অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক উপন্যাস

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৮

পলাশ মাহবুব

প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ১২ জুন ২০২১ শনিবার   আপডেট: ০৭:০০ পিএম, ১২ জুন ২০২১ শনিবার

১২.
ঝড়ের গতিতে ক্লাসে ঢুকে হাঁপাতে থাকে রাত্রি। তার উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটা বাদামি হয়ে গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
তৃপ্তি একটু দূরে ছিল। সে দৌড়ে আসে।
কিরে রাত্রি কি হয়েছে?
রাত্রি কিছু বলতে পারে না। তৃপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। জলে পূর্ণ তার চোখের দুই ধার ঝরে পরার অপেক্ষায়।
বলবি তো কি হয়েছে? হাঁপাচ্ছিস কেন এভাবে? কিরে কি হয়েছে?
রাত্রির হাত ধরে তৃপ্তি তাকে বেঞ্চে বসায়। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না রাত্রি। তৃপ্তিকে শক্ত করে ধরে কেঁদে ওঠে। শব্দহীন কান্নায় শুধু কেঁপে কেঁপে ওঠে রাত্রি।
কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটনা জানা যায়।
ঘটনা ঘটেছে ক্লাসে আসার পথে। ক্যাম্পাসে।
রাত্রি যখন ক্লাসের দিকে আসছিল তখন আর্টস বিল্ডিংয়ের সামনে কয়েকটা ছেলে তার পথ আটকে দাঁড়ায়। রাত্রির সাথে কথা বলতে চায় তারা।
কি বলতে চান বলুন। পাল্টা জানতে চায় রাত্রি।
যদিও তাদের সামনে এসে দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা রাত্রির ভালো লাগেনি। তারপরও সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।
তিনটি ছেলের একজন তার পরিচিত। তাদের ক্লাসে পড়ে। রাজনীতি করে। বাবুল ভাইয়ের সাগরেদদের একজন। মাস্তান হিসেবে কলেজে পরিচিত।
ছেলেটির নাম মনে করার চেষ্টা করে রাত্রি। ঠিক ওই সময়ে নামটা তার মনে পড়ে না। মনের মধ্যে আছে কিন্তু মাথায় আসছে না।
কি হলো! পথ আটকে আছেন অথচ কিছু বলছেন না। কি বলবেন বলুন। আমার ক্লাস আছে।
ছেলেটির ইশারায় বাকি দুজন চলে যায়। তবে একেবারে যায় না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে।
তোমারে চিঠি দিলাম। কোনও উত্তর দিলা না যে? ঘটনা কি? আমি কি উত্তর পাওয়ার যোগ্য না? ভূমিকা ছাড়া মূল কথায় চলে যায় ছেলেটি।
কোন চিঠি! কিসের চিঠির কথা বলছেন? রাত্রি একটু অবাক হয়।
এখন আবার বইলো না যে কোনও চিঠি পাও নাই। এসব বললে হবে না। চিঠি তুমি ঠিকই পাইছো। পড়ছোও। মোবাইলে জবাব দেওনের কথা ছিলো। তিনটা চিঠি পাঠাইছি তোমারে। উত্তর পাই নাই।
