অর্থ লুটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: অচলাবস্থায় পাবিপ্রবি
রিজভী জয়, পাবনা
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ২০ জুন ২০২১ রোববার আপডেট: ০৬:১৯ পিএম, ২০ জুন ২০২১ রোববার
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও চাঁদাবাজির পাল্টাপাল্টি অভিযোগে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের মুখোমুখি অবস্থানের কোন সুরাহা হয়নি। প্রধান প্রকৌশলীর অব্যহতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আল্টিমেটামের সময়সীমা পার হওয়ায় কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে পাবিপ্রবি অফিসার্স এসোসিয়েশন।
রবিবার (২০ জুন) সকালে তারা রেজিস্ট্রার অফিস ঘেরাও করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার বিজয় কুমার বহ্মকে বের করে দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রকৌশল দপ্তর থেকে দেয়া প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করা সহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার বিজয় কুমার ব্রহ্ম বলেন, উভয় পক্ষের পত্রই আমরা পেয়েছি। প্রকৌশল দপ্তরের লিখিত পত্রে গত ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে তার কক্ষে গিয়ে লাঞ্ছিত করা, গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া ও পিকনিকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের নিকট থেকে চাঁদাবজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে অফিসার সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগগুলি স্পর্শকাতর হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক কামরুজ্জামানকে আহবায়ক এবং আমাকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল আলম, ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ। তদন্ত কমিটিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার বলেন, স্মারকলিপির বিষয়েও উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। কর্মবিরতির কারণে রবিবার কোন কাজ হয়নি। সকাল ১১ টার দিকে কর্মকর্তারা আমাকে অফিস থেকে বের করে দেয়ায় আমিও চলে এসেছি।
পাবিপ্রবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি হারুনর রশিদ ডন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের অর্থ অপচয় রোধ ও চলমান পাঁচশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম এবং সেসব অনিয়মের বৈধতা দিতে ভুয়া বিল ভাউচারে কর্মকর্তাদের সাক্ষরে বাধ্য করার প্রতিবাদে আমরা প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের অব্যহতি চেয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। উপাচার্য রোস্তম আলী সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসেই আসেননি। অচলাবস্থা নিরসনে কোন উদ্যোগও নেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা রবিবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অভিযোগের বিষয়ে কোন সুরাহা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকৌশল দপ্তরের দেয়া মিথ্যে অভিযোগে তদন্ত কমিটি করেছে। তাদের এমন আচরণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সন্দেহজনক। দূর্নীতির বৈধতা দিতেই তারা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চলমান উন্নয়ন কাজের লুটপাট সিন্ডিকেট উপাচার্য এম রোস্তম আলীর ইশারায় কাজ করে। এ কারণে কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রকৌশলীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আজ্ঞাবহ বিতর্কিত ও জিয়া পরিষদ নেতা দুর্ণীতিবাজ এক শিক্ষককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করেছেন। থলের বেড়াল বেরিয়ে যাওয়ার ভয়েই তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন।
এ বিষয়ে পাবিপ্রবি উপাচার্য এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে দুপুর তিনটায় যোগাযোগ করা হলে, তিনি শারীরীক ভাবে অসুস্থ জানিয়ে ঘুমিয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।