প্রাতিষ্ঠানিক শক্ত ভিত গড়ে উঠুক জনসংযোগ পেশার
প্রাতিষ্ঠানিক শক্ত ভিত গড়ে উঠুক জনসংযোগ পেশার
সারাবিশ্ব আজ এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার চূড়ান্তে। সব কিছুর কেন্দ্রেই থাকছে প্রচারণা। আপনার মাধ্যমে যেমন প্রচারণা হয়ে থাকে তেমনি অন্যের মাধ্যমেও আপনার প্রচারণা হয়ে থাকে। সব প্রচারনা পজিটিভ হয়ে থাকে ব্যাপারটা তেমন না। আজকাল সোশাল মিডিয়ার যুগে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সকলেই কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। সোশাল মিডিয়া আজ অনেকটা প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। সোশাল মিডিয়া যেকোনো খবরের মাধ্যম হতে পারে কিন্তু ধ্রুব সত্য ভাবার কোনো কারণ নেই। খবরের সূত্র ধরে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে প্রচারণা হতে পারে।
আজ সব ক্ষেত্রেই অনলাইন মিডিয়ার আধিপত্য দেখতে পাচ্ছি। যেকোনো ঘটনা ঘটার ক্ষণিকের মধ্যেই খবরের ব্যাপ্তি ঘটতে থাকে অনলাইন আর সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে। আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ এর প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় ভুল তথ্য চলে আসতে পারে জনসাধারণের কাছে। যা ইলেকট্রনিক কিংবা অনলাইন মিডিয়ার কাছে জনগণ প্রত্যাশা করে না।
যেকোনো ঘটনার তথ্য উপাত্ত পেতে হলে যে মাধ্যমটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, তা হচ্ছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র তথা জনসংযোগ কর্মকর্তা। আজ সারাবিশ্বে সাংবাদিকরা তাদের কলমের মাধ্যমে দেশের তথা বিশ্বের সরকারগুলোর পাশাপাশি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সাংবাদিকদের কলমের শক্তিকে আরো বেগবান করতে সারাবিশ্বের জনসংযোগে যারা কাজ করেন তাদের ভূমিকাই মূখ্য। কোনো কিছুই ওয়ানওয়ে ভাবার কোনো কারন নেই। জনসংযোগ পেশা আর সাবাদিকতা দু’জনেই দু’জনার উপর নির্ভরশীল।
একটি ভালো সংবাদ একজন সাংবাদিককে পরিচিতি এনে দেয়, খ্যাতি এনে দেয়, পুরস্কারে ভূষিত করে। আর ভালো সংবাদটি পরিবেশনের জন্য যাদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হয়ে উঠে না, তারাই হচ্ছে জনসংযোগকর্মী কিংবা জনসংযোগবিদ। সেই সব জনসংযোগবিদদের কি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আছে? আমি সমসাময়িককালে দেখার সুযোগ পাইনি। প্রতিষ্ঠানের যত পজিটিভ কাজ আছে, সব কাজের প্রচারণার অগ্রভাগে থাকতে হয় জনসংযোগকর্মীদের। তেমনি প্রতিষ্ঠানের যত নেগেটিভ প্রচারণা থাকে তার সমাধানেও এগিয়ে থাকতে হয় জনসংযোগকর্মীদের।
যাদের জনসংযোগ পেশার কাজের সম্যক ধারণা না থাকে, তাদের অভিব্যক্তি সকল পজিটিভ সংবাদ পরিবেশন হয়ে যায় অটোমেটিক আর নেগেটিভ সংবাদ পরিবেশন হয় জনসংযোগকর্মীর দুর্বলতার কারনে। যা বাস্তবতার সাথে কোন ভাবেই যুক্তিই নয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৪২ বছর আগে গড়ে উঠা বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি। সেইভাবে প্রাতিষ্ঠিানিক ভিত তৈরী করতে পারেনি। গত ১১ ডিসেম্বর হয়ে গেলো বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। নতুন কমিটির আবির্ভাব ঘটেছে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনসংযোগবিদদের নিয়ে একটি কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়েছে। যেখানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতালব্ধ জনসংযোগবিদদের অন্তর্ভূক্তি রয়েছে। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হয়তো ফারাক থাকতে পারে কিন্তু নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা অনেক। একটি প্রত্যাশা সকলের- প্রাতিষ্ঠানিক ভিত তৈরী করতে পারবে বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির নব কমিটি।
প্রত্যেক বছর বিভিন্ন সেক্টরের জনসংযোগবিদদের উৎসাহ দিতে স্বীকৃতি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাতে নতুন নতুন জনসংযোগবিদদের আবির্ভাব ঘটবে। মেধাবী আর মাল্টি টেলেন্টেড কর্মী পাওয়ার সুযোগ রয়েছে জনসংযোগে।
২৪ ঘন্টায় একদিন। মাঝে মাঝে মনে হয় দিনটি যদি ৩৬ ঘন্টায় হতো তাহলে ভালোই হতো। জনসংযোগ পেশাটাই ধৈর্য্যের টেস্ট ম্যাচ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমহারে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। আর যদি কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ পেশা হয়ে থাকে তবে তো আপনাকে যেকোনো সময়ে যেকোনো বিষয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতে হয় একজন জনসংযোগবিদকে। খুব সচেতনতার সাথে বক্তব্য রাখতে হয়। ভুল বক্তব্য প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। কঠিন সময়ে সাবলিলভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারাই একজন জনসংযোগবিদ যে অন্যদের থেকে আলাদা তাই প্রকাশ করা।
একজন জনসংযোগ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সবসময়ই আছে। তবে ভালো সময়ের চেয়ে খারাপ সময়ে জনসংযোগ কর্মীকে খুব বেশি প্রয়োজন বলেই মনে হয়। প্রতিষ্ঠানের যেকোনো খারাপ সময়ে একজন জনসংযোগ কর্মী তার কমিউনিকেশন দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ভালো সময়ের দিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে। একজন জনসংযোগবিদ তার সাবলিল উপস্থাপনা দিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে সকল স্তরের নাগরিকদের নিকট সঠিক বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরতে পারেন।
প্রয়োজন থাকলেই সংবাদকর্মীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা আর প্রয়োজন শেষ হলেই সম্পর্ক শেষ এই নীতিতে যারা বিশ্বাস করেন তাদের জন্য জনসংযোগ পেশা নয়। যারা নির্দিষ্ট সময় মেনে জনসংযোগ পেশায় কাজ করতে চান তাদের জন্যও এই পেশা খুব বেশি মানানসই হবে না। কারো সাথে পরিচয় হবে প্রফেশনালি কিন্তু সম্পর্ক তৈরি হবে পারসোনালি। যে সম্পর্কটা থাকবে আজীবন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে লাভবান হবে প্রতিষ্ঠান।
শুধুমাত্র এক্সটার্নাল রিলেশন ভালো রাখতে হবে ব্যাপারটা আসলে তা নয়, আপনার ইন্টার্নাল রিলেশনও অনেক ভালো হতে হবে। ইন্টার্নাল রিলেশন যতবেশী শক্তিশালী হবে আপনি জনসংযোগ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠানে আপনার ভূমিকা ততবেশী গ্রহণযোগ্য হবে। আপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো বার্তা খুব সহজেই মিডিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন, যা প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো কর্মীর পক্ষে সম্ভব নয়।
জনসংযোগ কর্মীর কাজ এবং সময়ের কোনো রুটিন মাফিক সীমাবদ্ধতা নেই। সবসময়ই ফ্রি আবার আবার সবসময়ই ব্যস্ত। প্রতি মূহূর্তেই ব্যস্ততার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
মোঃ কামরুল ইসলাম: মহাব্যবস্থাপক, জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স লিমিটেড।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- কেন পড়া উচিত ‘সাতকাহন’