শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও কোনপথে মার্কিন গণতন্ত্র?

মোঃ হাসান তারেক

১১:২৭, ৯ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১১:২৯, ৯ জানুয়ারি ২০২১

২০৪১

ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও কোনপথে মার্কিন গণতন্ত্র?

গত বুধবার (৬ জানুয়ারি), মার্কিন পার্লামেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প  সর্মথকদের হামলায় মার্কিন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য কালিমালিপ্ত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট কারচুপির ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের চেষ্টা চালিয়েছিলেন এই ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে। এই হামলার ফলশ্রুতিতে, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। কিন্তু, মার্কিন গণতন্ত্র যে হুমকির মুখে এবং এবার ক্ষমতা হস্তান্তর যে সহজতর হবে না তা আগেই উঠে এসেছিল ফক্স নিউজ কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে। 

জরিপে অংশগ্রহণকারী রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ৭০% মার্কিন গণতন্ত্র ও ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। দৃশ্যত, ঘটলো কিন্তু তেমনটিই। নজিরবিহীন এক ইতিহাসের জন্ম দিলো ক্যাপিটল ভবনের এই হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ওপর ২০৬ বছর আগেও একবার হামলা চালানো হয়েছিল। তবে, এই হামলা ভিনদেশিরা চালিয়েছিল। সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৮১২ সালে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সেই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে, ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনী ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল।

কিন্তু, এবার যে হামলাটি চালানো হলো তাতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, মার্কিন সাধারণ জনগণ ও ভ্রাতৃপ্রতীম বিশ্বনেতৃবৃন্দ। এই হামলার পরে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে নিজদল ও সারাবিশ্বে। এই হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে টুইটার ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুক তার একাউন্ট বন্ধ করেছে অনির্দিষ্টকালেরর জন্য। 

নির্বাচনের সময় থেকে দৃশ্যমান হয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্মথকদের অগণতান্ত্রিক পন্থায় ভোটের ফলাফল হরণের চেষ্টা। এসময় অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তো বলতে বাধ্যই হয়েছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন গণতন্ত্রে অনগ্রসর দেশগুলো থেকে অগণতান্ত্রিক পন্থা আমদানি করছেন। কার্যত, ঘটলো কিন্তু তেমনটিই।  উগ্রপন্থা, অগণতান্ত্রিক পন্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো ক্যাপিটল হিলের এই হামলার মাধ্যমে।

এই ঘটনার পর, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব আবার জোরালো হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা হস্তান্তরে বাকি রয়েছে আর মাত্র ১১ দিন। এই রকম পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে কথা পাল্টাতে শুরু করে দিয়েছেন। হামলার দিন যেখানে তিনি হামলাকারীদের বাহবা দিয়েছিলেন, সেখানে এবার হামলাকারীদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে কোনও নির্বাচন এত ঘটনাবহুল ছিল না। প্রায় প্রত্যেক প্রার্থী পরাজয়ের পর হাসিমুখেই বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু, ট্রাম্পই একমাত্র ব্যতিক্রম যিনি সবরকম সৌজন্যতার বাইরে থেকেছেন। একমাত্র ট্রাম্পের একগুয়ে মনোভাবের কারণেই আজ আমেরিকার গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্হা প্রশ্নের সম্মুখীন হলো- যা কল্পনাতীত। 

একের পর এক, মানুষ তার প্রশাসন ছাড়তে শুরু করেছে এই ঘটনার পর।  ইতিমধ্যেই, পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, পরিবহনমন্ত্রী থেকে শুরু করে ট্রাম্পের জাতীয় উপদেষ্টার মত বিশিষ্টজনেরা। তবে, হতাশার পাশাপাশি আশার কথা হচ্ছে, ক্যাপিটল হিল হামলার পর ঘুম ভেঙেছে অনেক মার্কিনীর। অনেক আমেরিকান লোকরঞ্জনবাদী নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথার তুবড়িতে বিভোর হয়ে নির্বাচিত করেছিল, পুরোদস্তুর এই ব্যবসায়ীকে। যিনি আমেরিকাকে গ্রেট না করে, বিব্রত করলো।

সময় এখন মার্কিনীদের, আবার নিজেদেরকে নিয়ে নতুন করে ভাবার, নতুন করে জানার। সময় এখন আবার নতুন করে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা- চেতনা করার। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব করার একটি বড় বিষয় হচ্ছে, সে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। হামলার বড় সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তাদের প্রতিক্রিয়ায় জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হবে দল মত নির্বিশেষে সকলের।  

আশা থাকবে, মার্কিন গণতন্ত্র আবার তার স্বমহিমায় ফিরে আসবে জো বাইডেন প্রশাসনের হাত ধরে। 

মোঃ হাসান তারেক: প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ডক্টর মালিকা কলেজ, ঢাকা। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank