রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মাওলানা সাঈদীর চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ এবং বাস্তবতা

আতাউর রহমান কাবুল

১৪:২৫, ২১ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৬:০৯, ২১ আগস্ট ২০২৩

১৯৫৬

মাওলানা সাঈদীর চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ এবং বাস্তবতা

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। ইতিমধ্যে তাঁর চিকিৎসাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। সাঈদী সাহেবের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা একজন চিকিৎসককে দেওয়া হয়েছে হত্যার হুমকি। চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। 

দীর্ঘদিন বছর ধরে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকতা করি বলে বিষয়টা নিয়ে আমার কিছুটা সুলুকসন্ধানের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেই ইচ্ছা থেকে দেশের স্বনামধন্য ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন রেফারেন্স দেখে আজকের এই লেখা। দয়া করে আমাকে কারোর পক্ষ ভাববেন না।

কি হয়েছিল মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর?
আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যেটা জানতে পেরেছি তা হল, কাশিমপুর কারাগারে থাকাকালীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। প্রথমে কারাগারের চিকিৎসক ডাকা হয়। এরপর উনাকে নেয়া হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে আনা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাত ১১টা ২০ মিনিটে এখানকার হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। 

কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলেন তিনি? 
• চিকিৎসগণ জানিয়েছেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এবার। এটা খুব জটিল ধরনের হার্ট অ্যাটাক যাতে হার্টের আশপাশের মাংসপেশী বেশ ড্যামেজ হয়ে যায়।
• সাঈদী সাহেবের হার্টে আগে থেকেই ৫টি রিং পড়ানো ছিলো। তিনি ২০০২, ২০০৪, ২০১২ সালে হার্ট অ্যাট্যাক করেছিলেন। এবারেরটা নিয়ে ৪ বার।
• উনার ইসিজিতে এবার এন্টিরিয়র এমআই আসে, যাতে বোঝা যায় উনার এলএডিতে (LAD) ব্লকেজ আছে। এই ব্লকেজের স্থানেই উনার আগে থেকেই ৩টি স্টেন্ট (রিং) বসানো ছিলো। 
• আগে থেকে ৩ বার হার্ট অ্যাট্যাকের সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মাল্টিপল কো-মরবিডিটি রোগীর নতুন করে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়াটা আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ।
• উনাকে বেশ হাসিখুশি দেখা যাচ্ছিল এটা ঠিক। কিন্তু ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ হবার পরও আবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাওয়ার বহু রেকর্ড আছে। কেননা, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের রোগী যখন তখনই খারাপ হয়ে যেতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ক্লোজ মনিটরে সিসিইউতে রাখা হয়।

কেন প্রাইমারি পিসিআই করা হয়নি?
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলেছেন, গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে সাঈদীর হঠাৎ ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। এরপর Cardiopulmonary resuscitation (CPR) দেয়া হয়। এরপর অ্যাডভান্স কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট  প্রটোকল অনুযায়ী লাইফ সাপোর্টে তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। সব ধরনের চেষ্টার পরও রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।
মৃত্যুর পর যে বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়েছে তা হল, উনাকে কেন প্রাইমারি পিসিআই করা হয়নি?
প্রাইমারি পিসিআই মানে হলো Primary Percutaneous Coronary Intervention (PCI). হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন যুক্ত রোগীদের খুব দ্রুততার সঙ্গে এনজিওগ্রাম করে বন্ধ রক্তনালিকে পরিষ্কার করে চিকিৎসা দেওয়াই প্রাইমারি পিসিআই। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রাইমারি পিসিআই করানো যায় না।

