শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মানবিক আবেদন: ক্যান্সার হারলে, সাইমুম জিতবে

রাজীব নন্দী, শিক্ষক ও গবেষক

১৩:৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৩:৫৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

২৩৮৬

মানবিক আবেদন: ক্যান্সার হারলে, সাইমুম জিতবে

প্রতিদিন হাজারো খবরের ভিড়ে পাত্তা না পাওয়া একটি খবর নিয়ে লিখতে বসেছি। ভীষণ দায়বোধ থেকে, না লিখে থাকতে না পেরে এবং বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার নিয়ে এই লেখা। লেখাটি লিখছি তখন, যখন ব্যক্তি ও সমাজের মননে গভীর থাবার ‘ক্ষত’ বসিয়ে দিয়েছে সর্বনাশা করোনা। জীবনানন্দের ভাষা ধার করে বলি- ‘পৃথিবীর গভীরতম অসুখ এখন’। বিশ্ব যখন সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছে অদৃশ্য এক অণুজীবের বিরুদ্ধে, তখন আমি লিখতে বসেছি একজন ব্যক্তির লড়াইয়ের কথা। কেমন সে লড়াই? কে সে ব্যক্তি? কেন বলেছি হাহাকার? কেন ঠেকেছে দায়? কেনই বা ‘না লিখে’ থাকতে পারলাম না?

নাম- সাইমুম ইফতেখার। শ্যামলা বরণ ছিপছিপে তরুণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। শাটলট্রেন, ঝুপড়ি, ক্লাসরুমে ক্লান্তিহীন ‍বিচরণ তাঁর। কখনো পাঞ্জাবি, কখনো টিশার্টে দেখি তাঁকে। সিনেমা, কবিতা, গল্প, রাজনীতি সবকিছুতেই জবরদস্ত বোঝাপড়া। চোস্ত হিন্দি- ইংরেজি- বাংলা- উর্দু মিলিয়ে তুবড়ি ছোটানো আড্ডার মধ্যমণি। নিজ বিভাগের পড়ালেখায় তো বটেই, সমকালীন সমাজভাবনায়ও বেশ সপ্রতিভ এক শিক্ষার্থী। এত সব গুণে সাইমুমকে যেমন আলাদা করা যায়, তেমনি প্রথম দর্শনেই সাইমুমকে দেখে ধাক্কা খেতে হয়। একটা ক্রাচে ভর দেয়া কিছুটা খুড়িয়ে চলা মানুষ সে। গতি রোধ করেছে হাতের ক্রাচ, তবুও সে ‘পথ চলাতেই আনন্দ’ খুঁজে পায়। সাইমুম ৫ বছর ধরে হাঁটুর ক্যান্সার নিয়ে লড়ছে। জিতে এসেছিলো প্রায়, কিন্তু বিধি বাম। করোনাকালে মরণব্যাধি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে সে। ঠিক এই মুহূর্তে ভারতের চেন্নাইতে বসে ক্যালেন্ডারে তাকিয়ে দেখছে- আয়ুরেখা ক্রমেই যেন ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। শিক্ষাজীবনে সর্বাত্মক এগিয়ে থাকা সাইমুমকেই কি না এই করোনাকালে পিছিয়ে পড়তে হলো?

