সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

জগতে আনন্দ-ব্যাজারে ক্রিকেটের নিমন্ত্রণ

রাজীব নন্দী, শিক্ষক ও গবেষক

১৬:০২, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৬:৫৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

১১৭৫

জগতে আনন্দ-ব্যাজারে ক্রিকেটের নিমন্ত্রণ

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ। ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন’। ক্রিকেট পুঁজির উলম্ফন এবং মিডিয়ার এই দৈন্যদশা দেখে হয়তো তিনি লিখতেন- জগতে আনন্দ-ব্যাজারে ক্রিকেটের নিমন্ত্রণ, পণ্য হল পণ্য হল মানবজীবন। কেন বলছি এই কথা? ভালবাসা ও যুদ্ধে সব চাতুরিই বৈধ’- এমন কথা বাজারে চালু। ক্রিকেটপ্রেমীরা এটা আরো বেশি বোঝেন, কারণ ক্রিকেট এখন আর খেলা নয়। তুমুল প্রতিযোগিতার বিশ্বে ক্রিকেট এখন হয় ‘ভালোবাসা’ না হয় ‘যুদ্ধ’। প্রশ্ন হলো, ভালোবাসা কখন যুদ্ধে পরিণত হয়? যখন ভালোবাসার সম্পদটি কেউ ছিনিয়ে নিতে চায়। হ্যাঁ, খেলার জয়-পরাজয় নিয়ে যখন ‘জাতীয়তাবাদ’ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন সামান্য বাইশ গজের খেলা হয়ে উঠে একলক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটারকে প্রতিনিধিত্ব করা ‘যুদ্ধ’। সেই ক্রিকেট যুদ্ধ কিভাবে উঠে আসে মিডিয়ায়? আসুন সদ্য সংগঠিত একটি ঘটনার তালাশ করে এর উত্তর খুঁজি।

একটা ঘটনা কখন সংবাদরূপে হাজির হয়? যখন সেই ঘটনাটির সংবাদ মূল্য তৈরি হয়। সংবাদটি যদি হয় পাঠক কিংবা দর্শকের আগ্রহের বিষয়। পাঠকের সম্ভাব্য আগ্রহের বিষয়টি মাথায় রেখে মিডিয়া সেই ঘটনার ‘ট্রিটমেন্ট’ও (পরিবেশন) দেয়। ফলে ওই সংবাদটি হয়ে উঠে বাকি সব সংবাদের চেয়ে আলাদা। তেমনি গত দুইদিন ধরে ক্রিকেট ময়দান ছাপিয়ে ইস্যু অফ দি ফেসবুক ছিলো ঢাকা-বরিশাল ম্যাচে নিজ দলের সতীর্থের প্রতি মুশফিকের উদ্যত আচরণ। এক ম্যাচেই দু'বার তিনি সতীর্থ নাসুমের উপর খানিকটা চড়াও হন। তার এমন অপেশাদারিত্ব আচরণকে ঘিরেই দেশ-বিদেশে নানান সমালোচনার ঝড়। পরবর্তীতে সে গতকাল নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতীর্থ নাসুম, সৃষ্টিকর্তা এবং তার সমর্থকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে বিসিবির নিয়ম লঙ্ঘনের কারনে ম্যাচ ফি’র ২৫% জরিমানার সঙ্গে ১টি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয় তার নামের পাশে।