প্রাইমারি পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনশন করার ক্ষেত্রে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় :
প্রথমত: প্রাইমারি পিসিআই এর গাইড লাইনে বলা আছে, Primary PCI is not recommended when symptom onset is more than 12 hours before evaluation and the patient is asymptomatic. অর্থাৎ রোগীর বুকে ব্যথা শুরুর ১২ ঘন্টার মধ্যে এটা করাতে হয়। তবে ১২ ঘন্টার পর রোগী আসলেও যদি বুকে ব্যথা থাকে অথবা রোগী হিমোডাইনামিক্যালি আনস্টেবল থাকে তাহলে প্রাইমারি পিসিআই করা যেতে পারে।
কিন্তু আমরা জেনেছি, সাইদী সাহেবকে বিএসএমএমইউতে আনা হয় কাশিমপুর কারাগারে বুকে ব্যথা শুরু হবার ১৭-১৮ ঘন্টা পর। যখন হাসপাতালে আসেন তখন বুকে ব্যথা ছিল না। আবার উনার রক্তচাপ, পালস্ ইত্যাদিও ভালো ছিল। অর্থাৎ হিমোডাইনামিক্যালি স্টেবল ছিলেন তিনি। এমন অবস্থায় উনার প্রাইমারি পিসিআই করার কোন ইন্ডিকেশন ছিল না। 

দ্বিতীয়তঃ আগে থেকেই উনার হার্টে পাঁচটি রিং পড়ানো বা স্ট্যান্টিং করানো ছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালে তিনটি রিং পড়ানো হয়েছিল। যখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয় তখন সেখানকার চিকিৎসকগণ ইসিজি দেখে ধারণা করেন, উনার Left anterior descending artery তে ব্লকেজ, যেখানে আগে থেকেই তিনটি রিং পড়ানো ছিল। এমন অবস্থায় ৮৩-৮৪ বছর বয়সে আবার নতুন করে প্রাইমারি পিসিআই করে রিং পরানো বা বাইপাস সার্জারি করা আরো ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানকার চিকিৎসকগণ বলছেন, এটা করাতে গেলে ক্যাথ ল্যাবের টেবিলেই হয়তো কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেত।

তাই সবদিক বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত আহমেদ সহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলেছে, সাঈদীর রোগের গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী সম্যকভাবে জ্ঞাত ছিলেন। এটা অধ্যাপক মোস্তফা জামানের একক সিদ্ধান্তে হয়নি এমনটাই জানতে পেরেছি সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে।

সিদ্ধান্তটি তাহলে কে নিয়েছিলেন?
বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের ওয়ারিং প্রটোকল হলো, এখানে কোন ভিআইপি রোগী ভর্তি হলে তা বিভাগের চেয়ারম্যানের অধীনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য অধ্যাপকগণ উনার সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা চালান। সাঈদী সাহেবের ক্ষেত্রে বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মেশকাত চৌধুরী নিজে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কনজারভেটিভ চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন। 
তাহলে বিষয়টি ক্লিয়ার যে, অধ্যাপক মোস্তফা জামানের একক সিদ্ধান্তে কোন চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। বরং প্রাইমারি পিসিআই যদি লাগে সেজন্য তাকে ডেকে এনে রেডি রাখা হয়েছিল। পরিসংখ্যাণ বলছে, ওখানে প্রাইমারি পিসিআই করাতে তার রেকর্ড বেশি।

তাহলে অভিযোগ কেন?
ভুল চিকিৎসায় সাঈদী সাহেব মারা গেছেন কিংবা তার চিকিৎসা হয়নি- এমন অভিযোগ সাঈদীর পরিবার কিংবা খোদ জামায়াতে ইসলামী দলের পক্ষ থেকেও করা হয়নি। তৃতীয় পক্ষের কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক মোস্তফা জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। 
আমি খোঁজ নিয়ে এও জেনেছি, সেই রাত্রে বিনা ময়না তদন্তে লাশ গ্রহণের জন্য শাহবাগ থানায় মাওলানা সাঈদী সাহেবের ছেলে মাসুদ সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর প্যাডে লিখিতভাবে যে দরখাস্ত করেছেন সেখানেও স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। চিকিৎসা নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই এবং ভবিষ্যতে কারোর প্রতি কোন অভিযোগ অথবা মামলা করবো না।’

