বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপ্নের আকাশ পরিবহন
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপ্নের আকাশ পরিবহন
বাংলাদেশে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবলেই বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে যে সকল নীতি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তারমধ্যে এভিয়েশন অন্যতম। দেশ গঠন মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের মাত্র আঠারো দিনের মাথায় ৪ জানুয়ারি ১৯৭২ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠন করেন। ঠিক এক মাস পরেই বিমান বাংলাদেশ ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। যার ধারাবাহিকতায় বিমান বাংলাদেশসহ বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো বাংলার আকাশে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। উন্মুক্ত আকাশে জাতীয় বিমান সংস্থার সাথে বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলো দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই মূদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। একে অপরের প্রতিবিম্বও বলা চলা। স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময় পান দেশ গঠনে। শুন্য থেকে যার যাত্রা, সেই যাত্রায় এই স্বল্প সময়েই শত বছর সামনে পথ চলার ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করছে দেশ অথচ এখনো বাংলাদেশ যেসব নীতির ওপর পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই বঙ্গবন্ধুর ঠিক করে দিয়ে যাওয়া। দেশ গঠনে সেই সময়ে ১২৬ নং আদেশ বলে রাষ্ট্রপতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধুর কাছে বিমান পরিবহন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তেমনি বিমানবন্দর নির্মাণও ছিলো অনেক বেশী অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ গঠনের সময় একমাত্র আন্তর্জতিক বিমানবন্দর ছিলো তেজগাঁও বিমানবন্দরটি। যে বিমানবন্দরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবুর রহমান ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ পাকিস্তান কারগার থেকে মুক্তিলাভের পর লন্ডন, দিল্লি হয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কমেট বিমানে চড়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত নিজ দেশের তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামেন।
যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকার অদূরে কুর্মিটোলায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মানের কাজ চলছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি সবসময় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে দেখতে পেতেন। এই বাংলাদেশ বির্নিমানে তিনি দেশের ড্রয়িং রুম বিমানবন্দরকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। যুদ্ধে বিধ্বস্ত কুর্মিটোলা বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পূনর্গঠনে হাত দেন।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ড ও পচাত্তরের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার জেল হত্যার পর বাংলাদেশের সকল উন্নয়নমূলক কাজের ধীরগতি লক্ষনীয় পরযায়ে ছিলো। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পর ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একাংশের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৮৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরন করে পুনরায় উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের ইসলাম ধর্মের প্রচারক আধাত্মিক নেতা বড় আউলিয়া হযরত শাহজালল (রাঃ) এর নামে বিমানবন্দরের নামকরন করেন। এখন দেশের প্রধান বিমানবন্দরই হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আজ দেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে রয়েছে ২১টি আধুনিক উড়োজাহাজ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে পরিপূর্ণতা দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক নতুন নতুন উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে চলেছেন। একটি শক্তিশালী জাতীয় বিমান সংস্থা গঠন প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রচেষ্ঠায় কাজ করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু এদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত দেয়ার জন্য অগ্রাধিকার হিসেবে বিমানবন্দর পূণর্গঠনে প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুকায়নের জন্য তৃতীয় টার্মিনাল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। স্বাধীনতার পর দেশে এটি একটি অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প যার মাধ্যমে দেশের আকাশ পরিবহনের অবকাঠামো অনেক বেশী শক্তিশালী রূপ ধারন করবে বলেই সকল স্তরের জনগণ মনে করে। শুধু ঢাকা নয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে বর্তমানে চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোদমে চলছে। খুব শিগগিরই কক্সবাজার বিমানবন্দর ও সৈয়দপর বিমানবন্দর দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত হতে চলেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরসমূহ আধুনিকায়নের জন্য একযোগে কাজ চলছে।
দেশের মানুষের আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সুদৃঢ় করার জন্য জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি বিমান পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ব্যবসাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার বাংলার আকাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু দেশে নয় বিদেশের আকাশে অন্যান্য বিদেশী বিমানসংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে।
বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যৎ ভাবনায় ছিলো পাহাড়, সমতল, সমূদ্র আর সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদনদী আর ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো একসময় হয়ে উঠবে টূরিষ্টদের জন্য অভয়ারণ্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিমান চলাচলের সাথে পরযটনকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ পরযটন কর্পোরেশন গঠন করেন।
আজ জাতির পিতার স্বপ্নে বাংলাদেশে আকাশ পরিবহনে যে শক্ত ভিত দেখতে পাচ্ছি, একটি সুসংগঠিত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরযটন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে আকাশ পরিবহনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সকল শিল্পের গতিশীলতা বজায় রাখতে এভিয়েশকে এগিয়ে নিতে হবে, যার কোনো বিকল্প নাই।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার দিন শেষ, চার উপায়ে মধ্য আয়ের দেশ