গ্রাহক-সরকারের চাপ সামলাতে ক্যাম্পেইন চালাবে হোয়াটসঅ্যাপ
সাই-টেক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ১৪ জুন ২০২১ সোমবার আপডেট: ১২:১২ পিএম, ১৪ জুন ২০২১ সোমবার
ব্যক্তিগত নীতিমালা পরিবর্তনের পর থেকেই গ্রাহক হারাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ। বিভিন্ন দেশ থেকেও আসছে সতর্কবার্তা। এমন ধাক্কা সামলাতেই এবার বিজ্ঞাপনি ক্যাম্পেইন চালাবে হোয়াটসঅ্যাপ।
সোমবার (১৪ জুন) থেকে সে ক্যাম্পেইন শুরু হবে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে। পরবর্তীতে সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও করা হবে। এ ধরনের ক্যাম্পেইন যে কোন সামাজিক মাধ্যমের জন্যই প্রথম।
হোয়াটসঅ্যাপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যার অর্থ বার্তাগুলি কেবল প্রেরক ও পাঠকই দেখতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা এর মূল সংস্থা ফেসবুক - এগুলি দেখতে বা বাধা দিতে পারে না এবং আইন প্রয়োগও করতে পারে না।
এই পদ্ধতি পরিবর্তন চেয়েছিল যুক্তরাজ্য সরকার। দেশটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতা করতে আহ্বান জানায়। তাদের দাবি এনক্রিপটেড থাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরদারি করা যাবে না। তবে হোয়াটসঅ্যাপ এর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিবে বলে জানিয়েছে।
বিবিসিকে হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান উইল ক্যাথকার্ট বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর দিকে মনযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু এখানে উল্টো হচ্ছে।
ইতোমধ্যে চীনে হোয়াটঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ। এছাড়া ভারত সরকারের করা নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। যেখানে গ্রাহকদের গোপনীয়তা সুরক্ষা লঙ্ঘন হবে। এখন ভারত সরকার বিরুপ হলে দেশটির প্রায় ৪০ কোটি গ্রাহক হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
ক্যাথকার্ট জানান, তিনি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন যে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতের নিয়মাবলী কঠোর করার কারণে আরও দেশ প্ল্যাটফর্মটি ব্লক করার পথ বেছে নিতে পারে। তবে তারা এখনও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনে অনড়।
আর এমন অবস্থা পরিবর্তনেই বিশ্বজুড়ে ক্যাম্পেইন চালানোর পথ বেছে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।
অবৈধ ও অনৈতিক কন্টেন্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
যদিও হোয়াটসঅ্যাপ তার গ্রাহকদের বার্তা পড়তে পারে না। তবে সেটা প্রাপক দেখেছে কিনা তা বুঝতে পারে। আর তাই নীল জোড়া দাগ দেখা যায়।
অবৈধ কন্টেন্ট বন্ধ করতে এমন আরও টুল আনার চেষ্টা করছে হোয়াটসঅ্যাপ যা এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ধরে রাখবে আবার ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ ও ভুল তথ্য ছড়ানো কন্টেন্ট বন্ধ করে দিতে পারবে।
একই ভাবে এই মেসেজ কতজনের কাছে যাচ্ছে এবং কত গ্রুপে কতবার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সেটাও মনিটর করা যাবে। এছাড়া একই মেসেজ কতজন মানুষের মাঝে ফরোয়ার্ড করা যাবে তা সীমা নির্ধারণের চেষ্টাও চলছে।
ক্যাথকার্ট জানিয়েছেন, হোয়াটসঅ্যাপ প্রতি মাসে দুই মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে শুধু ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য।
নতুন নীতিমালা নিয়ে কী হয়েছিল
গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ নতুন নীতিমালার বিষয়টি সামনে আসে। তখন থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছে অনেকে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন নীতিমালায় ব্যক্তিগত ম্যাসেজে নজরদারি করতে পারবে ওয়াটসঅ্যাপ। এর পরপরই সিগন্যাল ও টেলিগ্রামের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপের গ্রাহক বাড়তে থাকে।
তবে এই সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট থেকে বারবারই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। সোমবার (১৪ জুন) ক্যাথকার্ট আরও জানান, মূলত হোয়াটঅ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করতেই তারা নীতিমালা পরিবর্তন করেছেন। মূলত গ্রাহকদের গোপনীয়তায় সেখানে কোন পরিবর্তন আসবে না।
ওয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ থেকে পরবর্তীতে নতুন নীতিমালায় কি কি পরিবর্তন আসবে সেগুলোর নোটিফিকেশন পাঠানো হয় এবং তা গ্রহণের জন্য ১৫ মে শেষ দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
১৫ মে’র আগে নিজেদের পরবর্তী কার্যক্রমের ঘোষণা দেয় ওয়াটসঅ্যাপ। যেখানে বলা হয় নতুন নীতিমালা না মানলে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া হবে অ্যাকাউন্ট।
প্রথমে ব্যবহারকারীরা তাদের চ্যাট লিস্ট দেখতে পাবেনা তবে অডিও ও ভিডিও কল রিসিভ করতে পারবে এবং নোটিফিকেশন থেকে ম্যাসেজের উত্তর দিতে পারবে।
কয়েক সপ্তাহ পরে এই সব অপশনও বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন ব্যবহারকারীরা কেবল নিজেদের ডাটা ডাউনলোড করতে পারবেন। অথবা নীতিমালা গ্রহণ করে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।