ইনজেকশন পুশ প্রসঙ্গ
সোস্যাল মিডিয়ায় আরো একটি বিষয় এসেছে যে, সাঈদী সাহেবকে ডা. মোস্তফা জামান একটা ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেক্ষেত্রে একটা ছবিতে দেখানো হয়েছে মোস্তফা জামানের হাতে ইনজেকশন জাতীয় কিছু একটা। 
আসলে এরকম হবার আশঙ্কা নাই। কোন ইনজেকশন-ই ডাক্তাররা নিজে পুশ করেন না; সেটা পুশ করেন নার্সরা। সুতরাং এটাকে এভাবে দেখা উচিত নয়। 

অভিযোগ, পরিবারের কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি...
সাঈদী সাহেবের ছেলে মাসুদ সাঈদী অভিযোগ করেছেন, একবারের জন্যেও তার বাবাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত, এরকম জটিল পরিস্থিতিতে রোগীর সঙ্গে তার পরিবারের লোকজনের দেখা করার সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল। আমি এও মনে করি এটাও চিকিৎসার একটা অংশ হতে পারতো। কারণ জটিল হৃদরোগীকে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলে তা হার্টের জন্য ভালো ছাড়া খারাপ হত না।
কিন্তু এই বিষয়টি চিকিৎসকদের বিষয় না। এটা সম্পূর্ণ জেল কর্তৃপক্ষের বিষয়। প্যারোলে মুক্তি দিয়ে হলেও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল কিনা সে আইন অবশ্য আমার জানা নেই।

কে এই মোস্তফা জামান?
অধ্যাপক মোস্তফা জামান ভাইকে আমি চিনি ১৭-১৮ বছর আগে থেকে। ২০০৬-৭ সালের দিকে মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানাধীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় আমি যখন আইটি সাংবাদিকতা করতাম, তখন মোস্তফা জামান ভাই সেই পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতার বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন। তখন থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় এবং বেশ ভালো সম্পর্ক। তাঁর অবর্তমানে উনার পরামর্শে আমি অনেক সময় স্বাস্থ্য পাতা মেকআপ করে রাখতাম। তিনি সেই দায়িত্ব ছেড়ে যাবার পর আমি আমার দেশের স্বাস্থ্য পাতাও দেখা শুরু করি। 

আমার একমাত্র মেয়ে ২০১৬ সালে যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গাইনি বিভাগের সিজারিয়ান সেকশান অপারেশন টিমে উনার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ডোনা ভাবিও ছিলেন। আমার মা ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই স্ট্রোক করে সেখানে ভর্তি হলে বিএসএমএমইউর তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, বর্তমান ভিসি অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ সহ এই মোস্তফা জামান ভাই তখন আমার মাকে দেখতে এসেছিলেন। উনারাই সার্বিক চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি আমার নিমন্ত্রণে আমাদের কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সাবেক ভিসি কামরুল স্যারসহ এসেছিলেন। আমাদের নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি চ্যানেলে জামান ভাইকে বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠানের আলোচক হিসেবে রাখা হয়েছে। তার অনেক লেখা আমি কালের কন্ঠে পাবলিশ করেছি।

ব্যক্তিগতভাবে মোস্তফা জামান একজন বন্ধুবৎসল, রোগীবান্ধব, পরোপকারী, সাংবাদিকবান্ধব, সাদা মনের মানুষ। তিনি স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচুর লেখালেখি করেছেন। বিটিভিসহ দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার সঞ্চালনায় স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচারিত হয়। চেম্বারে বা হাসপাতালে রোগীদের সর্বোচ্চ সময় তিনি দেন। রোগীদেরকে বাবা, মা সম্বোধন করে মন খুলে কথা বলেন যা আমি নিজেই দেখেছি। ল্যাবএইডে তাঁর চেম্বারে প্রচুর রোগীর ভিড় থাকে। সাঈদী সাহেবের চিকিৎসার জন্য বিভাগের চেয়ারম্যান চৌধুরী মেশকাত স্যার যখন ফোন করেন, তখন তিনি কিন্তু চেম্বারের সব রোগী ফেলে ছুটে এসেছিলেন। আমি যতদূর জানি, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগে তিনিই সর্বোচ্চ সংখ্যক স্ট্যান্টিং (রিং পড়ানো) করে থাকেন। এজন্যই চেয়ারম্যান সাহেব হয়তো তার উপর আস্থা রেখেছিলেন। চেয়েছিলেন এরকম একজন ভিআইপি রোগীকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। কিন্তু পরের দিন সাঈদী সাহেব হঠাৎ-ই মারা যান।

