শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নেই

হীরেন পণ্ডিত

১০:২১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১০২২

প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নেই

প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নেই বলে মনে করেন সকলেই। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া একটি মানবিক বিষয় ছিলো। এই সংকটের সমাধান করতে হবে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে।  আমাদের রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে দৈনন্দিন অন্য সাধারণ বিষয় হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আমাদের সম্মিলিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষণের দিক ও কাঠামোগত দিক দিয়ে আমাদের বুঝতে হবে লি কুয়ান ইউ যখন সিঙ্গাপুরের উন্নয়ন করছিলেন তখন ঠিক আমাদের মতোই তাঁর প্রথম বিবেচ্য বিষয় ছিল ‘স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং জনগণের উন্নত জীবন ব্যবস্থা’। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর ফ্রান্স সফর করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ফ্রান্সকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সংকট নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ফ্রান্স। ১০ নভেম্বর, ২০২১ সালে প্যারিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এই আশ্বাস দেন। ফ্রান্স সম্মত হয় এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, এটা এখন নিরাপত্তা পরিষদেও পাস করে এই বিষয় কাজ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ত্বরান্বিত করা হোক এটাই এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই সুযোগে তাদের উপর বহুমাত্রিক চাপ অপরিহার্য। জাতিসংঘও এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার নড়ছে না। 

অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ড এমন তারা রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী কিনা সেটা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা সংকটে অনেক সংগঠন ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রত্যাবাসনে আগ্রহ দেখায় না। এটাই এখন বাস্তবতা। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। যা বাংলাদেশের জন্য ভালো বা সুখকর হবে না।

রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গৃহিত হওয়া একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে, যেমন রাশিয়া ও চীনসহ সব দেশই দীর্ঘমেয়াদি সংকট সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হতে পারে বিশেষ করে চীন, রাশিয়া এবং কিছু দেশ যারা আগে বাধা সৃষ্টি করেছিল তারা এবার বাধা সৃষ্টি করেনি, অর্থাৎ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে যাচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে মিয়ানমার সম্পর্কে হয়তো কিছু কিছু কথা বলা হয়। কিন্তু মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরবচ্ছিন্নভাবে যে চাপে রাখা প্রয়োজন, সেটা আমরা দেখছি না। যারা এ মানুষগুলোর জীবন বিপন্ন করে তুলেছে, তাদের সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে, অর্থাৎ মিয়ানমার সরকার বা সামরিক সরকার, তারা এ সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথে অগ্রসর হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কাজেই এ জায়গাটাতেই আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ এ সংকট বাংলাদেশের জন্য প্রকট আকার ধারণ করছে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে যে আধুনিক ও বিশ্বমানের আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছে, সেটাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো ভাসানচর অনেক দূরে কিংবা সেটি বসবাসের উপযোগী নয় ইত্যাদি। পরে তারা বুঝতে পেরেছে, ভাসানচরে আধুনিক মানের যে আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছে, সেটি খুবই উপযোগী। আগে কেন তারা সেটা বুঝতে পারেনি? অর্থাৎ তারা আগে থেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সকরের পরিহার করা উচিত। 

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে তাদের প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে গিয়ে তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের যে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখা উচিত, সেটা আমরা দেখতে পাই না। বরং বিশ্ব সম্প্রদায় এমন ধরনের কথাবার্তা বলছে এবং এমনসব কাজ করছে, যা আসলে এ সমস্যাকে আরও দীর্ঘায়িত করা, জিইয়ে রাখারই শামিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সমস্যাটা বাংলাদেশের ঘাড়ে যেন আরও চেপে থাকে, সে ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে বলেই অনেকে মনে করেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি গত ১৭ নভেম্বর "মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি" বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। প্রস্তাবটি যৌথভাবে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্বারা উত্থাপিত হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপানসহ আন্তঃআঞ্চলিক দেশগুলি এবং দক্ষিণ কোরিয়া। মোট ১০৭টি দেশ এই প্রস্তাবের বিষয়ে কাজ করেছে।

এতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো মোকাবেলাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে এই দায়বদ্ধতা পূরণ করা এবং মিয়ানমারের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার এবং ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের কার্যকর বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

এ প্রস্তাবে কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রণয়নে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ; বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর; কীভাবে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় সে লক্ষ্যে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়নের বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান এবং আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা জেনোসাইড বিষয়ক চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ওপর বিশেষ দৃষ্টিপাত বিষয়ে প্রস্তাবটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটা মাইলফলক হতে পারে। 

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কোনো গৃহিত প্রস্তাবের ওপর ভর করে কার্যকরী বা জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। এর জন্য নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব প্রয়োজন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এই রেজুলেশন কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। এখন এটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। এটা সম্ভব হবে যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই ধরনের প্রস্তাব গৃহিত হয় কারণ নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের সে ক্ষমতা রয়েছে। এখন বাংলাদেশের জন্য সময় এসেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তুলে ধরার। এ জন্য বাংলাদেশকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা উচিত। 

