার্ভিসের
মগবাজারে বিস্ফোরণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। রবিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার ঠিক পরপর রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটে। এতে পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অর্ধশতাধিক।
জমে থাকা গ্যাস থেকে মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত্যু বেড়ে ৭
মগবাজারে বিস্ফোরণে অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক আহত
বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শক্তি এত বেশি ছিল যে আগুনের ঝলকানিও দেখা যায়। এতে আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ বলছে, সব মিলিয়ে ৭টি ভবনের ক্ষতি হয়েছে। ভবনের সামনে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা ও সামনের ফ্লাইওভারের ওপরে চলন্ত বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো এই তিনতলা ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউস ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র। বিস্ফোরণে শরমা হাউস ও বেঙ্গল মিট চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবনটার পেছনের অংশে বিস্ফোরণ ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভবনটি পুরোপরি অরক্ষিত বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাহিনীর মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিশাল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ভবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবন অবশ্যই বসবাসের অনুপযোগী। এটি আমি এখনই বলে দিতে পারি। এটা পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই।’
বিস্ফোরণের কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করব।’ তবে প্রাথমিকভাবে তার ধারণা, গ্যাস বা গ্যাস জাতীয় দব্য থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।
এই ভবনে গ্যাসের অবৈধ লাইন আছে কি না- জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমার জেনেছি ভবনে নিচ তলাতে একটি ফাস্টফুডের দোকান ছিল। সেখাসে গ্যাসের লাইন ছিল। এই লাইনটি বৈধ কী অবৈধ এখন বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ভবনে সামনে রাস্তার কাজ চলছে সেখানেও গ্যাসের লাইন আছে। এই লাইনে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে কি না এটাও এখন বলা যাবে না।’
আহত নিহতের বিষয় জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৯ জন, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ১৭ জন, মহানগর হাসপাতালে কয়েকজন। আদদ্বীন হাসপাতালে দুই জন সব মিলিয়ে ৬০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণটি জমে থাকা গ্যাস হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে খুব সম্ভবত গ্যাস জমে ছিল। সেই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণেই আশপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
পাশের বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজেয় বাংলার অফিস। বিস্ফোরণে অফিসের জানালার থাই গ্লাসের কাঁচ ভেঙে গুরুতর আহত হয় গণমাধ্যমটির সম্পাদক মাহমুদ মেনন ও নির্বাহী সম্পাদক পলাশ মাহবুব। দুজনেরই মাথায় এবং শরীরে বিভিন্ন অংশে কাঁচ ঢুকে যায়। তারা দুজনই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অফিসের কম্পিউটার এবং অন্যান্য আসবাব। এই ভবনটির সিড়ি এবং সামনের অংশ ভেঙেচুড়ে একাকার। এছাড়া পুরো ভবনটিও মাটিতে কিছুটা দেবে গেছে।
মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে আড়ং, পাশেই বিশাল সেন্টার। এই দুটো ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আড়ংয়ের আশেপাশের এবং লাগোয়া গলির ভেতরেও কয়েক ডজন বহুতল ভবনের রাস্তার পাশের সবকটি জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। তবে এসব জায়গা থেকে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।