উপরের বর্ণনাটি ছিলো দুইদিনের ঘটনার সারাংশ। এবার আসি আলোচনার ফোকাস পয়েন্টে। শুরুতেই যে সংবাদের ট্রিটমেন্টের কথা বলেছি সেটাতে। দেশীয় পোর্টালে খবর গুলো যেমনটা শিরোনাম করেছে তার কিছু দেখার চেষ্টা করি। ‘বাংলা ট্রিবিউন’ লিখেছে “নাসুমের গায়ে হাত তুলতে উদ্যত মুশফিক!”। এইভাবে আরো ক’টা যদি বলি ‘বিডিনিউজ২৪.কম’ করেছে  “মাঠে মুশফিকের প্রশ্নবিদ্ধ্ব আচরণ”, প্রথম আলো দিয়েছে “মাঠে মুশফিকের এ কেমন আচরণ”। প্রতিটাতেই তারা ম্যাচের সেই মুহূর্তের ছবিও দিয়েছিলো। তবে প্রথম আলো খানিকটা আড়াল করে রেখেছে তাদের। তবে আপত্তিটা এখানকার কেউই ঘটায়নি, ঘটিয়েছে তারাই যারা আগেও বাংলাদেশ ইস্যুতে মাঝে মাঝে ‘অপমানজনক’, ‘শ্লেষাত্মক’ কিংবা ‘তিলকে তাল’র মতো করে ভাষা ব্যবহার করে, সেই ঐতিহাসিক ভারতীয় জাতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

আমরা জানি, ছবি সম্পাদনা ব্যাপারটি খবর সম্পাদনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোন সংবাদের সাথে কোন ছবি প্রকাশ হবে সেটি সহ-সম্পাদক বা বার্তা সম্পাদক পত্রিকার পলিসি এবং সেদিনের ঘটনার দিকে লক্ষ্য রেখে ঠিক করবেন। বলা হয়, একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়েও শক্তিশালী। আবার এটাও ঠিক, ছবি সবসময় সত্যি কথা বলে না। আসুন আনন্দবাজার পত্রিকায় ছবিটির বিশ্লেষণ করি। মুশফিকের গায়ে সাদা জার্সি বলছে, এই ছবিটি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিকের উল্লাস। তাও কথা থাকে, মুশফিকের মতো একজন দায়িত্বশীল খেলোয়াড় কি এই ধরণের মুখভ্যাঙানি দিতে পারে প্রতিপক্ষ বা সতীর্থকে? বিনীত উত্তর না। মুশফিকের ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে ‘বাঘের হালুম’, আসলে মুশফিক দেখাতে চেয়েছেন ডাইনোসর। কারণটি জেনে নিতে বেশি দূর যেতে হবে না, ফিরে চলুন নয় মাস আগে মুশফিকের একটি বক্তব্যে- ‘আমার ছেলে ডাইনোসর খুব পছন্দ করে। ও ডাইনোসর দেখলে খুব মজা পায়। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর সেটিই শুধু দেখাতে চেয়েছি। ডাবল সেঞ্চুরিটা আসলে ওর জন্য।’ সূত্র: বাঘ নয়, ছেলের জন্য 'ডাইনোসর' হলেন মুশফিক, প্রথম আলো, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০)