ওহ। আচ্ছা। ওই চিঠি। রাত্রি এবার বুঝতে পারে কোন চিঠির কথা বলা হচ্ছে।
একচল্লিশ নম্বর চিঠিটা তাহলে এই ছেলে পাঠিয়েছে। মনির। চট করে ছেলেটার নামও মনে পড়ে যায়। চিঠির শেষে শুধু ‘ম’ লেখা ছিল। তৃপ্তি আর সে মিলে অনেক ছেলেকে সন্দেহ করেছে। কিন্তু এই ছেলের নামটা মাথায় আসেনি। রাত্রির সাথে এর আগে তার কখনো কথাও হয়নি। ক্লাসে তেমন একটা আসে না।
আচ্ছা ঠিক আছে। উত্তর দেও নাই। দেও নাই। এবার সামনাসামনি কও। ফেইস টু ফেইস। তোমার মুখে কথাটা শোনার জন্য নিজেই চলে আসছি। রাত্রির ভাবনার মধ্যেই কথা বলে ছেলেটি।
কি বলবো? জানতে চায় রাত্রি।
কি কইবা। সেইটাও কি আমি বইলা দিবো! আমার চিঠির উত্তর দাও।
মনির একটু থামে। রাত্রির চোখের দিকে তাকায়। আমি জানতে চাচ্ছি, ইয়েস অর নো?
রাত্রি কিছু বলে না। সে ভীত চোখে চারপাশ দেখে। তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এখন তার একটু ভয় ভয় লাগে। এ ধরনের ছেলেদের বিশ্বাস নেই। এরা যে কোনও কিছু করতে পারে।
আশাপাশ দেইখা কোনও লাভ নাই। কেউ আইবো না এইখানে। নিদ্রাকুসুমও আইবো না। ওই শালা তো একটা ভীতুর ডিম। দেখলে আরও পলাই যাইবো। হা হা হা।
কুৎসিত টাইপ হাসি দিয়ে রাত্রির আরেকটু কাছাকাছি আসে মনির। রাত্রি কিছুটা পিছিয়ে যায়।
অনেক অপেক্ষা করছি। আজকে উত্তর না নিয়া আমি যাইতেছি না। ইয়েস অর নো?
রাত্রি কিছু বলে না। এবার সে সরাসরি ছেলেটির চোখের দিকে তাকায়।
সাধারন ছেলে হলে রাত্রির চোখে যে প্রচণ্ড ঘৃনা ফুটে উঠেছে তা সে টের পেত। এই ছেলের মধ্যে কোনও ভাবান্তর হয় না।
আমার চিঠি পাওয়ার পর তুমি র‌্যাবরে জানাইছো। সে খবর পাইছি। লাভ নাই। এত ছোট বিষয় নিয়া র‌্যাবের মাথা ঘামানোর সময় নাই। দেশে এত মানুষ। কতো ঝামেলা। তাছাড়া কলেজের ছোট-খাটো বিষয় দেখার জন্য আমরাই আছি। আর আমরা হইলাম এই কলেজের মালি। ফুলের দায়িত্ব আমাদের।  
ফুল আর মালির বিষয়টি সে এমনভাবে বলে যাতে মনে হয় রাত্রি ফুল আর সে মালি। ফুলের দায়িত্ব এখনই বুঝে নেবে।
দেখুন, একটা কথা বলি। আপনি আমাকে চিঠি লিখেছেন। প্রেমের অফার করেছেন। আমি কাউকে বলিনি। তা আপনি লিখতেই পারেন। আপনার যেমন এই অধিকার আছে তেমনি সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কিন্তু আমার। রাত্রি বলে।
হ। তাতো অবশ্যই। তাতো অবশ্যই। তোমার সিদ্ধান্তের জন্যই তো এত অপেক্ষা। কতদিন ধইরা তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। 
