ক্লাস, এক্সাম, অ্যাসাইনমেন্ট ইটিসি
ক্লাস, এক্সাম, অ্যাসাইনমেন্ট ইটিসি
কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। যেদিন থেকে শিক্ষকতায় আছি প্রতিনিয়ত একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা হলো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার আগের দিন পিসি ক্রাশ করা, নানী মারা যাওয়া, দাদী হস্পিটালাইজড হওয়া, বন্ধুর চাচার রক্ত লাগা, পেনড্রাইভ রাস্তায় হারিয়ে যাওয়া, যে বন্ধুর সাথে এসাইনমেন্ট করেছিলো সে অসুস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো খুব কমন অজুহাত। আসলে অ্যাসাইনমেন্টটা করাই হয়নি। এসব বুঝতাম, শিক্ষকগণ সবাই বুঝেন তারপরও আমরা ওভারলুক করি, আর একটা সুযোগ দেই। কিন্তু শেষ সেমিস্টার অব্দি অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এসব অজুহাত শেষ হয়না।
ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ আছে যারা তাদের পুরো শিক্ষা জীবনের কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নিজেরা করেনা তা সে ইনডিভিজুয়াল হোক বা গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট। গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্টে যে খরচ থাকে দেখা যায় সে সেটা বহন করে অথবা কখনও বন্ধুদের খাইয়ে তাদের দিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের নিজের পার্টটুকুও করিয়ে নেয়। ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়ে হলে ক্লাসের যে ছেলেটি তার প্রতি দুর্বল বা যে বান্ধবীটি ছাত্রী হিসেবে ভালো তাকে দিয়ে অ্যাসাইনমেন্টটি করিয়ে নেয়। এবং পুরো শিক্ষা জীবনতো বটেই অনেক সময় কর্মস্থলেও চলে এই টেকনিক, যদিও কর্মস্থলে ব্যাপারটা ততোটা ইজি না।
ঠিক একই চিত্র দেখা যায় ছেলেদের বেলায়ও। তারাও যে মেয়েটি তাকে পছন্দ করে বা যে বন্ধুটি ভালো ছাত্র তাকে দিয়ে অ্যাসাইনমেন্টটি করিয়ে নেয়। তবে এখানে আমার অভিজ্ঞতা বলে ভালো লাগাকে এক্সপ্লয়েট করার ব্যাপারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। ছেলেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধুদের দিয়েই এক পেট বিরিয়ানি খাইয়ে অ্যাসাইনমেন্টটি করিয়ে নেয়। আর মেয়েরা যে ছেলেটি তার প্রতি দুর্বল তাকে কাজে লাগায়।
একটা পাঁচ বা দশ নম্বরের অ্যাসাইনমেন্টে মেধা যাচাই হয়না, এটা ঠিক। তবে এই পাঁচ বা দশ নম্বরের অ্যাসাইনমেন্টই বলে দেয় একজন ছাত্র হিসেবে কেমন বা লেখাপড়াটাকে সে কিভাবে নিয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকঠাক জমা না দিয়ে, কোনো রকম পাশ করা অনেকেই পরবর্তীতে কোন না কোনভাবে জব ম্যানেজ করে ফেলে। একটা জব ম্যানেজ করে ফেলা আর সেটাকে সম্মানের সাথে মেইন্টেন করার মধ্যে অনেক ফারাক আছে।
সহপাঠি হয়তো তোমার সাথে এক কাপ চা খেয়েই খুশিমনে অ্যাসাইনমেন্ট করে দেয়। কিন্তু অফিসের একজন কলিগ এতো সহজে তোমার কাজ করে দেবেনা যত সহজে বন্ধু অ্যাসাইনমেন্ট করে দিতো। নিজে কিছু না করতে করতে, না পড়তে পড়তে, না শিখতে শিখতে চাকরি ম্যানেজ করে ফেলেছো কায়দা করে ঠিকই কিন্তু সেই চাকরিতে সম্মানের সাথে টিকে থাকাটা এক সময় কঠিন হয়ে যায় পুরো ছাত্রজীবন ফাকি দিয়ে কিছু না শেখার ফলে। বন্ধুর খাতা দেখে পরীক্ষায় পাস করা যায় কিন্তু চাকরিতে টিকে থাকা যায়না। এখানে সবাই সবাইকে ল্যাং মারার জন্য প্রস্তুত।
যেমনই পারো নিজের লেখাপড়াটা নিজেই করো, অন্যের খাতা দেখে পাশ করতে পারবে কিন্তু সাস্টেইন করতে পারবেনা। বন্ধুর উপর নির্ভরতা কমাও , নিজে পড়ো, বন্ধুকে পড়তে উৎসাহিত করো। ভুল করো , কম ভালো করো, তারপরও নিজের অ্যাসাইনমেন্ট নিজে করো, কিছু শেখো। ভুল করতে করতে, খারাপ করতে করতেই শিখবে। আর শিক্ষা কখনও ফেলনা না। সব সত্যিকারের শিক্ষা কাজে আসে। বন্ধুদের সাহায্য নেবেনা এমনটা বলছিনা, বন্ধুদের সাহায্য লাগে। শচীনও জিরোতে আউট হতেন তেমনি খুব ভালো ছাত্রেরও অনেক সময় বন্ধুর হেল্প লাগে। কোন বন্ধু অ্যাসাইনমেন্ট করে দেবার কথা বললে মুখের উপর না করে দাও। অ্যাসাইনমেন্ট না করে দেবার কারণে যে বন্ধু থাকেনা সে বন্ধুর দরকার নাই। যে বন্ধু তোমায় পড়ার জন্য উৎসাহিত না করে পরীক্ষার হলে দেখায় সে তোমার প্রকৃত বন্ধু নয়। নিজের অ্যাসাইনমেন্ট ফেলে যে মেয়েটির এসাইনমেন্ট রাত জেগে করতে সে কি শেষ পর্যন্ত তোমার থেকেছে না ভালোবেসেছে! তাই নিজেরটা বোঝো! একটু স্বার্থপর হও।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার দিন শেষ, চার উপায়ে মধ্য আয়ের দেশ