২০১৬ সালে তাঁর প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে। হাঁটুতে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম অঙ্গ দ্বারা সচল হয় সে। ক্রাচে ভর দিয়ে যুদ্ধটা জারি রেখেছিলো সে। শিক্ষাবর্ষের ফলাফলে তুমুল মেধার সাক্ষর রেখেও তাকে বছরে দুই বার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয়েছে ভারতে। দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইতে দিনের পর দিন পড়ে থেকে তাকে চিকিৎসা করাতে হয়। এসব খবর বিভাগের কোর্স শিক্ষক হিসেবে অটোমেটিক পেতাম। কিন্তু হঠাৎ ফেসবুক জুড়ে মাতম উঠলো নতুন এক দুঃসংবাদে। সাইমুমের ফুসফুসে নতুন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। করোনা সংক্রমণ, ভারতে লকডাউন এবং ভিসা জটিলতার কারণে তাঁর চিকিৎসাও যথাসময়ে শুরু করা যায়নি। বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাতম তুলে ‘সাইমুমকে বাঁচাতে’ জোট বেধে নামলো। নয়া রোগের বিশ্বায়নে শারীরিক দূরত্বের নিউ নর্মাল যোগাযোগের ভরসা ‘ফেসবুক’। টাইমলাইনে দেখি সাইমুমকে বাঁচাতে তীব্রবেগে জলধারার মতো আবেগ মথিত সব বার্তা। সাইমুম চেন্নাইতে, আক্ষরিক অর্থেই জীবন-মরণের মাঝে। কারণ, তাঁর দুটি বড় সার্জারি প্রয়োজন। একটি ফুসফুসে, আরেকটি হাঁটুতে। একটি ফুসফুস আর একটি পা নিয়েও যদি বাকি জীবনটা কাটাতে পারে, সে ভরসায় তহবিলের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। টাকার অঙ্কটা বেশ আতঙ্কজনক। দুর্মূল্যের বাজারে তা কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা! হ্যাঁ, এখানেই এই লেখার পাঠক হয়তো হতাশ হবেন, আতঙ্কিত হবেন কিংবা টাকার বিরাট অঙ্ককে নিজের ক্ষুদ্র সামর্থের বিপরীতে দেখে আত্মবিশ্বাসহীন হবেন। কিন্তু না, আশা আছে আমাদের। এই লেখা যখন লিখছি তখন অবাক হয়ে দেখছি তাঁর চিকিৎসার জন্য পৌনে ৫ লাখ টাকা উঠে এসেছে হুড়মুড় করে এই কদিনে। দূর দ্রাঘিমায় বসে আমাদের এক সহকর্মীর আহ্বানে ফেসবুক পেইজে মাত্র ১১ দিনের মাথায় অনেকেই অংশ নিয়েছেন। তাতে অংশ নিয়েছে আমাদের বিভাগ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদসহ নানান স্তরের মানুষ। আমরা চেষ্টা করছি সাইমুমকে সাহস ও ভরসা জোগাতে। যদিও সাইমুমকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার ভেতরে একটা বোবা যুদ্ধ জারি রেখেছে সে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান পরিসরে সাইমুমকে দেখি সপ্রতিভ, উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। সেই সাইমুমকে আজ ‘আশা-ভরসা’র বদলে ‘উৎকণ্ঠা’র খবরের শিরোনাম হতে হলো! যুদ্ধটা সাইমুম একা অনেকদূর করেছে। আজ সময় এসেছে সর্বাত্মক ওর পাশে দাঁড়ানোর। কারণ, একজন মেধাবী ও মানবিকবোধ সম্পন্ন শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোতে গৌরব আছে, তাঁর যুদ্ধে সহযোদ্ধা হওয়ার মধ্যে সময়ের ইতিকর্তব্য পালনের দায় আছে। আসুন, সেসব অনুভব করি। যদিও আমরা কেউ কোথাও কোন দস্থখত দেইনি যে দাঁড়াতেই হবে, সাইমুম বা সাইমুমের মতো অনেক প্রতিভাবানদের পাশে না থাকলে আমার-আপনার মৃত্যুদণ্ড হবারও কোন সম্ভাবনা নাই। কিন্তু কেবলমাত্র টাকার অভাবে একটি তাজা প্রাণকে অকালে এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হবে, এটা ভাবতেই মন বাধ সাধছে। হ্যাঁ, টাকার অঙ্কে কিছুটা অসম যুদ্ধতো বটেই, কিন্তু কথায় আছে না- মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য?

জীবনকে যাপন করতে গিয়ে প্রতিদিন নানা রকম ভাবনা, অনুভুতি, প্রশ্ন তাড়িত হই আমরা। সেই অনুভূতির বাটোয়ারা করি শিক্ষার্থীদের সাথে। কোন কোন শিক্ষার্থীর মধ্যে দেখি সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা প্রতিভা। কারো মধ্যে দেখি অমিত সম্ভাবনা। এরই মধ্যে কাউকে ‘ঝরা পালক’ হতে হলে অভিভাবক হিসেবে চাপ বোধ করি। আমিও ভাবছি, এই বোঝা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। আমি সর্বস্তরের কাছে এই বোঝা সরানোর আহ্বান জানাই। আসুন আরো একবার প্রমাণ করি, মানবতা জিতলে ক্যান্সারকে হেরে যাবে। সাইমুম কখনো নিজের মত প্রকাশকে জোর দেয়নি। সে সাহায্য চায়নি, সে আমাদের বিব্রত করেনি। বরং সে ভার অনুভব করবে এসব প্রচারণায়। কিন্তু এই দায়কে অস্বীকার করার কোন রাস্তা নেই। বাস্তবতার নানা ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়ে সে আজ স্বপ্নভঙ্গ বেদনার ভেতর টানাপড়নে দিন গুণছে। সম্ভাবনার সবটুকু নিয়ে সাইমুম আজ ‘জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাও যেনতেনভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নয়। ক্রাচে ভর দিয়ে, নতমুখী ঝুঁকে, আমাদের সবার দিকে পরিচিত হাসিমুখ নিয়ে। সাইমুমের ফুসফুসে তাজা বাতাস দিতে, আসুন সবাই আরেকটু জোরে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিই ২৫ লাখ টাকার অঙ্কটি।

যতটুকু সামর্থ্য তা নিয়ে সাইমুমের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই- বিকাশে জনাব মিজান (সাইমুমের ভাই) 01814439305 এবং আরিফ (সাইমুমের দুলা ভাই) 01730355197। বাংলাদেশে বসে সহযোগিতা করতে ব্যাংক আমানত MD. MIZANUR RAHAMAN এ / সি নং: 181 2763 7001 স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের বাইরে থেকে টাকা পাঠানোর জন্য দয়া করে সাহায্য করুন MD. MIZANUR RAHAMAN এ / সি নং: 181 2763 7001 রাউটিং নং: 215 152 143 স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, চট্টগ্রাম-এ।

লেখক: রাজীব নন্দী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইমেইল: [email protected]

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank