জনহীতৈষণায় হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা আইউব আহমদ প্রাথমিক বিদ্যালয়
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ৪ জুন ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০৬:৪৭ পিএম, ৪ জুন ২০২১ শুক্রবার
একানব্বই বছরের বৃদ্ধ, হাইলধর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহমেদ চৌধুরী কোদাল হাতে মাটিতে কোপ বসিয়ে বললেন, “এইখানে একটা স্কুল হওয়া খুব দরকার ছিলো। এই এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দূরে গিয়ে স্কুল করতে হয়, এবার তাদের কষ্ট কমবে।“
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিনসহ গ্রামের অন্য গণ্যমান্যরা। তারা সমবেত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে। স্কুলটি ঠিক যেখানটাতে গড়ে তোলা হবে সেখানটাতে গোল হয়ে বসেছিলেন তারা। তাদের সকলেরই এক কথা “এইখানে একটা স্কুল দরকার ছিলো”।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন আজিজ আহমদ। বাংলাদেশি আমেরিকান আইটি উদ্যোক্তা। এবং এই স্কুলটি হতে যাচ্ছে তার তথা পরিবারের উদ্যোগ ও অনুদানে। আজিজ আহমদের বাবার নাম অনুসারে স্কুলটির নামকরণ করা হবে ‘মুক্তিযোদ্ধা আইউব আহমদ প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
স্কুলের ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানটি সাদামাটা হলেও ঢাকা থেকে এতে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবদুল করিম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মেজর জেনারেল এটিএম আবদুল ওয়াহাব, সাবেক শিক্ষাসচিব ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তারা সকলেই আজিজ আহমদের এই জনহিতৈষণামূলক উদ্যোগের প্রশংসা করছিলেন। শিক্ষা ও দক্ষতার অগ্রসরতায় তার অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি এই স্কুলটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
আজিজ আহমদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইটি সফটওয়্যার কোম্পানি ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। তার প্রতিষ্ঠিত কোডার্স ট্রাস্ট বাংলাদেশ দেশে নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তোলার ক্ষে্ত্রে অন্যতম প্রধান বেসরকারি উদ্যোগ। দেশে তার রয়েছে নানা ধরনের জনহিতৈষী উদ্যোগ। এবার নিজ গ্রামে তিনি গড়ে তুলছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ প্রসঙ্গে আজিজ আহমদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সকল বক্তৃতায় শিক্ষার অগ্রসরতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে বলেন। তার এই আহ্বান সবসময় আমাকে আলোড়িত করে। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে যে ভাগ্যটুকু গড়তে পেরেছি, তার সকলকিছুর মূলেই রয়েছে নিজের দেশ। এবং এই গ্রাম। এখান থেকেই শিক্ষার প্রথম ধাপ শুরু। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশ আমাদের যা কিছু দিয়েছে, এখন সময় হয়েছে দেশকে কিছু দেওয়ার। আর সে কারেণেই দেশে আমার কোনো উদ্যোগই অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে নয়। আর এবার স্কুলটি আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে নিজেদের পৈতৃক জমির উপর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। যা আশাকরি একটি শিক্ষিত জাতি গড়তে ভূমিকা রাখতে পারবে।
আজিজ আহমদ বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিলো তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে স্বাধীনতার পরপরই অল্পবয়সে তার মৃত্যু হয়। দেশের শিক্ষার প্রসারে বাবা যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, অকাল প্রয়ানে তা সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের সকল ভাইবোন, পরিবারের অন্য সদস্য ও মুরুব্বিদের মত এখানে আমার বাবা মো. আইউব আহমদের নামে একটি স্কুল হোক। সকলের প্রত্যাশার পূরণে আমাদের স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হলো।
এখানে একটি স্কুল তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মাইজপাড়া তথা হাইলধরের মানুষেরা। ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, পূর্ব হাইলধরের মাইজপাড়ায় যে স্কুলটি হতে চলেছে, তা গ্রামের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। সেলিম উদ্দিন আনসারি বলছেন, অনেক দেরিতে হলেও গণমানুষের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আজ। এ কে শাহজাহান বলেছেন, এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা বহুল প্রত্যাশিত ও আকাঙ্খিত। মনজুর আল হক এই প্রত্যাশা পূরণ সাথে থাকার ও সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেকরই মত, এমন উদ্যোগ ভবিষ্যত প্রজন্ম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।
আজিজ আহমদের বড়ভাই এসএম সাইফুর রহমান জানালেন, তাদের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস এই মাইজপাড়ায় একসময় তার দাদা-পরদাদাদের উদ্যোগে মক্তব পরিচালিত হতো। এবার পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে একটি স্কুল করার উদ্যোগ নিতে পারায় তারা গর্বিত।
পরিবারের অপর সদস্য সৈয়দ মোক্তার আহমেদ বললেন, শিক্ষার জন্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। এই স্কুল তাতে নতুন পালক যুক্ত করবে।
আজিজ আহমদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও এখানে ভবিষ্যতে একটি শিক্ষা কমপ্লেক্স গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে তার।
গত ২৮ মে আজিজ আহমদের মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের কুলখানি সম্পন্ন হয় ২ জুন (বুধবার)। ওই দিনই তারা স্কুলটির ভিত্তিস্থাপন করেন এবং নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। জনহীতৈষণায় আজিজ আহমদের মা হোসনে আরা বেগমেরও এলাকায় সুনাম ছিলো।