খেলনা নাকি গোয়েন্দা?
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ২৫ জুন ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ১২:১৪ পিএম, ২৫ জুন ২০২১ শুক্রবার
ফার্বি। শিশুদের ইলেকট্রনিক্স খেলনা। দেখতে অনেকটা বিড়াল জাতীয় প্রাণীর মতো। উচ্চতায় এক ফুটের একটু কম। লাল, কমলা, সাদা, কালো ইত্যাদি নানান রঙের পাওয়া যায়। এদের সারা শরীর লোমে ঢাকা। মুখ আছে। লম্বা কান আর চোখও আছে একজোড়া করে। চোখে দেখে। কানেও শুনে। কথা বলে। মুখস্ত করে রাখে সব কথা ও শব্দ। তোতা পাখির মতো আবৃত্তিও করে। সুড়সুড়ি দিলে হাসে। ঘুমায়। লম্বা কান দু’টো মলে দিলে ব্যথা পায়। আর্তনাদ করে ওঠে।
এই ফার্বি কি শুধুই ইলেকট্রনিক্স খেলনা?
জী না। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, ফার্বি নামক এই বিদেশী খেলনার মধ্যে শনাক্ত করেছে শক্তিশালী গোয়েন্দা যন্ত্র। নিরাপত্তা সংস্থার মতে, ‘সুকৌশলে অসংখ্য ফার্বি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে মার্কিন মুুল্লুকে।’ মার্কিন নিরাপক্তা কর্মীরা সন্দেহ করছেন, এই ফার্বি আসলে তথ্য পাচারে সক্ষম একটি শক্তিশালী গোযেন্দা যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের টাইগার ইলেক্ট্রনিক্স এর প্রকৌশলী ডেভ হ্যাম্পটন ফার্বির এসএম ভার্সন ২৫ এর কোড হ্যাক করেন। তিনি জানান, ফার্বির অপকোড ৬৫০২। এর মধ্যে দামি চিপ বসানো রয়েছে। ফার্বির অরিজিন্যাল সোর্স কোড এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সে গান গায়, নাচে এবং কথা বলে। সাধারণ কোন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কারও পক্ষে ফার্বির প্রোগ্রামের ভাষা লিখা সম্ভব নয়। ফার্বির ভেতরে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে, এই প্রোগ্রামিং ভাষা প্রিন্ট নিতেই দরকার হয় এ-ফোর সাইজের ২৯৭ পাতা। নিরাপত্তা প্রকৌশলীরা ফার্বির বড় বড় গোলাকার চোখের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন শক্তিশালী গ্রাহক যন্ত্র এবং প্রেরক যন্ত্র। যার মধ্যে বসানো রয়েছে ইনফ্রারেড নামে শক্তিশালী ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার। সাধারণত এগুলো ব্যবহৃত হয় ওয়াইফাই ও স্মার্ট টিভির রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্রের মধ্যে।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, বার্বি নয়, তবে বার্বি’র মতো উচ্চারণের কাছাকাছি শব্দ ফার্বি। ফার্বি নামটার মধ্যে কেমন যেনো সন্দেহ মিশ্রিত ছিলো। দেখতে এটি আকর্ষণীয় খেলনা বৈ কিছু নয়। বাজারে খেলনাটির কাটতিও ছিলো দারুণ। বিশেষ করে বড়দিনের মার্কেটে। ইলেকট্রনিক্স খেলনা ফার্বির মায়াময় চাহনি দেখে প্রভাবিত এবং প্রতারিত হয়ে কিনতে পারেন যে কেউ। জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি (এনএসএ) এর কোনও কর্মচারীও এটি শখের বশে কিনতে পারেন। ঘরে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের হাতে দিতে পারেন। আর তখনই শুরু হবে ফার্বির আসল গোয়েন্দা কায়-কারবার। মার্কিন নিরাপত্তা প্রকৌশলীরা লক্ষ্য করেন, ফার্বির এক গাদা লোমের নিচে বসানো রয়েছে আধুনিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানো প্রযুক্তির সাজ-সরঞ্জাম। এদের চোখ, কান, নাক ভিডিও এবং অডিও কাজে দক্ষ। ফার্বি সম্পর্কে সরকারি ইশতেহারে জানানো হয়- ‘আমরা এই খেলনা যন্ত্রটিকে মার্কিন নিরাপত্তা অঞ্চলের মধ্যে নিষিদ্ধ করেছি। এগুলো যারা কিনেছেন তাদের জানানো হয়েছে স্টাফ সিকিউরিটি অফিসারদের কাছ থেকে তারা যেনো দিক নির্দেশনা গ্রহণ করেন।’
উল্লেখ্য, ম্যারিল্যান্ডের ফোর্ট মিড এ ফার্বি সরবরাহ করা হয় অতি গোপনে। প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে এমন ফার্বি কি পরিমাণে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে? মাত্র ত্রিশ ডলার মূল্যে এই শক্তিশালী গোয়েন্দা যন্ত্র কেনই বা বিক্রি হচ্ছিলো? এসব ব্যাপারে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ আর কোনও ব্যাখ্যা না দিলেও জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির আইনজীবী ষ্টিওয়ার্ট বেকার জানান, ‘এই লোমশ গুপ্তচর প্রসঙ্গটি আপাতত চাপা পড়েছে। এই ফার্বি গোযেন্দা যন্ত্রটি দেশে অনুপ্রবেশ রোধ করার চেয়ে দেশ থেকে ঝেটিয়ে বাইরে বের করে দেওয়াটাই এখন রীতিমতো কঠিন কাজ। যদি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সির অনুসন্ধানী দল সব ফার্বি খুুঁজে বের করেতে না পারে তবে তাদের জন্য বিপদ নিশ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘ফার্বির বংশ নির্বংশ হতে আর বেশি সময় লাগবে না।’
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।