রাত্রির কথায় মনিরের মধ্যে কোনও ভাবান্তর হয় না। এখন তোমার সিদ্ধান্তটা জানাও। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
এতকথা বলার পরও আমার সিদ্ধান্ত মুখে বলতে হবে। আপনি কিছু বোঝেন না! কিছুটা রাগ আর জোর দিয়েই বলে রাত্রি।
মুখেই শুনতে চাই। মুরুব্বিরা বলে, মেয়েদের অন্তরের কথা আর মুখের কথায় মিল নাই। মুখেই বলো। ইয়েস অর নো?
ওকে। মুখে যখন শুনতে চাচ্ছেন তখন শুনুন- নো, নো, নো। তিনটা চিঠির উত্তর একসাথে দিয়ে দিলাম। দয়া করে এখন থেকে আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না। ওকে?
নো শব্দটা ভীষণ রকমের জোর দিয়ে বলে রাত্রি। এতটা জোর হয়তো মনির আশা করেনি। সে কিছুক্ষন রাত্রির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ক্যাপটা মাথায় পড়ে।
নো কেন? খুব ঠান্ডা স্বরে জানতে চায় মনির।
আপনাকে আমার পছন্দ না তাই। ভেরি সিম্পল।
আচ্ছা। আমাকে তোমার পছন্দ না। তা কাকে তোমার পছন্দ? ওই হাফ লেডিস টাইপ নিদ্রাকুসুমকে?
রাত্রি কোনও কথা বলে না। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে।
আমাকে না বলার অর্থ কি তুমি জানো? আমাকে না বলার অর্থ তোমাকে আগেও বলেছি। আবার বলছি। এর পরিণতি হবে খুব ভয়াবহ। তুমি সেটা কল্পনাও করতে পারবে না। 
আচ্ছা। তাই নাকি? অনেক ক্ষমতা আপনার, না? তা কি করবেন?
কি করবো সেটা করেই দেখাবো। ওই নিদ্রাকুসুমের প্রেমের সাধ মিটাই দেবো। ওই শালা আতিকুল হক, আমাদের হক নিয়া টানাটানি করতেছে। ওর সাউয়্যা ভেঙে একটা বিচি জাদুঘরে পাঠিয়ে দেবো। তখন ছাত্রীর সাথে প্রেম করার মজা টের পাবে।
খবরদার অসভ্যের মত বাজে কথা বলবেন না। আর এর মধ্যে আতিক স্যারকে টেনে আনছেন কেন?
ও মারে মা। স্যারের সাথে লটরপটর করতে পারো আর আমরা বলতে পারবো না। এখন তো শুধু তোমারে বলতেছি। ওয়ান টু ওয়ান। দুই দিন পর পুরা ক্যাম্পাস জানবো। তোমাদের নিয়া পোস্টারিং হবে। সবার মুখে মুখে থাকবে শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেমকাহিনী। গোপন অভিসারের গল্প।
কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে কথাগুলো বলে মনির। শুনতে যতটা খারাপ লাগে দেখতে লাগে তারচেয়ে বেশি। রাত্রি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। হঠাৎ তার মাথায় রক্ত খেলে যায়। মনিরের গালে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে সে।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিয়ে যায় মনির।
এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দৌড়ে ক্লাসে চলে আসে রাত্রি।

১৩.  
কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে বাটন বাবুল। খবরটা শোনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সে কিছু বলেনি। ঝিম মেরে আছে। মাঝে ওহাবের বানানো এক কাপ আদা মেশানো দুধ চা খেয়েছে। তারপর সিগারেট ধরিয়েছে। 
সিগারেটটা সাধারনত সে বেশ আয়েশ করে খায়। বড় টান দিয়ে আস্তে আস্তে ধোঁয়া ছাড়ে। কিন্তু আজ টেনেছে ফরফর করে। কয়েক টান দিয়ে সিগারেটও ফেলে দেয়। তারপর আবার কপালে হাত।
মনিরসহ আরও কয়েকজন তাকে ঘিরে বসে আছে। টেনশন নিয়ে তারা বাবুলের দিকে তাকিয়ে। একটা ডিশিসন দরকার।
নিজের মাথায় নিজে দুটো চাপর দিয়ে মাথা তোলে বাবুল। তারপর মনিরের দিকে তাকায়।
এই ঘটনা যদি এখন ক্যাম্পাসে ছড়ায় তাইলে আমার মান-ইজ্জত কিছু থাকবে? থাকবে না। আরে আমি মানুষরে সকাল-বিকাল চড়-থাপ্পর মারি। আমি আসতেছি শুনলে অনেকে ভয়ে প্যান্টের মধ্যে ইয়ে করে দেয়। আর আমার ক্যাডার কিনা চড় খাইয়া আসছে। তাও আবার মাইয়া মাইনষের। দ্যাখ দ্যাখ গালের মধ্যে আঙুলের পাঁচটা দাগ বইসা গেছে।
উপস্থিত অন্যদের তর্জনী দিয়ে মনিরের গাল দেখায় বাবুল। 
ছি ছি ছি। চড় খাইয়া আমার সামনে আইলি ক্যান। ক্যাম্পাস থিকা পলাইয়া যাইতে পারলি না?
বস, ওই মাইয়ার যে এতবড় কইলজা বুঝতে পারি নাই। হাত দিয়ে চড় খাওয়া গাল ঢেকে নিচু স্বরে মনির বলে।
মাইয়ার কইলজা সম্পর্কে ধারণা না নিয়াই প্রেম করতে গেছো। গ্রাম্য রোমিও কোথাকার। থাপ্পর যে আরও কয়েকটা খাস নাই সেইটা ভাগ্য। তোদের ওপর ভরসা করলে তো আমার সব যাবে। উফ, এখন যদি জানাজানি হইয়া যায়। এমনিতেই ট্যামা তারেক হা কইরা আছে। সুযোগ পাইলেই কামড় দিবো। অর লোকজন তো এখন এই গল্প সারা ক্যাম্পাস ছড়াইবো। চড়রে বাড়াইয়া লাত্থি কইবো। আস্তে আস্তে— গল্পের ডালপালা গজাইবো। কইবো একটা নিরীহ মাইয়ারে লইয়া তোরা টানাটানি করছোস। ইস. . .। ওহাবের দোকানের দুর্বল টেবিলের ওপর ঘুষি মারে বাবুল।
বস এক কাজ করি। মাইয়াটারে উঠাইয়া নিয়া আসি। এত্তবড় সাহস আমগো গায় হাত দেয়। মনিরের সাথে যে ছেলে দুটো ছিল তাদের মধ্যে একজন কথাটা বলে।
কি বললি? বাবুল ছেলেটার কলার চেপে ধরে।
ওই কি বললি তুই! আবার বলতো শুনি।
ছেলেটি চুপ হয়ে যায়। 
একে তো প্যান্ট খুইলা নিছে। এখন ঢোল বাজাইয়া সারা ক্যাম্পাসে জানাইতে চাস। চড় খাইয়াও শিক্ষা হয় নাই! ওরে তুইলা আনলে সারা দুনিয়া খবর হয়ে যাবে। মাইয়া মানুষ উঠাই আনার মানে বোঝস? তোরা দেখতেছি আমারে শেষ কইরা দিবি।
বাবুল এবার মাথায় হাত দেয়।
কিছুক্ষন সবাই চুপচাপ।
ভাই, একটা কিছু বলেন। চড় খাইয়া চুপ হইয়া গেলে তো ক্যাম্পাসে আমাগো পাওয়ার কইমা যাবে। আজকে মনিররে চড় মারছে কালকে আরেকজন চড় খাইবো। দুইদন পর তো খালি চড়ের ওপর থাকতে হবে। বাবুলের গ্রæপের সিনিয়র একজন কথাটা বলে। 
তাছাড়া বিরোধী পার্টিও এতে সুযোগ পাইয়া যাবে। ক্যাম্পাসে তো আমাদের নিয়ন্ত্রন থাকবে না। একটা কিছু করতেই হবে।
চড় খাইতে যায় ক্যান? কেউ তো আর ডাইকা নিয়া চড় দেয় নাই। সামান্য মাইয়া মানুষ ম্যানেজ করতে পারে না। এরা ভবিষ্যতের লিডার হবে ক্যামনে! বাবুলের কন্ঠে স্ষ্ট উষ্মা।
যা হওয়ার হইয়া গেছে ভাই। পোলাপান মানুষ একটা ভুল কইরা ফালাইছে। ভুল কইরা তো আপনার কাছেই আইবো। আপনি বস না। মাথা ঠান্ডা করেন। আর এখন কি করতে হবে সেইটা বলেন।
শোন। বাবুল তাদের নিজের জামার বোতাম প্যাঁচায়।
যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। এমন একটা ভাব করতে হবে যে কিছুই হয় নাই। মনির যে ওই মাইয়ার চড় খাইছে এই কথা যেন ক্যাম্পাসে না ছড়ায়। আর যদি কেউ বলেও তাইলে চেতাচেতি করা যাবে না। তাদের খুব সুন্দর করে বুঝাইতে হবে যে, দুই ক্লাসমেটে ঝগড়াঝাটি হইছে। সামান্য বিষয়। বড় কিছু না।
কিন্তু মাইয়াটার কি হবে? ওরে কি কিছু না কইয়াই ছাইড়া দিমু ভাই।
ছাইড়া দিমু না বাইন্ধা রাখমু সেটা নিয়া আর তোমাগো ভাবতে হবে না। নেক্সট টাইম গেলে দেখা গেলো স্যান্ডেলের বাড়ি খাবা। যা বলি চুপচাপ শোন।
বাবুল সবাইকে কাছে ডাকে।
সবাই খুব স্বাভাবিক থাকবি। আর মনে মনে গান্ধিজির কথা চিন্তা করবি। ভাববি কিছুই হয় নাই। সহিংস না এবার আমাদের পদ্ধতি হবে অহিংস। 
অহিংস! 
হ অহিংস। কারণ আছে। নারীর প্রতি সহিংসতায় বারণ আছে।
বুঝলাম না ভাই।
বুঝাইয়া বললেই না বুঝবি। শোন, একটু অন্যভাবে খেলতে হবে। মাইয়াটার নাম যেন কি?
কোন মেয়ে?
কোন মেয়ে আবার। যার চড় খাইলি।
আমি খাই নাই ভাই। মনির খাইছে।
ওই হইলো। মনিরে খাওয়া আর তোর খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কি। মনে কর আমিও খাইছি। কুকুরের বাচ্চা কইলে গালিটা কে খায়?
বাবুলের শেষ প্রশ্নের জবাব কেউ দেয় না। বাবুলের পর সবচেয়ে যে সিনিয়র সে মুখ খোলে।
মাইয়াটার নাম রাত্রি। পলিটিক্যাল সায়েন্স। থার্ড ইয়ার।
হুমম রাত্রি। অরে কিছু বলা যাবে না। যা করার ওই তেলের বোতলরে করতে হবে। যে মাস্টরের লগে ওই মাইয়ার গিট্টু তারে সাইজ করতে হবে। দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তাইলে দাগই ভালো। হা হা হা। একটু দাগ লাগাইয়া দিতে হবে। তোরা কি কস?
বাবুলের কথায় তার লোকজন একটু ধন্দে পড়ে যায়। তারা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
বোঝস নাই? 
তারা দুদিকে মাথা নাড়ে।
বুঝবি ক্যামনে? বুঝলে তো আর চড় খাইতি না। সময় মতো গালটা সরাই নিতে পারতি। শোন, কানামাছি খেলতে হবে ওই কানা মাস্টররে নিয়া। কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ। যা কিছু করার দুর্বলের ওপর করতে হয়। এইডাই নিয়ম। পলিটিক্স।
বস, কি করতে হবে সেইটা বলেন। অনেকক্ষন পর মনির মুখ খোলে।
ওরে আউট অব সাইট আউট অব মাউন্ড কইরা দিতে হবে। একেবারে দৃষ্টিসীমার বাইরে। দেখাও নাই পিরিতিও নাই। ডিসমিস।
বস, খরচ কইরা দিমু।
হোসস। কয় কি! মশা মারতে জঙ্গি বিমান। কেসের মেরিটও বোঝস না তোরা। এইটা কি খরচের কেস? কানা মাস্টর যাতে কলেজে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে ওই মাস্টর কলেজ ছাইড়া পলাই যায়।
সেইটা কেমনে? তাইলে তো হাত-পা ভাইঙ্গা দিতে হইবো। নাইলে তো ডরাইবো না।
বোঝস খালি মারামারি। বেটা উজবুকের ভাই বেক্কল। কইছি না অহিংস পদ্ধতিতে খেলবো। নো ভায়োলেন্স। হাত-পা না ভাইঙ্গাও আউট অব সাইট কইরা দেওন যায়। রাস্তা আছে। হা হা হা।
নিজের অনুসারীদের দিকে তাকিয়ে ঘাতক হাসি হাসে বাবুল।
তার সাগরেদদের কাছে বিষয়টা পরিস্কার হয় না। না বুঝেই মাথা নাড়ে তারা।

চলবে...

আগের পর্ব পড়ুন

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৭

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৬

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৫

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৪

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-৩

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-২

বলতে এলাম ভালোবাসি : পলাশ মাহবুব : পর্ব-১