জলবায়ু পরিবর্তন
জাতিসংঘের রিপোর্ট ফাঁস, লাখ লাখ মানুষ ভুগবে অনাহার-খরায়
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ২৭ জুন ২০২১ রোববার আপডেট: ০২:৪০ পিএম, ২৭ জুন ২০২১ রোববার
জাতিসংঘের একটি খসড়া প্রতিবেদন সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। ‘দ্য ওর্স্ট ইয়েট টু কাম’ নামক চার হাজার পৃষ্টার খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে অনাহার, খরা ও অতি উচ্চ তাপে ভুগবে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্যানেল (আপিসিসি) থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনটি আগামী বছর প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই তার উপর সংবাদ প্রকাশ করেছে এজিন্স ফ্রান্স প্রেস (এএফপি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০২৬ সালেই ২.৭ ফারেনহাইট বা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। যা ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিণতি।
তাপমাত্রা বাড়ার পরিণতি ২০৫০ সালের মধ্যে দেখা দেবে। বিশ্বব্যাপী ১৩ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সমস্যার মুখোমুখি হবে, ৩৫ কোটি মানুষ খরাতে থাকবে এবং ৪২ কোটি মানুষকে চরম তাপমাত্রা মোকাবেলা করতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সবচেয়ে খারপ সময় এখনও আসেনি। আমাদের নিজের চেয়ে সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জীবন বেশি প্রভাবিত হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে। মানুষ কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও আসন্ন দশকগুলো পৃথিবীর জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
এএফপি জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসে কিছু ফ্যাক্ট চ্যাকিংয়ের ফলে প্রতিবেদনে সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে তবে এর মূল ফলাফলগুলো একই থাকবে।
এ বিষয়ে ওলোংগোং এর এআরসি ফিউচার ফেলো অধ্যাপকে হেলেন ম্যাকগ্রিগো এক বিবৃতিতে বলেন, আইপিসিসির প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত নয়, এটা খসড়া। তাই কোন মন্তব্য করা অনুচিত।
প্রতিবেদনে মূলত চারটি বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে। তারমধ্যে প্রথমটি হলো বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে পরিবর্তিত হচ্ছে। এ ধারা চলমান থাকলে তা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা মে মাসে জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে কমপক্ষে একবছরের জন্য হলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা পরিবর্তন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ছাড়িয়ে যাবে। যা কিছু প্রাণী এবং উদ্ভিদের জীবন নষ্ট করে দেবে।
অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞান একাডেমি এপ্রিল মাসে প্রকাশ করেছিল যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়ন অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়বে। যার ভয়ানক প্রভাব পড়বে মানুষের উপর।
কয়েক মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধা, পানি সংকট, চরম তাপ, প্রাকৃতি দুর্যোগের মুখোমুখি হবে। উপকূলীয় শহরগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছে। অঞ্চলগুলোতে আরও ঘন ঘন বন্যা ও ঝড় দেখা দেবে।
জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রপিকাল এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি সায়েন্সেসের (টিএসইসি) ডিরেক্টর প্রফেসর উইলিয়াম লরেন্স এক বিবৃতিতে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে সর্স্তরে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারমধ্যে অবশ্যই ব্লু কার্বন ইকোসিস্টেম এবং ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষন করতে হবে। যা উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে বন্যার হাত থেকে সুরক্ষা দেয় এবং খাদ্য সরবরাহ করে।
তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব স্তরের কর্মপদ্ধতি, প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে।