অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এস এম সুলতান: জীবনকে জীবনের মতো করে এঁকেছেন যিনি

শরিফুল ইসলাম, নড়াইল

প্রকাশিত: ১২:০৫ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২০ শনিবার   আপডেট: ১১:২১ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০ বুধবার

শিল্পী এস এম সুলতান তাঁর ক্যানভাসের রঙ তুলিতে জীবন্ত করে তুলেছিলেন মানুষের জীবনকে। তাই তিনিও বাঙালির জীবন ক্যানভাসে জীবন্ত, অমর।

শনিবার (১০ অক্টোবর) শিল্পী এস এম সুলতানের ২৬তম প্রয়াণ দিবস। 

চিত্রা নদীর পাশে মাছিমদিয়া গ্রাম, সবুজ শ্যামল সেই নড়াইলের গ্রামে ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। 

৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতী মানুষের সাথে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন পাট কাটা, ধানকাটা, ধান ঝাড়া, জলকে চলা, চর দখল, গ্রামের খাল, মৎস্য শিকার, জমি কর্ষনে যাত্রা, গুন টানা, ফসল কাটার ক্ষনে, শরতের গ্রামীন জীবন, শাপলা তোলার মত বিখ্যাত সব ছবি। জীবনকে জীবনের মতো করে ক্যানভাসে এঁকেছেন তিনি।

১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি সমকালীন বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছিল। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে। 
কালোর্ত্তীন এই চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্ষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। 

জীবনের ছবি আঁকার জন্য, জীবনের কাছে চলে যেতেন তিনি। খুব কাছে থেকে মানুষের জীবন দেখতেন। কাশ্মীরের পাহাড়ে কিছুদিন একদল উপজাতিদের সঙ্গে বাস করেছেন। ১৯৪৬ সালে কাশ্মীর থেকে চলে যান সিমলায়। সেখানেই তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়। যা ছিল তাঁর শিল্পী জীবনের প্রথম স্বীকৃতি। 

মহান এই শিল্পী ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থান করে ফিরে আসেন জন্মভূমি নড়াইলে। ১৯৫৫ সালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড় পুরুলিয়ায় নন্দন কানন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে যুদ্ধের ছবি এঁকেছেন তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে সুলতান কাছ থেকে দেখেছেন দেশের মানুষ, প্রকৃতি আর মানুষের জীবনাচার। আর নিজের বোধ ও মেধাকে শানিত করেছেন আবেগ, অনুভুতি ও উপলদ্ধির প্রয়াসে। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের কাছে তার নতুনভাবে পরিচয় ঘটে। 

শিল্পী এস এম সুলতান সৃষ্টির প্রয়োজনে হারিয়ে যেতেন। তাঁর এই হারিয়ে যাওয়া ছিল, জীবনের সন্ধানে।