দুঃখজনকভাবে সত্য যে, এমন একজন মানুষকে আজ ভিকটিমাইজ করা হচ্ছে; তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে! অথচ সাঈদী সাহেবের চিকিৎসার একক দায়িত্বে তিনি ছিলেন না। তার কারণে প্রাইমারি পিসিআইও বাতিল করা হয়নি। হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান সহ চিকিৎসকদের সম্মিলিত পরামর্শেই উনাকে কনসারভেটিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। 

ভুলটা তাহলে কোথায় ছিল?
অনেকে বলছেন, অধ্যাপক মোস্তফা জামানের ভুল ছিল তিনি মিডিয়াতে বেশি কথা বলেছেন, একেক সময় একেক কথা বলেছেন। আমি বরং মনে করি, তার থেকে বেশি ভুল ছিল সেখানে কোন মেডিকেল বোর্ড গঠন না করা। এর আগে বেশ কয়েক বছর আগে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের চিকিৎসাও সেখানে হয়েছিল অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ স্যারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা এবং মিডিয়াতে যা বলা হবে তা বোর্ডের রেফারেন্সেই বলা। বিষয়টি নিয়ে যখন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা অবশ্য তারা যুক্তি দিয়েছেন, মেডিকেল বোর্ড করার মত সময় খুব কম ছিল।

দ্বিতীয়ত: এমন জটিল হৃদরোগীর সব ধরনের চিকিৎসার সাপোর্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হয়তোবা নেই। জটিল হৃদরোগের চিকিৎসায় সেখানে IABP, ECMO, Hybrid OT সাপোর্টের দরকার হতে পারতো। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের চিকিৎসার বেলায় যেটা আমরা দেখেছি সেখানে অনেক সুযোগ ছিলো না। সুতরাং, আগের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল বা হার্ট ফাউন্ডেশনে রেফার করা যেত। কিন্তু এটাও ঠিক যে, দেশের শীর্ষ চিকিৎসালয় হিসেবে উনারা অন্য কোথাও রেফার করেন না।

জন্ম-মৃত্যু অবধারিত
আমি মনে করি, দেশের একজন প্রথিতযশা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোস্তফা জামানকে যারা ভুল বুঝছেন, তারা নিশ্চয়ই বাস্তবতা অনুধাবন করবেন। একথা সত্য যে, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের বিশাল ভক্তকুল রয়েছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু জন্ম-মৃত্যু সেটা তো নির্ধারিত এবং অবধারিত। এসব আমাদের মানতেই হবে। ২০২১ সালে এই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের আইসিইউতে আমার আপন ভাই করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। এক রাতে সেখানকার অব্যবস্থাপনা নিয়ে আমিও প্রশ্ন তুলেছিলাম। কালের কন্ঠের অনলাইনে সেই রাতেন সংবাদও ছাপা হয়েছিল। আমার ভাই মারা গেলে আমারও মনে হয়েছিল অন্য কোথাও ভর্তি করালাম না কেন? কিন্তু ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসা অবহেলার কোন অভিযোগ কখনো তুলিনি। কেননা জন্ম-মৃত্যু সে তো আল্লাহর হাতেই।

তাই আসুন, সন্দেহের মধ্যে নয়, বরং বাস্তবতাকে মেনে নেই। দেশের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁর ব্যক্তি জীবন বিনষ্ট না করি। ইসলাম সে শিক্ষাও দেয় না। এ ধরনের একজন অধ্যাপক মোস্তফা জামান একদিনে তৈরি হয়নি। তাঁকে তৈরি করতে এই দেশের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। আমার-আপনার ট্যাক্সের টাকার অংশ রয়েছে তাদেরকে চিকিৎসক বানাতে। সুতরাং তাদেরকে মেরে ফেললে ক্ষতি আপনার আমার-ই।

আতাউর রহমান কাবুল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সাংবাদিক।
ইমেইল : [email protected]

[এই লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব মতামত]

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank