রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মার্কিন মসনদ কার, ট্রাম্প না বাইডেনের?

মো. হাসান তারেক, শিক্ষক

১৬:০৮, ৩০ অক্টোবর ২০২০

২০৬৬

মার্কিন মসনদ কার, ট্রাম্প না বাইডেনের?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। শুধুমাত্র সে দেশেই নয়, বিগত কয়েক মাস ধরেই সারাবিশ্বের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মার্কিন জনগণ এক অভূতপূর্ব সময়ের স্বাক্ষী হতে চলেছে। 

যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণে বেহালদশা, তীব্র মেরুকরণ, হঠাৎ করে তৈরি হওয়া দেশব্যাপী অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং পুলিশ বিরোধী আন্দোলন ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করেছে। কার্যত বলা যায় যে, এই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকাংশে ব্যর্থ। এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার নির্বাচিত হন তাহলে অনেক নীতি - নিয়মের পরিবর্তন হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে তার সংকীর্ণ মানসিকতারই অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। তার জয়ের সাথে জয় ঘটবে তার ঐদ্ধত্যের, তার স্বেচ্ছাচারিতার।
 
এরই মধ্যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ঐদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছেন ২৯ সেপ্টেম্বরের প্রথম টিভি বির্তকেই। এই বির্তকেই দুই প্রার্থী তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এই বির্তকটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল বির্তক বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। বির্তকের এক পর্যায়ে অতিশয় ভদ্রলোক বলে পরিচিত জো বাইডেনকেও বলতে শোনা গেল- " উইল ইউ শাট আপ ম্যান"।  বির্তকে জয়ী হবার জন্য যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পলিসি নিয়ে থাকেন তাহলে হয়ত তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে, জনগণের মন কিন্তু কেড়েছেন বিনয়ী জো বাইডেন।

এখন পর্যন্ত করা সকল জনমত জরিপ থেকে এতটুকু আন্দাজ করা যায় যে, জনপ্রিয়তার দৌড়ে কে কতটুকু এগিয়েছে বা পিছিয়েছে। কিন্তু সমীক্ষা যে সব সময় মিলে এমনটাও কিন্তু নয়। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে ৩০ লাখ ভোটে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হেসেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এবার আসা যাক, ২০২০ সালের নির্বাচনের সমীক্ষার বিশ্লেষণে। এবারের সমীক্ষার বেশিরভাগ ফলই জো বাইডেনের পক্ষে। যদিও গত কয়েকদিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থা কিছুটা ফিরেছে। 
গত কয়েক সপ্তাহের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল জো বাইডেনের পক্ষে ৪৯ শতাংশ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৪৫ শতাংশ সমর্থন। 

২০১৬ সালের নির্বাচনের সমীক্ষায় হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান এত পরিষ্কার ছিল না। আলোচিত সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে সেই ফল নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ভিন্নতর। এখানে জনগণ সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচন করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ পরোক্ষ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে থাকেন। তারা ভোট দেয় নিজ নিজ রাজ্যের প্রতিনিধিদের। সেই প্রতিনিধিরা কত আসন পেল সেই অনুযায়ী স্হির হয় সেই রাজ্যে কোন দল জয়ী। এই হিসাব বের করে ফেলার পর সেই রাজ্যের সমস্ত ভোট সেই দলের জাতীয় স্তরের প্রার্থীর নামের পাশে জমা হয়। ধরুন, কোন রাজ্যে যদি ১১টি সিট থাকে, তীব্র প্রতিযোগিতার পর ৬-৫ ফলে জেতে, তাহলেও শেষ পর্যন্ত ১১টিই বিজয়ী দলের নামের পাশে জমা হবে। এভাবে সকল রাজ্য মিলিয়ে যিনি ২৭০টি বা তার বেশি সিট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত দুটি দল বেশি শক্তিশালী একটি হচ্ছে, রিপাবলিকান যারা গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি নামেও পরিচিত এবং অপর বৃহত্তর রাজনৈতিক দলটি হচ্ছে ডেমোক্র্যাট। রিপাবলিকানরা মূখ্যত রক্ষণশীল নীতিতে বিশ্বাসী। রিপাবলিকান দলের এবারের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা নীতিতে, উদারপন্থী। এবারের নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জো বাইডেন। 
পরিবেশ নীতি, অভিবাসন নীতি, বৈদেশিক নীতি, স্বাস্হ্য, কর্মসংস্হানসহ বিভিন্ন নীতিতে তাদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে।

মার্কিন রাজনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কিছু কিছু রাজ্য ঐতিহ্যগতভাবেই ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের ভোটব্যাংক। একারণে, এই রাজ্যগুলোর ফলাফল অনুমেয়। তবে, এর বাইরে কিছু রাজ্য আছে যাদের সুইং স্টেটস বা দোদুল্যমান রাজ্য বলা হয়। এসকল রাজ্যের ফলাফল নিয়ত পরিবর্তনশীল। এবারের নির্বাচনের ফলাফলেও এসকল সুইং স্টেটস নির্বাচনী আর্কষণের শীর্ষে। পৃথিবীর শক্তিশালী এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। ৪৫ জন অতীত মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মাত্র ১০ জন পুর্ননির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন। অথাৎ, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া কিছুটা সহজতর।

তাহলে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পও দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন? বলা কিন্তু বেশ মুশকিল। কেননা, পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের চেয়ে বেশি বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার সময়ে বর্ণবাদ ছড়িয়েছে সারা মার্কিন মুল্লুকে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালেই মার্কিনীরা সবচেয়ে বেশি বিভাজিত হয়েছে। তাছাড়া, চর্তুথ প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পেই তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। 

তবে, নির্বাচিত কে হবেন জো বাইডেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প তা নির্ধারিত হবে ব্যাটল গ্রাউন্ড খ্যাত অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনা,ফ্লোরিডা, জর্জিয়া,মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইন,পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের মত রাজ্যগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে। 

একথা তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রুদ্ধশ্বাস এই নির্বাচনের ফলাফলের জন্য জনতার রায়ের জন্য তাকিয়ে থাকা শ্রেয়।

মো. হাসান তারেক,  
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, 
ডক্টর মালিকা কলেজ,ঢাকা। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank