শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নিক্তির মাপকাঠীতে ঝুলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফল, অপেক্ষা বাড়বেই

মাহমুদ মেনন, সম্পাদক

২১:৩৩, ৪ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ০৭:৩৬, ৫ নভেম্বর ২০২০

১৩০০

নিক্তির মাপকাঠীতে ঝুলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফল, অপেক্ষা বাড়বেই

নিক্তির মাপকাঠীতে ঝুলছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল। এমন একটি কথা হয়তো ইলেকশন নাইটের আধাজাগা, আধাঘুমের মানুষগুলো সকাল বেলা টেলিভিশন খুলে, কিংবা মিনি স্ক্রিনে চোখ ফেলে দেখতে কিংবা বুঝতে পারছেন। ফল এখনো ঘোষণা হয়নি। দেখা যাচ্ছে ফল এখন দিল্লি দুরস্ত।

যারা নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন ৩ নভেম্বর দিনের প্রথম বেলায় তাদেরও অপেক্ষার চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। যারা আগাম ভোট দিয়েছেন তাদের তো অপেক্ষা আগে থেকেই। 

ভোট দিয়ে কে না দেখতে চায় পছন্দের মানুষটি জয়ী হলেন কিনা? সকলেই চায়। কিন্তু আমেরিকানদের এবারের নির্বাচন বহুলাংশে বহু ব্যাকরণে ঐতিহাসিক যেমন হয়েছে, ভোটের ফলেও তেমনি ঘটেছে ব্যতিক্রমী কিছু। 

২০১৬ সালের নির্বাচনটি আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে ঘুরে কাভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১২'রও রয়েছে। তবে সবচেয়ে স্মরণযোগ্য অভিজ্ঞতা হয়েছে ২০১৬'র নির্বাচনের রাতে ফল ঘোষণার সময়টিতেই। সে রাতে হিলারি ক্লিনটন যেখান থেকে ভোটের ফল দেখছিলেন, আর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিজয় সেলিব্রেশনের, সেই জ্যাকব জেভিট সেন্টারে অবস্থান নিয়েছিলাম সন্ধ্যা থেকেই। গোটা দিনে ভোটকেন্দ্রগুলো দেখে, কিংবা ভোটের দিনের আগে কয়েক রাজ্যে ঘুরে ঘুরে একটিবারের মতোও মনে হয়নি, অবস্থান নিতে হবে ট্রাম্প সেন্টারে, জ্যাকব জেভিটে নয়। ফলে রাত বাড়ার পর কয়েক ব্লক পায়ে হেঁটে ছুটতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিক্টরি স্পিচের আশায়। 

এবার তেমন পরিস্থিতি নয়। নির্বাচনের রাতে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়নি সাংবাদিকদের। কিন্তু বিষয়টি যে রাতেই সুরাহা হবে না, তেমনটা হয়তো অনেকের ভাবনাতেই ছিলো না। শেষ পর্যন্ত তাই হলো এবং একটা দোলাচলেই দুলছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভাগ্য। 

এখন পর্যন্ত সবশেষ পরিস্থিতির পরিসংখ্যান তুলে ধরলেই পাঠক বিষয়টি বুঝতে পারবেন। উপরের যে ছবিটি দেখছেন এই একই চিত্র ঝুলছে মিডিয়াগুলোর সম্মুখ পেজে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে। ইলেকশন নাইটে রাত ১২টার দিকেও দেখা যাচ্ছিলো- জো বাইডেন- ২২৭, ডোনাল্ড ট্রাম্প- ২১৩ এবং বাকি রয়েছে ৯৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের সিদ্ধান্ত। ইলেকশন ডে'র পরের দিন এই লেখা তৈরির সময় স্থানীয় ঘড়িতে রাত ৯টা, যুক্তরাষ্ট্রে সকাল ১০টা। তখনও একই চিত্র। 

ছবিতে দেখা যাচ্ছে ৮টি রাজ্যের ফল ঘোষণা তখনও বাকি। পাশাপাশি তিন রাজ্য উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া। এগুলো উত্তর পূর্বাঞ্চলীয়। একটু দুরে মাঝে মেরিল্যান্ড ভার্জিনিয়া ছাড়িয়ে নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়া এই দুই রাজ্যের ফল ঘোষণা হয়নি। তো এদিকটায় পাঁচ রাজ্য ফাঁকা পড়ে আছে। ওদিকে পশ্চিমাঞ্চলের নেভাডা ও অ্যারিজোনার ফল ঘোষণাও বাকি। আর দক্ষিণ-পশ্চিমের বিচ্ছিন্ন রাজ্য আলাস্কার ফলও আসেনি। 

কেনো আসেনি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এসব রাজ্যের ভোটের পরিসংখ্যান জানা জরুরি। এবং ধরেই নেওয়া যাচ্ছে এগুলোতে এখন মেইল-ইন ভোটের গণনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এবং সেটা একটা জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 

নেভাডা ও অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এর মধ্যে নেভাডায় ৮৮ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। তাতে বাইডেন ৪৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮.৭ শতাংশ ভোট। সুতরাং বাকি ১২ শতাংশ ভোটই আসলে নির্নয়ক, কে জয়ী হবেন এখানে। অ্যারিজোনায় ভোট গণনা হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এখানে বাইডেন পেয়েছেন ৫১ শতাংশ। ট্রাম্প পেয়েছন ৪৭.৬ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। 

আলাস্কায় ভোট গণনা হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। যার মধ্যে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ৬১.৪ শতাংশ পেয়ে। বাইডেন পেয়েছেন ৩৪.৭ শতাংশ। এদিকে উইসকনসিনে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন ৪৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮.৮ শতাংশ। আর ভোট গণনা হয়েছে ৯৭ শতাংশ। সুতরাং বাকি ৩ শতাংশ না গুনে এখানকার ফল দেওয়া সম্ভব নয়। পাশেই মিশিগানে জো বাইবেন এখন এগিয়ে আছেন ৪৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে। আর ট্রাম্প এখানে পেয়েছেন ৪৯.১ শতাংশ। এখনো ভোট গণনা বাকি রয়েছে ১০ শতাংশ। সেগুলো গুনতে হবে সে কথা বলাই বাহুল্য।

এতক্ষণ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হচ্ছিলো পেনসিলভানিয়াকে। কিন্তু মিশিগান ও উইসকনসিনে বাইডেন নিক্তির মাপে হলেও সামান্য এগিয়ে যাওয়ায় তা আর থাকছে না। 
সে ব্যাখ্যায় পড়ে আসছি। আর আগে পেনসিলভানিয়ার পরিসংখ্যানটি তুলে ধরা যাক। এখানে ৭৬ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ৫৪.৮ শতাংশ নিয়ে। বাইডেন পেয়েছেন ৪৩.৯ শতাংশ। কিন্তু বাকি ২৪ শতাংশের হিসাব না কষে এই রাজ্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করা যাচ্ছে না। 

নর্থ ক্যারোলিনায় ভোট গণনা শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০.১ শতাংশ পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। আর বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.৭ শতাংশ। এখানেও ব্যবধান সামান্যই। কিন্তু বাকি ভোট না গুনে কিছু বলার সুযোগ নেই। একই চিত্র জর্জিয়াতেও। এখানে ৯২ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ৫০.৫ শতাংশ নিয়ে। বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.৩ শতাংশ। বাকি ৮ শতাংশই বলে দেবে কে জিতবেন এখানে। 

এবার ইলেক্টোরাল কলেজের হিসাব নিকাশটি দেখে নেয়া যাক। এরইমধ্যে বাইডেন নিশ্চিত করেছেন ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট। ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন ২১৩টি। ২৭০ এর ভিক্টরি লাইন ছুঁতে বাইডেনের দরকার ৪৩টি ইলক্টোরাল ভোট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের দরকার ৫৭টি।

বাইডেন যে ক'টিতে সামান্যমাত্রায় হলেও এগিয়ে রয়েছেন তা যদি জিততে পারেন তাহলে তার পক্ষে আসবে নেভাডার ৬টি, অ্যারিজোনার ১১টি, উইসকনসিনের ১০টি ও মিশিগানের ১৬টি মিলে মোট ৪৩টি। তাতে হয়ে যাবে ২৭০টি। কিন্তু তা স্রেফ সময়ই বলতে পারবে। আর তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আইন বলছে, এক শতাংশের নিচে ভোটের ব্যাবধান থাকলে আইনের আশ্রয় নিয়ে পুনর্গণনা চাওয়া যাবে। আর ট্রাম্প যেগুলোতে এগিয়ে রয়েছেন তার সবগুলো যদি জিতে যান পেনসিলভানিয়ার ২০টি, নর্থ ক্যারোলিনার ১৫, জর্জিয়ার ১৬ ও আলাস্কার ৩টি মিলে মোট ৫৪টি। যা প্রয়োজনের চেয়ে ৩টি কম। 

তাহলে, এমন একটি কেনো, একাধিক ভোরেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের ঘুম থেকে জেগে চোখ কচলে দেখতে হবে- ভোটের ফলের কিছু হলো কি না? অপেক্ষা করাই এখন একমাত্র কাজ।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank