ভারত-পাকিস্তানকে বাংলাদেশ থেকে শেখার পরামর্শ ব্লুমবার্গের
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, ১ জুন ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ০১:১৬ পিএম, ১ জুন ২০২১ মঙ্গলবার
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতির পথে আছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে বাৎসরিক মাথাপিছু আয়ে এগিয়ে আছে ভারত-পাকিস্তান থেকেও। সে তথ্য ও তুলনা টেনে দক্ষিণ এশিয়ান দেশগুলোকে বাংলাদেশ থেকে শেখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে। সাথে অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে বাংলাদেশের করণীয়গুলোও তুলে ধরা হয়। অপরাজেয় বাংলার পাঠকদের জন্য মিহির শার্মার লেখা 'সাউথ এশিয়া শুড পে অ্যাটেনশন টু ইটস স্ট্যান্ডআউট স্টার' নামক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।
প্রায় অর্ধশত বছর আগে ১৯৭১ সালে অনেক ধনী ও ক্ষমতাবান পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ থেকে জন্ম নেয়া দেশটির অনেক লোক তখন ভারতে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক মারা যায়। আমেরিকার তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিলেন 'তলাবিহীন ঝুড়ি'। আর মানুষের জন্য অর্থ সহায়তায় 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' আয়োজন করেন জর্জ হ্যারিসন ও রবি শঙ্কর।
চলতি মাসে (মে) বাংলাদেশের মন্ত্রীপরিষদ সচিব ঘোষণা করেন, গত একবছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ৯ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে। আর পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৫৪৩ ডলার। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ৭৫ শতাংশ বেশি ধনী ছিল আর বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। এক পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ অনুমান করে বলেছেন ২০৩০ সালে বাংলাদেশ থেকে সাহায্য নিতে হতে পারে পাকিস্তানের।
অন্যদিকে নিজেদের দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করা ভারতকেও স্বীকার করে নিতে হবে তারা বাংলাদেশ থেকে গরিব। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার।
ভারত বাংলাদেশের এমন সাফল্য স্বীকার করবে তা বিশ্বাস করতে যাবেন না। কেননা এখনও ভারতের ডানপন্থী নেতারা এখনও নিশ্চিত বাংলাদেশ এত নিঃস্ব যে সেখান থেকে ভারত পালিয়ে আসছে মানুষ। অথচ বাস্তবে ভারতের অনেক রাজ্য থেকে বাংলাদেশ বেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ঘটনা এমনভাবে তুলে ধরছেন যেভাবে কানাডা থেকে একসময় মিসিসিপি যাওয়া হতো।
সম্ভব এটাই জিডিপি পরিসংখ্যান ঘোষণার পর ভারতের সামাজিক মাধ্যমে ক্রোধ প্রকাশ ও সত্য অস্বীকারের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও খুব কমই আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে।
বাংলাদেশের এমন প্রবৃদ্ধি মূলত তিনটি ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলো হলো- রফতানি, সামাজিক অগ্রগতি ও রাজস্ব বিচক্ষণতা। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রফতানি প্রতিবছর বেড়েছে ৮.৬ শতাংশ। যেখানে বৈশ্বিক রফতানি বেড়েছে মাত্র ০.৪ শতাংশ। মূলত পোশাক খাতের পণ্যগুলোই দেশটিকে এমন সুবিধাজনক অবস্থায় রেখেছে।
ভারত ও পাকিস্তানে যেখানে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে সেখানে বাংলাদেশে উল্টো বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ তার জিডিপির তুলনা ঋণ রেখেছে ৩০-৪০ শতাংশে। যেখানো করোনাকালে ভারত-পাকিস্তানকে জিডিপির ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ করতে হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷
তবে দেশটির অর্থনৈতিক সাফল্য তাদের জন্য কিছু সমস্যাও তৈরি করছে। এতদিন স্বল্পোন্নত দেশ থাকায় বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়ে লাভবান হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র যেমন দিয়ে আসছে জেনারাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি)। ২০২৬ সালের পর এমন সুবিধাগুলো হাতছাড়া হতে পারে বাংলাদেশের।
অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে এমন সুবিধাগুলিও পরিবর্তিত হবে। ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশকেও পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য রফতানি খাত বাড়াতে হবে। যা বাংলাদেশকে বড় পরীক্ষায় ফেলবে।
পরবর্তী দশকের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এমন কৌশল দরকার যা অর্থনৈতিক রুপান্তরকে সংহত করবে। তারমধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হবে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করে উন্নত বিশ্বের বাজারে রফতানি অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মতে, দক্ষিণ-পূব এশিয় গুলোর সঙ্গে এফটিএ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে তবে এখনও অনেক পথ বাকি আছে।
এ ক্ষেত্রে আবারও ভিয়েতনামকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বাংলাদেশের। কেননা দেশটি চীন কেন্দ্রিক আঞ্চলিক অংশীদার হয়েও ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্যের ধরন পরিবর্তন অবশ্য সহজ হবে না। তাই এখন থেকে প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। তারজন্য ঢাকাকে অবশ্যই তার দরদাম করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখন পর্যন্ত দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এমন বিশেষ কোন ব্যক্তি নেই যিনি বিষয়গুলো দেখবেন।
এতকিছু সত্ত্বেও গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ দেখিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বাজি ধরা কতটা বোকামি। ১৯৭১ সালে যে সাফল্য ছিল প্রত্যাশারও বাইরে, ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যা ও অন্যতম জনসংখ্যা ঘনত্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীল সাফল্যধারী।