মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ || ১০ পৌষ ১৪৩১ || ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ ও সমাধানের উপায়

মোঃ হাসান তারেক

১২:১৪, ১৮ এপ্রিল ২০২২

৫০০২

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ ও সমাধানের উপায়

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কখনও এতোটা অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় পড়েনি শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার সর্বত্র এখন হাহাকার। খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানি তেলের সন্ধানে ছুটছে সাধারণ মানুষ। জ্বালানি আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে পুরো অর্থব্যবস্থা। দিনের অর্ধেক বা তার বেশি সময় বিদ্যুতবিহীন কাটাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এরকম একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ” গো গোটা গো ” শ্লোগানে মুখরিত কওে তুলেছে পথঘাট। গোটাবয়ে সরকারের পতনের মাধ্যমে তারা চাইছেন শ্রীলঙ্কার রাজনীতি, অর্থনীতিতে গতানুগতিক পরিবর্তন আনতে। শ্রীলঙ্কার এই বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলেছে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে। সকলের মনে একটি প্রশ্ন অর্থনীতির বিভিন মানদন্ডে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কেন এত ক্ষতির সম্মুখীন হলো? শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির আজকের এই করুন পরিস্থিতির পিছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে।

প্রথমত, যে কারণটি শ্রীলঙ্কার এই দুরাবস্থার জন্য দায়ী তা হলো, বর্তমান ও পূর্বতন সরকার গুলোর কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটি ওয়াকিং পেপারে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল যে, সরকারের কিছু অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে শ্রীলঙ্কায় দ্বৈত ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। একটি দেশে তখন দ্বৈত ঘাটতি দেখা দেয় যখন দেশটির জাতীয় ব্যয় তার জাতীয় আয়ের চেয়ে বেশি হয়। পাশাপাশি, দেশটির বাণিজ্যিক পণ্য ও সেবার উৎপাদন পর্যাপ্ত না হয়। শ্রীলঙ্কায় এই দ্বৈত ঘাটতির দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যয়গুলো অপ্রয়োজনীয় জায়গায় হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে,পাঁচ হাজার কোটি ডলার। এই ঋণের ৪৭ শতাংশ সার্বভৌম বন্ড, এডিবি থেকে ১৪.৬ শতাংশ, জাপানের কাছ থেকে ১১ শতাংশ, চীনের কাছ থেকে ১০ শতাংশ। পক্ষান্তরে, রিজার্ভে আছে ১৯৩ কোটি ডলারের মত।

দ্বিতীয়ত, মাহেন্দ্র রাজাপাকসে সরকারের অবিবেচকের ন্যায় কর হ্রাসের সিদ্ধান্ত। ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় রাজা পাকসে কর হ্রাসের প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন। করোনা অতিমারি শুরুর কয়েক মাস পূর্বেই তিনি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তার এই সিদ্ধান্তে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগণ ও দেশ।
 
তৃতীয়ত, ব্যালেন্স অফ পেমেন্টর ঘাটতি মোকাবিলার জন্য বার বার সার্বভৈৗম বন্ড ছাড়া। শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ২০০৫,২০০৭, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ সালে এই সার্বভৌম বন্ড বাজাওে ছাড়ে। যদিও বলা হচ্ছিল যে, এই সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার কারণে শ্রীলঙ্কা লাভবান হচ্ছে, কার্যত কিন্তু তা নয়। একটু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায় যে, ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার ঋণের বৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশ। সেখানে ২০১১ সালে এসে বাহ্যিক ঋণ বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ। অতএব, সাময়িকভাবে সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে নিস্তার পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। 

চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার বড় জোগান দিয়ে থাকে পর্যটন ও রেমিটেন্স খাত। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কার এই দুই খাত। 

পঞ্চমত, কৃষিতে অর্গানিক চাষের সূত্রপাত। কৃষি জমিতে কীটনাশক বা সার ব্যবহার বন্ধ করার কারণে কমে গেছে উৎপাদন। 

আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, পরিবারতন্ত্র বা স্বজনপ্রীতি। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্র ক্ষমতায় দীর্ঘদিন ধওে রাজা পাকসে পরিবার ক্ষমতায় থাকার কারণে সবখানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিস্তারের কারণে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রসÍ হয়েছে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। 

এখন যে কারোর মনে এই প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক, কিভাবে বা কী উপায়ে শ্রীলঙ্কা পরিত্রাণ পেতে পারে এই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য শ্রীলঙ্কাকে তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। অর্থনীতি পুর্নগঠনের জন্য শ্রীলঙ্কাকে দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থ সহায়তাকারী সংস্থা যেমন-আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও সহায়তা নিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধি কওে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করতে হবে।

মোঃ হাসান তারেক: শিক্ষক ও কলামিস্ট।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank