করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
স্কুলবিমুখতা, ঝরে পরা আর বাল্যবিবাহ বাড়ার শংকা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২০ রোববার
করোনা সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছে। বিশেষত মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে, বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ। এমনিতেই বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের বাংলাদেশ একটি। তারওপর গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এর হার বেড়েছে ২২০ শতাংশ পর্যন্ত। বিশিষ্টজনেরা আশঙ্কা করছেন, স্কুল খুলতে দেরি হওয়ার সঙ্গে এই সমস্যাগুলোও বাড়তে পারে।
রবিবার (১১ই অক্টোবর) বিকেলে ব্র্যাক আয়োজিত এক ডিজিটাল সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই সংলাপের শিরোনাম ছিল- ‘মেয়েদের স্কুলে ফেরাতেই হবে ’।
সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। আরও উপস্থিত ছিলেন নারী অধিকারকর্মী এবং সংসদ সদস্য এরোমা দত্ত, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এডভাইজার তাহেরা জাবীন, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারী, ডেভেলপমেন্ট সাইমন বাকলি। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, ‘ডিজিটাল ক্লাস করানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছে সরকার। টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার মানও বেড়েছে। শুধু সরকার নয়, বেসকারি পর্যায়েও অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে ক্লাস নিচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের যে এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যেতেই হবে- এমনটি ভাবা যাবে না। অনেক দেশে তো স্কুল খোলার পরে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদেরও বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কন্যাশিশুদের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন প্রতিটি ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। তাই ভুয়া সনদ দেখিয়ে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আর স্কুলের পাঠক্রমে নারী অধিকার, যৌন হয়রানির মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। শুধু কোভিড সংকট নয়, আগামীর সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছি আমরা।’
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘টানা স্কুল বন্ধ রাখলে শিশুরা যা শিখেছে, তা-ও ভুলতে বসবে। পাকিস্তানে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ মাস স্কুল বন্ধ রাখার পর শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে ১৪ মাস পিছিয়ে গেছে। আমাদের দেশে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। স্কুলগুলো হুট করে না খুলে, পর্যায়ক্রমে মনিটরিং করে খুলতে হবে, যেমন- যেসব জেলায় সংক্রমণ কম সেসব স্থানে আগে খোলা। এ বিষয়ে কাজ করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রস্তুত।’
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রাখার কারণে ছাত্রদের ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষকেরাও বিপদে আছেন। এই মহামারিটা আমাদের সামনে একটা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের মতো। আমাদের ভুল-ভ্রান্তি ও করণীয় সম্পর্কে নতুন করে শিখতে পারছি। সবাইকে স্কুলে ফেরানোর আগে তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তবতা যাচাই করে দেখতে হবে।’
তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেন- অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাতেও প্রণোদনার ব্যবস্থার অনুরোধ করেন।