শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আরজেডি কে নিয়ে বিহারে ফিরছে কংগ্রেস?

পলাশ মাহবুব

১৬:৩৪, ৮ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৭:১৮, ৮ নভেম্বর ২০২০

৯১৫

আরজেডি কে নিয়ে বিহারে ফিরছে কংগ্রেস?

ভোট শুরুর আগে আগে যে ক’টি সমীক্ষা বা জরিপ হয়েছে তার প্রতিটিতে এগিয়ে রাখা হয়েছিল বিজেপি-জেডিইউ’র এনডিএ জোটকে। কিছু কিছু সমীক্ষায় তো তাদের একচেটিয়া জয় দেখানো হয়। অর্থাৎ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমারই আবার ফিরছেন বিহারের কুর্সিতে।

কিন্তু তিন দফায় বিহারের ভোট পর্ব যত পার হয়েছে ততই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কংগ্রেস-আরজেডি-বাম মহাজোটের সম্ভাবনা। অবশ্য নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই সেই আভাস মিলতে শুরু করেছিল। কারণ মহাজোটের মূখ্যমন্ত্রী প্রার্থী আরজেডি’র তেজস্বী যাদবের সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভীড় নীতিশ তথা এনডিএ জোটের কপালে ভাঁজ ফেলে। তিন পর্বের ভোট শেষ হওয়ার পরে ভোট পরবর্তী জরিপ যা বলছে তাতে বোঝা যাচ্ছে তেজস্বীকে নিয়ে বিহারের ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের মাথাব্যথা ভুল ছিল না।

তিন পর্বের ভোট হয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েকটি সমীক্ষা হয়েছে, যার সবগুলোতেই কংগ্রেস-আরজেডি-বাম মহাজোটের বিজয় দেখানো হচ্ছে। কোথাও ছোট ব্যবধানে কোথাও আবার সেই ব্যবধান বেশ বড়। আর ভারতের নির্বাচনী ময়দানে যাদের জরিপকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয় সেই এক্সেস মাই ইন্ডিয়া-ইন্ডিয়া টুডের জরিপেও মহাজোটের পরিষ্কার বিজয় দেখানো হচ্ছে। এই জরিপ বলছে ২৪৩ আসনের বিহারে মহাজোট সর্বনিম্ন ১৩৯ এবং সর্বোচ্চ ১৬১ আসন পেতে পারে। বিহার বিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ট সংখ্যা ১২২। মজার বিষয় হচ্ছে ভারতের টাইমস নাউ টিভি চ্যানেল বিজেপি ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। তারাও তাদের জরিপে মহাজোটের বিজয় দেখাতে বাধ্য হচ্ছে।

যদিও বিজেপি’র মুখপাত্ররা দাবি করেছেন, ১০ নভেম্বর ভোট গণনা শুরু হলে এসব জরিপ ধোপে টিকবে না। বদলে যাবে চিত্র। 
একই বক্তব্য অবশ্য কংগ্রেসের তরফ থেকেও আসছে। তারাও বলছে, চিত্র অবশ্যই বদলাবে। জরিপ যা বলছে তার চেয়েও বড় ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে মহাজোট। বিহারে ভোট সুনামী হবে।

এনডিএ জোটের সম্ভাব্য পরাজয়ের অবশ্য বেশ কিছু কারণ আছে। বিহার জুড়ে বেকারত্ব, অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় বিহারের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি, করোনার লকডাউনের সময় বিভিন্ন রাজ্যে বিহারের শ্রমিকদের আটকে পড়া এবং বিহারে ফিরতে নানা বিড়ম্বনার শিকার, কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া এবং নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে না রাখা অন্যতম। এর সঙ্গে যোগ হয় এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক দল এলজেপি’র (লোক জনশক্তি পার্টি) জোট ছেড়ে যাওয়া। নীতিশ কুমারের সঙ্গে বিরোধে জোট ছেড়ে আলাদা নির্বাচন করে এলজেপি। এলজেপি খুব সামান্য সংখ্যক আসনে জিতলেও অধিকাংশ আসনে তারা জেডিইউ’র ভোট নষ্ট করতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিহারের মাটিতে লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি’র একটা নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক আছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে জেলে আছেন। এই বিষয়টি আরজেডি’র প্রতি ভোটারদের বাড়তি সহানুভূতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া লালুর অবর্তমানে তার ছেলে তেজস্বী যাদব তরুণ ভোটারদের নিজের পক্ষে টানতে সক্ষম হয়েছেন। নীতিশ কুমারের ১৫ বছরের শাসনের ব্যর্থতা ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তেজস্বী। তাছাড়া ‘ক্রাউড পুলার’হিসেবেও তেজস্বী নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন এবারের নির্বাচনে। 
অন্যদিকে গা ছাড়া কংগ্রেসও বেশ সতর্ক ছিল এই নির্বাচন নিয়ে। গেলো বিহার নির্বাচনে ৪৫ আসনে লড়াই করা কংগ্রেস এবার ৭০ আসন আদায় করে নিয়েছে। তাছাড়া কংগ্রেস-আরজেডি’র বোঝাপড়া বহু বছরের পুরনো।
আর কংগ্রেস-আরজেডি নিজেদের জোটে বামপন্থী দলগুলোকে একা নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক নিজেদের দিকে টানতে সক্ষম হয়েছেন। যা ভোটের হিসাব-নিকাশ বদলাতে ভূমিকা রেখেছে।

আরও পড়ুন: বিহারে বড় পরীক্ষা

বিহার হাতছাড়া হলে বেশ ভালো ধাক্কাই খাবে ক্ষমতাসীন বিজেপি। প্রশ্নের মুখে পরবে মোদি ম্যাজিকও। কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলেও একের পর এক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে রাজ্য। সামনে যেসব রাজ্যে নির্বাচন আছে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালা- এই দুই রাজ্যেও বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

অন্যদিকে নিজেরা সরাসরি ক্ষমতায় আসতে না পারলেও মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতার শরিক হয়েছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশে উপ নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা আছে তাদের। এবার বিহারের পালা। প্রশ্নের মুখে থাকা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব কী তবে এবার হালে পানি পাবে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য কংগ্রেস-আরজেডি জোটকে সতর্ক থাকতেই বলছেন। বিহারের ভোটের ফলাফলে কোনো পক্ষের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা না মিললে এই দুই দল থেকে এমএলএ ভাগানোর চেষ্টা করবে বিজেপি। কারণ এই কাজে তারা বরাবরই পারদর্শী। তাই এক্ষেত্রে বেশ সতর্ক দৃষ্টিই রাখতে হবে মহাজোটকে। শুধু জিতলেই হবেনা, নিজেদের বিজয়ী সদস্যকে ধরেও রাখতে হবে।

 

পলাশ মাহবুব: নির্বাহী সম্পাদক, অপরাজেয় বাংলা।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank