আমরা খেলাকে রাজনীতি আর রাজনীতিকে কি খেলায় পরিণত করলাম?
আমরা খেলাকে রাজনীতি আর রাজনীতিকে কি খেলায় পরিণত করলাম?
রাজীব নন্দী |
পুরো বিশ্ব আমাদের প্রতিবেশী ভারতকে চিনতো ক্রিকেট আর সিনেমা দিয়ে। তামাম দুনিয়ার বুকে ক্রিকেট উন্মাদনার পরাশক্তির নাম ভারত। বলা হয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের নিয়ন্ত্রক এই ভারত। বলিউডি বিনোদন ব্যবসাতেও দেশটি সফল। ক্রিকেট আর বলিউড ব্যবসা ছাড়াও বৈশ্বিক জ্ঞানকাণ্ডে এবং পুঁজিবাজারেও ভারতের অবদান আছে। ভারতীয় জ্ঞানসাধক এবং ব্যবসায়ীরা যথাসম্ভব বিশ্বের বড় বড় জায়গায় নিজ যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন। নানাসময় বৈশ্বিক সংবাদপত্রের ছবিতে ও শিরোনামে ভারতীয়দের উপস্থিতি নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু সব ছাপিয়ে প্রতিবেশী ভারত আজ ভিন্ন শিরোনামে আত্মপ্রকাশ করলো আন্তর্জাতিকতায়। পুরো বিশ্বকে স্থবির ও এলোমেলো করে দেওয়া করোনা ভাইরাস ভারতের অসহায়ত্ব তুলে ধরেছে যে- ‘ভারত নিঃশ্বাস নিতে চায়’!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দু’টি পত্রিকায় ভারতের করোনা সংক্রমণ নিয়ে খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে গত ২৫ ও ২৬শে এপ্রিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস গত ২৫শে এপ্রিল প্রথম পাতায় তার অর্ধপৃষ্ঠাজুড়ে ভারতের করোনাক্রান্ত মৃতদের জ্বলন্ত শশ্মানের ছবি ছাপিয়েছে। শিরোনাম করেছে- As COVID-19 devastates India, deaths go undercounted! সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের করোনাভাইরাস দ্বিতীয় ঢেউ দ্রুত একটি ভয়াবহ সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে, হাসপাতালগুলি অসহনীয়ভাবে পূর্ণ, অক্সিজেন সরবরাহ কম, চিকিৎসকের দেখা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় মরিয়া মরিয়া মানুষ- এবং প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি। পরদিন ২৬শে এপ্রিল ব্রিটিশ দি গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রথম পাতাতেও করোনাআক্রান্ত রোগীদের আহাজারি প্রকাশিত হয়েছে একটি অর্ধপৃষ্ঠাপ্রায় ছবিতে।
এই দু’টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বলেই ভারতে করোনা আক্রান্তের খবরটি বিশ্লেষণযোগ্য তা কিন্তু নয়। খোদ ভারতের ভেতরই চাপানউতর শুরু হয়েছে এই করোনা নিয়ে। এই লেখা লিখতে লিখতেই ভারতীয় গণমাধ্যমের সর্বশেষ খবর- ‘করোনা পরিস্থিতিতেও নিয়মিত জনসভা করে গিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে হাতেগোনা কয়েক জনের মুখেই মাস্ক দেখা গিয়েছে। দেশে সংক্রমণ যখন লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে, সেই সময় নির্বাচনী সভা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এমন ‘গা ছাড়া’ মনোভাব নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। এ বার তা নিয়ে কমিশনকে কার্যত তুলোধনা করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।’’ (সূত্র: ভোটগণনা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি মাদ্রাজ হাইকোর্টের, কমিশনকে ‘খুনি’র সঙ্গে তুলনা সংবাদ সংস্থা চেন্নাই ২৬ এপ্রিল ২০২১, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন)।
আমরা জানি, আগামী ২ মে তামিলনাড়ুর কারুর কেন্দ্রে ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা ও ফলপ্রকাশের দিন। এসব জায়গায় গত মাস দেড়েক ধরে চলছে নির্বাচনী মাতম। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে ৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আপনাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অথচ দুঃখের বিষয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেই, এই গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। বেঁচে থাকলে তবেই তো গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন মানুষ!’’
ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের এমন হুঙ্কারধ্বনি আমাকে নিয়ে গেলো এক মাস আগের এক সন্ধ্যায়। দিনটি ছিলো গত ২৩শে মার্চ। এক দূরদেশীয় বন্ধুর সাথে হোয়াটসএপে আড্ডা দিচ্ছি। ঘণ্টাব্যাপী নানান বিষয় নিয়ে আমাদের কথা হচ্ছে। যাকে বলে ‘কথার খই’ ফোটা, তাইই। ফোনের অপরপ্রান্তেরজন কথা বলেন খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে, প্যাশনেটলি। যা জানেন না, তা ‘জানি না’ বলতে দ্বিধা নেই। পেশায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মহামারী গবেষক। কথায়-কথায় আমাদের আলাপে চলে আসে পশ্চিমবঙ্গের চলমান নির্বাচনী প্রচারণার প্রসঙ্গ। আমি বললাম, এই যে সব প্রার্থীরা মাস্ক ছাড়াই গালাগালাগি দূরত্বে জমায়েত হচ্ছেন এবং সপ্তাহান্তে ব্রিগেড (কলকাতার একটি সুবিশাল রাজনৈতিক ময়দান, যেখানে জনসভা করা একটি রাজনৈতিক প্রেস্টিজ) লোকারণ্য করে তুললেন, আবার অলিগলিতস্যগলি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছেন এই অবস্থা কি অতিমারীর সময়ে খুব অনিবার্য ছিলো?
আমার প্রশ্নে ফোনের বিপরীত স্বরটি কিছুটা নীরব হয়ে গেলো। চলমান মুখর আলাপটি কিছুক্ষণের জন্য মৌনীধ্যানী গম্ভীর হয়ে গেলো। বুঝতে বাকি থাকলো না, এই একই প্রশ্নটি হয়তো তাঁর নিজেরও, যার উত্তর তাঁর অজানা। যাই হোক, আমাদের আলাপ শেষ হলো পারস্পরিক শুভকামনা জানিয়ে।
এই দূরদেশের বাঙালি বিজ্ঞানীবন্ধুটিকে দেখেছি, একজন বিজ্ঞানী প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করলেও নির্বাচনের মতো জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ইতস্তত করতে হলো। বিশেষ করে সময়টা যেহেতু অতিমারীর, তখন একজন জনস্বাস্থ্যবিদ হিসেবে তার অস্বস্তিটি আমি বুঝতে পেরেছিলাম।
আজ একমাস পর আমাদের সেদিনের সকল আশঙ্কা সত্যি হলো। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পুনেতে শ্মশানঘাটে কোভিডে মৃতের স্তুপ পড়েছে। ভারত এখন বৈশ্বিক অতিমারীর রেখাচিত্রে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিবেশী ভারতবাসী এখন অক্সিজেন নিতে চায়। যে ভারত কিনা আইপিএল, বলিউড, হিন্দুত্ববাদ আর অস্ত্রব্যবসায় বিনিয়োগ করে 'সবার সেরা' হতে চায়। অথচ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আজ এক মহা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি ক্ষমতায় আসার জন্য যে ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ আওয়াজ দিয়েছিল, কার্যত তা না করে ভারতীয় জনগণের টাকা দিয়ে সর্বজনের হাসপাতাল সম্প্রসারণ হলো না কেন? বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশে অক্সিজেন নেই, অথচ অস্ত্র আছে। সেলুকাস!
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এবার একটি স্লোগান খুব পপুলার হয়েছে, তা হলেঅ ‘খেলা হবে’। তৃণমূল এবং বিজেপি দুদলই পরস্পরকে বলছে ‘খেলা হবে’। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকবে, বিরোধিতা থাকবে, তর্ক থাকবে, চ্যালেঞ্জও থাকবে। কিন্তু বালখিল্যতা বেশি হয়ে গেলে তা আর রাজনীতি থাকে না। হ্যাঁ, আমরা সেদিন ফোনে আলাপ শেষ করেছিলাম একটি দুর্দান্ত উপমা দিয়ে। আমি বলেছিলাম, ‘আচ্ছা, আমরা কি খেলাকে রাজনীতি আর রাজনীতিকে খেলা’য় পরিণত করছি না? জনস্বাস্থ্যের এমন মহাবিপর্যয়ের মুখে মাস্কহীন হাজার জনতার রাজনৈতিক হল্লার অনিবার্য পরিণতি আমি একজন সাধারণ প্রতিবেশী দেশের হয়েও টের পাচ্ছিলাম কিন্তু ব্রিগেড কাঁপানো নেতারা কি পানননি? একমাসের ব্যবধানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে আমাদের? সম্প্রতি ভারতের কুম্ভমেলায় যে লাখো পূণ্যার্থী ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের আশায় স্নান করলো, এখন সকলেরই যে মাতা করোনায়ীর আশির্বাদে দ্রুতই ঈশ্বরপ্রাপ্তি ঘটছে তা কি ভালো লাগছে?
না, ভালো লাগার কথা নয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আসুন, খেলা হয়ে যাক।’’ তাঁর অন্যতম সেনাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হুঙ্কার, ‘‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও পাল্টা বলেছেন, ‘‘আমরাও বলছি খেলা হবে। তোমাদের (তৃণমূল) খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ এভাবেই গত দেড় মাস ধরে মূলধারার দু’টি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক ‘খেলা হবে’-র বার্তা উড়তে দেখা যাচ্ছে হুমকিতে, চ্যালেঞ্জে, গানে, প্যারোডিতে, পোস্টারে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবার মুখে মুখে ‘খেলা হবে, খেলা হবে’! কিন্তু পরিস্থিতি তো ভিন্ন। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘‘আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আপনারাই দায়ী। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রাজনীতিকরা জনসভা করেছেন। পদযাত্রায় বেরিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেননি।’’ আসলেই তাই। খেলা যা খেলার করোনাই খেললো, রাজনৈতিক দলগুলোই জনতাকে ঢাল বানিয়েই খেললো। জনতা কখনোই মূল দলে খেলতে পারলোনা। সে সবসময় ‘অতিরিক্ত খেলোয়াড়’, কিংবা গ্যালারির দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দর্শকমাত্র।
দু’টি বৈশ্বিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতাতেই নয় কেবল, ভারতের মানচিত্রজুড়ে আজ দেখতে হচ্ছে উপর্যুপরি রূপান্তরশীল নতুন ধরণ দ্রুত সংক্রমণশীল অদৃশ্য অণুজীবের কাছে সুপারপাওয়ার শাইনিং ইন্ডিয়া কত অসহায়! স্বাস্থ্যব্যবস্থা তছনছ করে দেয়া এই অতিমারী থেকে কী শিক্ষা নিবো আমরা? বিশ্ব আজ অবাক হয়ে দেখছে বাংলাদেশে আক্রান্ত হওয়া হিন্দুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে শাসকদল বিজেপি, নিজ দেশের হিন্দুদের (পড়ুন- ‘নাগরিক’) অক্সিজেনটুকুও দিতে পারছে না তারা আজ।
অতিমারী পরিস্থিতির ভয়াবহতায় প্রতিবেশী দেশের ভাই-বোনদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। ভারতবাসী এই অতিমারী থেকে রক্ষা পাক, যেন ধেয়ে আসা অতিমারী বাংলদেশকে ছোবল না মারে। ভারতের সকল বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য সহমর্মিতা জানাই। করোনা চলে গেলে আমাদের প্রধান ভাবনা হওয়া উচিত ক্রিকেট, বিনোদন, ধর্মীয় উন্মাদনার চাইতে জনস্বাস্থ্যই হোক প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিক। নয়তো দেশে দেশে বড় কর্পোরেট গোষ্ঠী আর রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক ‘খেলা’ যতদিন ‘হবে’, ততদিন সাধারণ জনগণকে অক্সিজেনহীন অসহায় কাতড়ানির মধ্যে থাকতে হবে।
নির্বাচন হলো গণতান্ত্রিক সমাজে প্রবেশের দরজা। সেই নির্বাচনে যখন ‘খেলা হবে’র মতো কোন হিংসাত্মক স্লোগান পপুলার (মুখ্য) হয়ে উঠে, তখন বুঝতে বাকি থাকে না- সমাজের অন্তঃস্থিত লড়াই, রাজনৈতিক আত্মত্যাগ, জনমানুষের প্রাণের দাবিগুলো গৌণ। সত্যজিত রায়ের জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমাতে ভিলেন মগনলাল মেঘরাজকেও দেখি সহজসরল লালমোহনবাবুর ওপর ‘খেইল দেখাতে’। ঠিক সেভাবেই করোনা এখন তার নিজের খেল দেখাচ্ছে ভারতবাসীকে। ভারতে নেতারা জোর গলায় এতদিন ‘খেলা হবে’ বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। আজ সময় এসেছে ভারতবাসীর পাল্টা জোরগলায় সেই নেতাদের প্রশ্ন করার- ‘খেলা নয়, বেকারদের চাকরি কবে হবে? নিরন্ন মানুষ মানুষ কবে অন্ন পাবে? সবার জন্য স্বাস্থ্য কবে হবে’?
লেখক: রাজীব নন্দী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল: [email protected]
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার দিন শেষ, চার উপায়ে মধ্য আয়ের দেশ