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে একটি বড় সমাধান পাওয়া যেতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ঐকমত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য। চীন, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স- এসব দেশকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। তবে এর জন্য প্রযোজন নতুন বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আরও জোরালো ও দূরদর্শী কূটনৈতিক তৎপরতা। এখনো বলা যাচ্ছে না যে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান আমাদের পক্ষে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস না করা পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ফলাফল আশা করা যায় না।

রোহিঙ্গা সংকট, সবচেয়ে আলোচিত বিশ্ব মানবিক ট্র্যাজেডি পঞ্চম বছরে পদার্পণ করছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে 'গণহত্যা' এবং 'জাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখে বাংলাদেশে তাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কক্সবাজারে এবং নোয়াখালীর ভাসান চরে নবনির্মিত সুযোগ-সুবিধায় ১.১ মিলিয়নের বেশি, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ নবজাতক শিশু যুক্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে রোহিঙ্গাদের বোঝা কাঁধে নিয়েছিলেন কারণ তারা ‘জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যা থেকে তাদের নিজ দেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলো।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু রাষ্ট্রহীন এবং বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি বরং নিরাপত্তা, নিরাপত্তায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য ঐতিহাসিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় শুরু করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশে অবস্থানের বৈধতা প্রমাণ করে। এতে উপকৃত হবেন রোহিঙ্গারা। তবে মিয়ানমারে তাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সমঝোতা স্মারক খুবই ইতিবাচক।

বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সহযোগিতার এই দলিলটি দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুবিধার জন্য কিছু ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সাহায্য করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও স্থায়ীভাবে  মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে। দেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করার জন্য দু’টি কর্তৃপক্ষের দ্বারা এই এমওইউটি পালন করা একটি আনুষ্ঠানিকতা। ভাসানচর ছিটমহল সংক্রান্ত চুক্তিটি দ্বীপে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা ও কার্যক্রমের বিষয়ে সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করবে।

উল্লেখ্য, সহযোগিতার সনদে স্বাক্ষর করার আগে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং দ্বীপে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করেন যাতে তারা তাদের চাহিদা ও মতামত সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও মাঠকর্মী, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ধারণা ও মতামতের আদান-প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে ভাসানচরে মানবিক ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলোা নিয়মিত এবং কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা। এই বিষয়ে, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্য উদার সহায়তা বাড়াতে উৎসাহিত করে, এই সত্যটি স্বীকার করে যে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্য যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা অপারেশন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাব  রয়েছে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দসহ বিশেষ করে জাতিসংঘকে মিয়ানমারকে কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে এবং মিয়ানমার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। এজন্য অনেক দলের আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন। চীন, জাপান, রাশিয়া, বাংলাদেশকে এসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এসব দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর। তারা সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের আর্থিক সহায়তায় দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমরা যদি তাদের বোঝাতে পারি যে এটি মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তাহলে আশা করি সংকট সমাধানের পথ মসৃণ হবে। কারণ তাদের সঙ্গেও মিয়ানমারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

এখন আমাদের কূটনীতির জন্য একটি নতুন কাঠামোতে কাজ করতে হবে যাতে সব আন্তর্জাতিক জোট এবং সংস্থাগুলিকে আরও সক্রিয় করা যায়। জাপানের সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও কিছু করার সুযোগ রয়েছে। চীন, জাপান, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদেও যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তাতে রাজনৈতিকভাবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আমরা সফল হয়েছি তা বলা যাবে না। আমাদের নিরন্তর লক্ষ্য হওয়া উচিত কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা। এক্ষেত্রে আমাদের আরও দ্বিপাক্ষিক কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্য বহুপাক্ষিক হতে হবে। যদি নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য দেশগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মিয়ানমার তার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য আমাদের জন্য বড় আশার উৎস হবে। আমাদের সকল বন্ধু এবং উনয়ন অংশীদারদের সাথে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

কূটনীতির গভীরতা ও দূরদর্শিতা বাড়ানো জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, এবার জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটির প্রস্তাবে ১০৭টি দেশের পূর্ণ সমর্থন আমাদের কূটনৈতিক সাফল্যের প্রমাণ। অনেক দেশ অতীতে এ ধরনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তবে এবারের ব্যতিক্রমী ঘটনা মিয়ানমারের কাছে নতুন বার্তা দেবে যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাদের অবিচল থাকার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক। এই ইস্যুকে দীর্ঘায়িত করার জন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে। বিষয়টি দীর্ঘায়িত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে যাবে বলে তারা মনে করতে পারেন। কিন্তু এবারের ঘটনা তাদের ভাবনায় ছাপ ফেলেছে। এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর যতটা সম্ভব চাপ বাড়াতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank