শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এয়ারলাইন্সকে এগিয়ে যেতে হয় অনেক প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে

মোঃ কামরুল ইসলাম

১১:১৪, ১৯ জানুয়ারি ২০২২

১০৭৬

এয়ারলাইন্সকে এগিয়ে যেতে হয় অনেক প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে

নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী সন্তুষ্টি দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। যাত্রী সেবাই মূল আদ্যপন্ত। যেকোনো পরিস্থিতিতেই যাত্রী সেবাই প্রথম।

প্রতিকূল আবহাওয়া উড়োজাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে সিদ্ধহস্ত। গ্রীষ্ম-বর্ষায় কাল বৈশাখীর তান্ডব উড়োজাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে নানাভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে। সেই সময় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণে অনেক ঝুঁকি নিতে হয় পাইলটদের, এতে অনেক সময় জানমালের ক্ষতিও হয়ে থাকে। খারাপ আবহাওয়ার কারনে উড়োজাহাজের দিক পরিবর্তন করে অন্যকোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে হয়। এতে যেমন সিডিউল বিপর্যয় হয় তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এয়ারলাইন্স কোম্পানীকে। 

শীতকালে ঘণকুয়াশার কারনে ফ্লাইট উঠানামায় বিঘ্ন ঘটে। ভিজিবিলিটি কম থাকার কারনে সিডিউল বিপর্যয় ঘটে, যাত্রীদের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটে। আবার গ্রীষ্মে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটে স্বল্প সময়ের ফ্লাইট থাকায় উড়োজাহাজের অভ্যন্তরেও শীততাপনিয়ন্ত্রণ ঠিকভাবে কার্যকর হয় না। ফলে যাত্রীরা পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়েই ইন-ফ্লাইট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে থাকে। আর এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদেরকে আরামদায়ক সেবা দেয়ারর জন্য যারপরনাই সচেষ্ট থাকে।

আবহাওয়াজনিত কিংবা অন্য কোনো কারনে যদি এয়ারপোর্ট বন্ধ থাকে কিংবা রানওয়ে বন্ধ থাকে তখন অবতরণের অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজগুলো আকাশে নির্দিষ্ট উচ্চতায় এয়ারজটে পড়ে থাকে। রানওয়ে কিংবা ট্যাক্সিওয়েতে লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলো উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকে টাওয়ারের অনুমতি সাপেক্ষে, যা ট্রাফিকজটের সৃষ্টি করে। উড্ডয়ন কিংবা অবতরণের সময় এয়ারজট-ট্রাফিকজটের কারনে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, ফলে এয়ারলাইন্সগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সিডিউলে ব্যাঘাত ঘটে। অথচ এয়ারজট কিংবা ট্রাফিকজটে এয়ারলাইন্সের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

শীতকালে র‌্যাম্প এরিয়াতে মশার আধিক্য দেখা যায়। সন্ধ্যা হতে না হতেই মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মীবাহিনী কষ্ট ভোগ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ যার কাছেই মশা নিধনের দায়িত্ব থাকুক না কেনো, মশা নিধন করা খুবই জরুরী, যা সময়ের দাবি হিসেবে পরিগণিত। নতুবা যাত্রীদের অনুযোগ অভিযোগ বর্তায় এয়ারলাইন্সগুলোর উপর। এয়ারক্রাফটের ভিতর মশার অত্যাচারের কারনে অনেক বিদেশি এয়ারালাইন্স এর ফ্লাইটও বিলম্বে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বিগত দিনে।

বার্ড হিট এভিয়েশনে একটি প্রচলিত শব্দ। বার্ড হিটের কারনে অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন কিংবা অবতরনের সময় বিমানবন্দরের রানওয়ের আশেপাশে বড় বড় পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। বার্ড শুটার থাকার পরও মাঝে মাঝেই দূর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এতে উড়োজাহাজের ক্ষতি হয়ে থাকে। ক্ষিতিগ্রস্ত হয় ফ্লাইট সিডিউল। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এয়ারলাইন্সগুলো।

বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সগুলোকে জেট ফুয়েল এ-ওয়ান বিতরনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অধীনস্ত পদ্মা অয়েলই যারা দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইন্সকে জেট ফুয়েল বিতরণ করে থাকে। একই সময়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট সিডিউল থাকায় পদ্মা অয়েলের সক্ষমতায় ঘাটতি দেখা যায়। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছেড়ে যেতেও বিলম্ব হয়। 

বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিদেশগামী যাত্রীরা চেক-ইন কাউন্টারের কার্যকলাপ শেষ করে ইমিগ্রেশন কাউন্টারের স্বল্পতার কারনেও বোর্ডিং গেটে আসতে সময়ক্ষেপন হয়ে থাকে। আবার বোর্ডিং গেটে সিকিউরিটি চেক-ইন শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছেড়ে যেতে প্রায় সব এয়ারলাইন্সকে বেগ পেতে হয়। শুধু বোর্ডিং গেট নয়, বোর্ডিং ব্রিজের স্বল্পতাও এখন চোখে পড়ছে। দিন দিন যাত্রী বাড়ছে সেইসঙ্গে দেশি- বিদেশি এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। থার্ড টার্মিনালের অপারেশন শুরু হওয়ার পর বোর্ডিং গেট ও ব্রিজের স্বল্পতা কেটে যাবে ধারনা করা যাচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে বিমানবন্দর সড়কে নানাবিধ উন্নয়ন কাজের জন্য যানজট একটি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। পরোক্ষভাবে যাত্রী ভোগান্তির জন্য বিমানবন্দর সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট একটি প্রধান কারণ হয়ে আছে। নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে না পৌঁছানোর ফলে ফ্লাইট ধরতে না পারার কারনে যাত্রী অসন্তোষ তৈরী হতে পারে। এর ফলে যাত্রীরা ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ভ্রমণে অনুৎসাহী হতে পারে। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিমানবন্দরের বাহিরের সড়কের একই চিত্র।

বিমান ভ্রমণ শেষে অবতরণের পূর্ব মূহূর্তে বিমানবন্দরের আশে পাশে এলাকা থেকে বিমানে লেজার রশ্মি ফেলা হয়, যা বড় কোনো দূর্ঘটনার কারন হতে পারে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরী করা খুব বেশি জরুরী। একটি দূর্ঘটনা একটি এয়ারলাইন্স নয় পুরো এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ফ্লাইট অনুপাতে লাগেজ বেল্টের স্বল্পতা আছে বিমানবন্দরে। যেমন আছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে তেমনি আছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পতা বিরাজ করছে। তবে আশার আলো থার্ড টার্মিনালের অপারেশন শুরু হলে এ সমস্যাগুলো থাকবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পরোক্ষভাবে যাত্রীরা অভিযোগ করে থাকে এয়ারলাইন্সগুলো সঠিকসময়ে লাগেজ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না।

গত কয়েকবছরে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই অনুপাতে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। কোনো কারনে বিমানবন্দরে ফ্লাইট উড্ডয়ন না করতে পারলে  প্যাসেঞ্জারদের বসার জন্য পর্যাপ্ত আসন থাকছে না। সেখানেও যাত্রীদের অভিযোগ এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাও করছে না।

প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যত সমস্যা থাকুক না কেনো, আরামদায়ক যাত্রীসেবা দেয়ার দায়িত্ব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। এভিয়েশন ব্যবসায় সেবাই প্রথম। অনেক প্রতিকূলতা পরিস্থিতি যেখানে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই, সেখানেও এয়ারলাইন্সকে সচেষ্ট থাকতে হয় যাত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে যাত্রী সন্তুষ্টির জন্য। যাত্রীরা যাতে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতে না পরেন, সেদিকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। বিমানবন্দর হচ্ছে একটি দেশের ড্রয়িং রুমের মতো। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় ড্রয়িং রুমের সৌন্দর্য বর্ধণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মোঃ কামরুল ইসলাম: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা গ্রুপ।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank