‘হিট স্ট্রেসে’ ফসলের ক্ষতি, খাদ্য ঝুঁকির শঙ্কায় দেশ
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ২৮ মে ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ০৯:০৬ পিএম, ২৮ মে ২০২১ শুক্রবার
হিট স্ট্রেসে উচ্চ তাপমাত্রা, স্বল্প বৃষ্টিপাত ও স্বল্প আদ্রতার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চলতি বসন্তে দেশের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন এই ঘটনা খাদ্র সরবরাহে হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিআরআরআই) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসের প্রথম দুই দিনে দেশের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ৩৬ জেলার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে অন্যান্য বছর এপ্রিলে দেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ক্ষতি হওয়া ফসলগুলো মধ্যে ভুট্টা, চিনাবাদাম এবং কলাসহ অন্যান্য ফসল থাকলেও রয়টার্সকে দেয়া কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, দেশে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ফসলের বেশিরভাগই ছিল ধান। যা দেশের প্রধান খাদ্য।
তথ্য অনুসারে দুই দিনে ব্যপক তাপমাত্রায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল হয় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কৃষক সংখ্যা ৩ লাখ। আর আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে খরা, বন্যা ও ঝড়সহ চরম আবহাওয়ার সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু বিআরআরআই ২০১২ সালে পরিসংখ্যান রাখার পর থেকে এবারই সবচেয়ে বাজে অবস্থা গেছে।
বিআরআরআই এর এনটোলজি বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘হিট স্ট্রেস’ বা উষ্ণ চাপ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য মোটামুটি নতুন এক সমস্যা। এর আগে কখনও এই সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি। এপ্রিলে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছিলো আর বৃষ্টিও হয়নি। তাই বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় এমন হিট স্ট্রেস এর সম্মুখিন হতে হয়েছে।
খাদ্য সুরক্ষায় হুমকি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রমিজ উদ্দিন রয়টার্সকে বলেন, ফসলের উপর তাপের প্রভাবের বিষয়টি সরাসরি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে জড়িত। আর উচ্চ তাপমাত্রা সবসময় ধান উৎপাদনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এপ্রিল মাসে ধানের গাছগুলো স্ব-পরাগায়ন করে। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এবার তাদের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র বাধাগ্রস্থ হয়েছে। এ পর্যায় উচ্চ তাপমাত্রা গাছের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি জানান।
নেত্রকোনার বল্লভপুর হাওরে এসময় বাৎসরিক ধান উৎসব হয়। কিন্তু এবার কৃষকদের মুখে সে হাসি নেই। সবার মুখে কেবল ফসল ধ্বংসের আলোচনা।
সে গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, আমার ষাট বছরের জীবনের এমন গরম কখনও দেখিনি। উচ্চ তাপমাত্রায় আমার চার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি ধান চাষের জন্য ঋণ নিয়েছি এখন তা কীভাবে শোধ করবো? কীভাবে সারাবছর সংসার চালাবো? চোখের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এমন অবস্থায় বিশেষ হুশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলছেন, এমন উচ্চ তাপমাত্র ও হিট স্ট্রেস চলমান থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্র সংকট দেখা দিতে পারে।
জানিসংঘের বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যার অর্থ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছেন না।
রাজধানীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক সলিমুল হক বলেন, হিট স্ট্রেসের বিষয়কে আমাদের আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তিনি ভবিষ্যতবাণী করে বলেন এমন অবস্থা চলমান থাকলে চলতি বছরেই ধান উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে যাবে।
তাপ সহনশীল ধানের জাত
সলিমুল হক ও অন্যান্য কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংকট মোকাবেলায় ধানের ফসলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ হয়েছে কিনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাপের প্রভাব কমাতে কৃষকদের আরও বেশি তাপ সহনশীল ধানের জাত রোপনে উৎসাহ দিতে হবে।
বিআরআরআই এর উদ্ভিদ ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ইন্সটিটিউট বর্তমানে নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে যা প্রচন্ড তাপেও ঠিক থাকে। আর প্রাথমিক ফলাফল বেশ আশা দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন জাতটি ভালো এবং খুব দ্রুত ফলন আসে। নতুন জাতের ধানটি দিনে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সহ্য করতে সক্ষম। হিট স্ট্রেস আমাদের প্রভাবিত করতে পারে। তবে আমরা বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করছি।