হ্যাঁ, এন্দলোভুকে কাট শটে বাউন্ডারি মেরে দ্বিশতক নিশ্চিত করে হেলমেট, ব্যাট ছেড়ে দুই হাত আকাশে তুলে প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুশফিক। শূন্যে চুমু ছুড়ে দিয়েই চওড়া হাসিতে করলেন ব্যতিক্রম এক উদযাপন। ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে যে ইশারা করেছেন, বোঝাই যাচ্ছিল দুই বছর বয়সী ছেলে শাহরুজ রহিম মায়ানকে দুই হাতকে থাবার মতো করে আসলে কি প্রিয় ডায়নোসরকেই বোঝাতে চাইলেন তিনি। মোক্ষম সময় বুঝে আনন্দবাজার পত্রিকা সেটি সতীর্থ’র উপর চড়াও হওয়ার সংবাদে ব্যবহার করে মুশফিক বিরোধী পারদকে আরেকটু চড়িয়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখার মতো গ্রাম্য আচরণ করলো। মুশফিক সেই টেস্টে খেলোয়াড়ি বিজয়ীসুলভ উল্লাস প্রকাশ করেছেন। অথচ সেই পুরাতন ছবিটি আবার ভিন্ন প্রেক্ষপটে হাজির করে শিরোনাম করা হয়েছে- ‘মাথা গরম করে সতীর্থকে মারতে গেলেন মুশফিকুর’। সাংবাদিকতার কোড অফ এথিক্স মতে, এই ছবি কি সেদিনের মুশফিককে রিপ্রেজেন্ট করে? ইএসপিএনসহ বাংলাদেশে সব জাতীয় গণমাধ্যম মুশফিকের সেদিনের ম্যাচের ছবি প্রকাশ করলেও আনন্দবাজার কেন আর্কাইভ ঘেঁটে ভিন্ন আমেজের মুশফিকের ছবিটি ছাপলো? ছাপলো কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেটবিরোধী বিশাল সংখ্যক ভারতীয় পাঠক-দর্শককে সুরসুরি দিয়ে মুশফিক তথা ‘আগ্রাসী বাংলাদেশ’র একটি ইমেজ তারা হয়তো প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। বলাবাহুল্য আনন্দবাজার পত্রিকা এক্ষেত্রেও সফলও হয়েছে। কারণ চার ঘণ্টার মাধ্য হাজার হাজার কমেন্টে মুশফিকের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে সেই ছবির ফেসবুক কমেন্ট সেকশনে মন্তব্য এসেছে। মুশফিক সতীর্থকে মারতে গিয়ে অত্যন্ত খারাপ কাজ করলো, কিন্তু আনন্দবাজার তো অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে সেদিন ইস্যু করে ফেসবুকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিরোধী হেইটস্পিটের আগুনে তেল পেট্টোল ঢেলে দিলো। এই ধরণের সাংবাদিকতার নাম কী হতে পারে? আনন্দবাজার পত্রিকা নানান বিবেচনায় আমার প্রিয় পত্রিকা, আমার বহু স্বজন, বন্ধু এবং প্রিয়জন এই পত্রিকায় কাজ করেন। কিন্তু তারা হয়তো পলিসি লেভেলে নেই। আমার বিনীত প্রশ্ন, বাংলাদেশকে ঠিক কিভাবে দেখতে চায় আনন্দবাজার? গত এক বছর ধরে অন্তত এরকম বেশকিছু ছবি, শিরোনাম এবং সংবাদ নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বলা বাহুল্য, এসব ঘটনা একজন আনন্দবাজার ভক্ত বা পাঠক হিসেবে আমার শিরোপীড়ার কারণ হয়েছে। আলোচনাটি ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ রাখবো। আসুন আনন্দবাজার পত্রিকা যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে সেই দেশের ক্রিকেট চিত্রটি একটু বিশ্লেষণ করি।    

পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালেই ‘বিশ্ব ক্রিকেট’কে বোঝা সম্ভব। ত্রিশ কোটি ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন ভারতের মধ্যবিত্ত মজে আছে ক্রিকেট আর বলিউডেই। ভারতীয় পুঁজিপতিরা জানে, নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে হলে এই দুই শ্রেণীই আজ তার বাজার। তার কৃষক যতই আত্মহত্যা করুক, তার বেকারের পাল্লা যতেই ভারী হোক, গোরক্ষকরা যতই সংখ্যালঘু মুসলিম পিটিয়ে মারুক, কৃষক বিদ্রোহে যতই দিল্লী অচল হোক, বাজারের কাছে ‘দেশপ্রেম’ কখনোই মুখ্য নয় বরং গৌন। ভারতের পুঁজি বাজারের কাছে ক্রিকেট এখন প্রতিভূ। ক্রিকেটার আর অভিনেতায় ভারতে ফারাক খুব বেশি নেই। বাজার অর্থনীতি জানে, যাঁকে দেখে মানুষ পণ্য কিনবে, বিজ্ঞাপন তাঁকে দিয়েই বানাবে। ভারতীয় মিডিয়া তাই তাকেই ‘আইকন’ করে। সেই আইকনের হাতে ধরা মোবাইল ফোন, কোমল পানীয় বা পোশাক- অনেক বেশি দামি পণ্য হয়ে বাজারে বিকোবে। যেভাবে সচিনের ২৪ বছরের কেরিয়ার জুড়ে পেপসি, আদিদাস, এম আর এফ, ক্যানন, তোশিবা, ফিলিপস, ভিসা, রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ড, ক্যাস্ট্রল, ফিয়াট প্যালিও, ইএসপিএন স্টার স্পোর্টস, আভিভা, রিলায়েন্স’র তালিকা বিরাট। গণমাধ্যমে প্রকাশ, বিজ্ঞাপনবাবদ সচিনের সারা জীবনের আয় প্রায় পাঁচশো কোটি টাকারও বেশি। তাই ‘ক্রিকেট সাম্রজ্যবাদী’ ভারত তার স্বভাবগত কারণেই চাইবে না, প্রতিবেশী ‘খয়রাতি’ খেলোয়াড় কোনভাবেই বিশ্বইমেজ হয়ে না উঠুক। 

