‘অমর একুশ’কে বন্দিত্বের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করুন
‘অমর একুশ’কে বন্দিত্বের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করুন
একটি ভাস্কর্যকে সাধারণ চোখে দেখার ক্ষেত্রে ভীষণভাবে বিরক্তিকর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে অনেকগুলো লেয়ারের বৈদ্যুতিক ক্যাবল। প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থী, শিক্ষার্থী, এই বিষয়টি নোটিশ করছেন কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে প্রবাহিত বৈদ্যুতিক ক্যাবলগুলোর দুইপ্রান্তের খুঁটিদ্বয়ের এতোটাই খুঁটির জোর যে তা আজ পর্যন্ত কোনো প্রশাসন তা সরাতে পারলেন না! সৌন্দর্যজ্ঞান বা নন্দনতাত্ত্বিকবোধ এসব তাত্ত্বিক পাণ্ড্যিত্বের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র একজন সাধারণ দর্শনার্থীর দেখার প্রশান্তির জন্য এসব খুঁটি ও ক্যাবলগুলো ভাস্কর্যসীমানা থেকে অচিরেই সরিয়ে নেয়া জরুরি!
‘অমর একুশে’ ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত। ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন। ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। পরবর্তী সময়ে ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্যটির নাম পরিমার্জন করে ‘অমর একুশ’ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিপূর্ণমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি ভাস্কর্য। দেশ-বিদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় পরিচিতির স্মারক চিহ্ন হিসেবে ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্যটির অবদান অনস্বীকার্য। ‘অমর একুশ’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। মায়ের কোলে সন্তানের লাশ, পাশে স্লোগানরত যুবক। মায়ের ঊর্ধ্বমুখী দৃষ্টি আর যুবকের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালি সংগ্রামী জাতি, বাঙালি কখনও মাথানত করে না অন্যায়ের কাছে।
ভাস্কর্যটির নির্মাণের দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২০১৭ সালে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভাস্কর্যটির স্তম্ভসহ ফিগারের মোট উচ্চতা ৩৪ ফুট। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে দেখতে হলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখত হয়। বেদির খুব কাছে গিয়ে একজন দর্শনার্থী ভাস্কর্যটিকে অবলোকন করলে তার পক্ষে যথাযথ অবয়ব নিরূপণ করা সম্ভব নয়। প্রত্যাশা করছি- বর্তমান প্রশাসন এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যটিকে বৈদ্যুতিক ক্যাবলের বন্দিত্বের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করবেন! ‘অমর একুশ’ আমাদেরকে বায়ান্নের উত্তাল দিনগুলোতে নিয়ে যায়; শাণিত করে আমাদের চেতনাকে। ‘অমর একুশ’-এর চেতনার বাস্তবায়ন চাই। জয় বাংলা।
ড. ইসলাম শফিক: শিক্ষক ও নির্মাতা।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- কেন পড়া উচিত ‘সাতকাহন’