আমরাও কম কী? আমাদের দশাও তাই। আমাদের দেশের দিকে তাকালে মনে হয়- ‘ঘরে নাই নুন, ছেলের নাম মিঠুন’। একদিকে বিজ্ঞাপনের বাজার, আরেকদিকে ছদ্ম-জাতীয়তাবাদ, এই দুইয়ে মিলে ক্রিকেট হয়ে উঠছে আমাদের কাছে পরম আরাধ্য। ফুটবলের পরাক্রমশালী দেশ হল্যাণ্ড। সেই হল্যান্ডকে আমরা সহজেই হারিয়েছি ক্রিকেটে। বিশ্ব ফুটবলের সেরা দেশ ব্রাজিল, পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি আমেরিকা। আমরা মনে মনে কত খুশি, এই দুই শ্রেষ্ঠ দেশ কি আমাদের ক্রিকেটের কাছে পাত্তা পাবে? ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দেশ নিউজিল্যাণ্ডও যখন আমাদের দামাল ছেলেদের হাতে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ হয়, তখন ক্রিকেট নিয়ে আমরা মেতে উঠি তুমুল উল্লাসে। একটি দেশের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাধনায় যখন আমরা সেই দেশকে টপকাতে পারি না, তখন ক্রিকেটাস্ত্র (ফেলুদা’র মতো বলি- মগজাস্ত্র) নিয়ে তাই আমাদের এত গর্ব, এত উত্তেজনা। ফলে পুঁজির নিয়েমে ক্রিকেটই হয়ে উঠেছে আমাদের ‘জয়ের প্রতীক’ বা ‘অহংয়ের প্রতীক’। যদিও সেই  ক্রিকেট ‘আমাদের জাতীয় ঐক্যে’রও প্রতীক বটে!

নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ক্রিকেট উন্মাদনাকে চমকে দিয়েছেন। প্রতিবেশী মালদ্বীপে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিমকে একটি ক্রিকেট ব্যাট উপহার দিয়েছেন। মালদ্বীপে ক্রিকেটের প্রসারের জন্য এবং দেশটিতে ক্রিকেটের বিকাশ ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট সোলিহর ইচ্ছার পূর্ণতা দিতে ভারত সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন মোদী। অর্থাৎ, ইন্ডিয়ান স্পোর্টস ক্যাপিটালিজম এখন শান্ত মালদ্বীপে তার লগ্নিপুঁজির গন্তব্য ঠিক করেছে! ভারত রাষ্ট্রে মোদি সরকারের নেতৃত্বে উগ্রপন্থার বিকাশ এবং ক্রিকেটে কোহলির নেতৃত্বে স্পোর্টস ক্যাপিটালিজমের বিকাশ তারই যেন সমান্তরাল ও যুগপৎ যাত্রা। এই প্রসঙ্গে একটি হিসাব দিই, ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের বাৎসরিক আয় আনুমানিক ৯০ লক্ষ ডলার, ক্রিকেট অব অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার সম্পত্তি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আনুমানিক সম্পত্তি ৫ কোটি ১০ লক্ষ ডলার, পাকিস্তান বোর্ড’র আনুমানিক সম্পত্তি ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার, ইংল্যান্ড- ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সম্পত্তি প্রায় ৫ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার। আর ভারত? এক নম্বর জায়গায় রয়েছে ভারতের বিসিসিআই।

ফিরে যাই ১৯৯০ সালে। বিশ্ব ক্রিকেটের ওয়ানডেতে সচিন তেন্ডুলকরের রানের হাতেখড়ি হয় এই বছরই। বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরানের শতরানের রেকর্ড তাঁরই দখলে। খেয়াল করে দেখুন, সচিনের উত্থান যখন ঘটছে তখন এশিয়াজুড়ে বেসরকারিকরণের যাত্রা শুরু হচ্ছে। পুঁজিবাজার উন্মুক্ত হচ্ছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের বিস্ফোরণ হচ্ছে ঘরে ঘরে। ঠিক সেসমই ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট খেলা থেকে ‘ধর্ম’ বা ‘জাতীয়তাবাদ’ হয়ে উঠতে শুরু করলো। বিখ্যাত লেখক জন বুচানন এর ‘দি ফিউচার অফ দি ক্রিকেট’ বইয়ের একুশ পৃষ্ঠায় ‘হয়েন ওয়ার্ল্ডস কলিড’ চাপ্টারের লাইনে লাইনে লুকিয়ে আছে ক্রিকেট ও বিনোদন পুঁজির বিশ্বায়নের কথা। যেখানে বলা হচেছ, চিয়ার লিডার্স, ফায়ারওয়াক্স ডান্সিং এর মাধ্যমে যে আইপিএলর উদ্বোধনী হয়, তা কেবলমাত্র বিনোদন নয়। সেখানে পৃথিবীর বুকে কয়েকটি যুদ্ধ বা সংঘাতেরও সৃষ্টি হয়।

আসলেই তাই, ক্রিকেট, একসময় যা ছিলো ‘যুথবদ্ধ প্রচেষ্টা’, আজ হলো ‘কর্পোরেট ব্যবসা’। ক্রিকেট ছিলো ‘নিখাদ দেশপ্রেম’, হলো ‘বিশ্রী দ্বেষপ্রেম’। খেলার মাঠ হওয়ার কথা ‘ঐক্যবদ্ধ’তার প্রতীক, অথচ হলো কি না ‘জাতিগত ঘৃণা উৎপাদন ফ্যাক্টরি’। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ এই তিন জাতির ক্রিকেট খেলায় তাই দর্শকদের দেখি আবেগ উজাড় করে ‘বিষ ঢেলে দেয় পরস্পর’। আমাদের মিডিয়া জেনে বুঝেই নিছক ‘খেলা’কে ‘যুদ্ধ’তে পরিণত করছে আর আমাদের পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ‘যুদ্ধ’কে বানাচ্ছে ‘খেলা’! আমরা আমজনতা সেই খেলার ‘বোকা দর্শক’ বা সেই ‘যুদ্ধের শহিদ’। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ। ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন’। ক্রিকেট পুঁজির উলম্ফন এবং মিডিয়ার এই দৈন্যদশা দেখে হয়তো তিনি লিখতেন- জগতে আনন্দ-ব্যাজারে ক্রিকেটের নিমন্ত্রণ, পণ্য হল পণ্য হল মানবজীবন।

রাজীব নন্দী:  সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ ভারতের গণমাধ্যম গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্দো-বাংলা মিডিয়া এডুকেটর্স নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক’ এবং দুই বাংলার গণমাধ্যম, গণপিটুনি এবং জনসংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন। ইমেইল: [email protected]

কৃতজ্ঞতা: এই লেখায় লেখককে তথ্য বিশ্লেষণে সহযোগিতা করেছেন তার গবেষণা সহকারী, চবি যোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সম্মান চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থী জাওয়াদ হোসাইন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank