মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো’ আপ্তবাক্য ও প্রধানমন্ত্রীর ৭ উক্তি

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক

১২:৩২, ২৯ জুলাই ২০২০

আপডেট: ১৪:০২, ১১ আগস্ট ২০২০

১৪৫১

‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো’ আপ্তবাক্য ও প্রধানমন্ত্রীর ৭ উক্তি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের এই সংকটময় সময়ে যে সাতটি আহ্বান জানিয়েছিলেন গত এপ্রিলে তার মূল সুরটি এমনই ছিলো— আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়। তিনি সকলকে নিজের মাঝে শক্তি ধারণ করতে বলেছিলেন। নিজেরে নিজেই জয় করতে বলেছেন। 

বাঙালির শক্তি তার জানা। ঐতিহ্য, চেতনাবোধও তার জানা। আর সে কারণেই এই আহ্বান। আসুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারিত সাতটি বাক্যে সাতটি আহ্বানকেই আমরা একটু গভীর থেকে উপলব্দি করার চেষ্টা করি। বুঝার চেষ্টা করি এর অন্তরগত বিশ্লেষণ থেকে। 

সাতটি বাণীর মধ্যে প্রথম যে কথাটি তিনি বলেছেন তা হচ্ছে- ‘করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়’। 

সত্যিই তাই। পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। বিশ্বের সবশেষ হিসাবে- করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মোট সংখ্যার মধ্য ২০ জুলাই ২০২০ তারিখ পর্যন্ত ৯৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৫ জনের চিকিতসা সম্পন্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার ৩১৭ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। মারা গেছেন ৬ লাখ ৯ হাজার ৮ জন। যা মোট আক্রান্তের ৭ শতাংশ। স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বজুড়ে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এই মহামারিতে সে সংখ্যা দশ লাখেরও নিচে। এটি সত্য- একটি মৃত্যুও কারো কাম্য নয়। কিন্ত তারপরেও কথা থেকে যায়। মৃত্যুর মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়েও সকল কথার আগে ঠিক এই কথাটিই কেন বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা?— তার পেছনে বোধকরি ওই পরিসংখ্যানের বিবেচনা নয়, বরং কাজ করেছে অনন্য এক গভীর বিবেচনা বোধ। তা হচ্ছে- মানুষের মনের শক্তি অটুট রাখা। মনের শক্তিই সবচেয়ে বড়। করোনা ভাইরাস যখন অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়লো, তখন সত্যিই দেখা গেলো- মনের শক্তি দিয়েই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো লড়াই করা যায়। জয়ীও হওয়া যায়। ধারনা করছি, সেই শক্তিটিই প্রধানমন্ত্রী জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন সবার আগে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ছয় মাসের মাথায় এসে পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি উক্তি সে বক্তব্যকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি বলেছেন- ‘এই ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠে’। এ বক্তব্য সম্পূর্ণ বাস্তব ও তথ্য নির্ভর।

ভ্যাকসিন যেহেতু এখনো আবিষ্কার হয়নি, মানুষের মনোবলই জয় করছে করোনাকে। বিশ্বে ঠিক এই মূহূর্তে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের মধ্যে খুব বেশি মানুষ ততটা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নেই। ২০ জুলাইয়ের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন ৫২ লাখ ৪১ হাজার ৫শ’ ১৬ জন। যাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ ক্রিটিক্যাল অবস্থায় রয়েছে।     

সেই গ্লাসের ভরা অংশ আর খালি অংশ দেখার মানসিক গড়নের মতোই বিষয়টি। আমাদের দেখতে হবে, মৃত্যু বেশি নয়, যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের সংখ্যাই বেশি। এবং যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের কথাই উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। সেটা যতটা তুলে ধরতে পারবো, নতুন আক্রান্ত মানুষগুলো তত বেশি মনোবল পাবে। 

হ্যাঁ প্রতিটি মৃত্যুই অনভিপ্রেত। একটি মৃত্যুও কাম্য নয় কারো। একজন মানবিক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার কাছেতো নয়ই। তবে যে কোনো সংকটকালে, যখন প্রকৃতি নিজেই দাঁড়িয়ে যায় আপনার বিপরীতে, তখন আপনার সামান্য শক্তি দিয়ে যে সামান্য অর্জনটুকুই করতে পারছেন, সেটাকেই বড় করে দেখতে হবে। আমরা যতটা না আঘাতে মরি- তার চেয়ে মরমেই মরি বেশি। সেই মরমে মৃত্যু যাতে না হয়। ভয়েই যেনো অর্ধেক কাবু হয়ে না পড়ি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সে শক্তিই যোগানোর চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

যারা জানতে চান আসলে কী ঘটছে- তাদের জন্যই এই তথ্য। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বে ১১ লাখের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। মৃত্যু হয়েছে ৫৯ হাজবরের কাছাকাছি। তার মানেই হচ্ছে ৯৫ শতাংশ আক্রান্ত মানুষই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে। আর যাদের মৃত্যু হচ্ছে- তাদের মৃত্যুর প্রধানতম কারণটিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার আহ্বানের তৃতীয় বাক্যে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন- ‘নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়ষ্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে’। 
বিষয়টি তেমনই। বিশ্বের দেশে দেশে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে সেটাই বাস্তবতা। বয়ঃবৃদ্ধরা, যাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেকাংশেই কমে গেছে তাদের প্রাণ-সংহার বেশি হচ্ছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই বলে যে- ‘আপন পরিবারের সংবেদনশীল মানুষটির দিকে নজর দিন’। এই আহ্বানটিও সময়োপযোগী ও যথার্থ। 

বাঙালি সংস্কৃতিতে পরিবারে বয়ষ্কদের প্রতি নজর রাখা, তাদের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন রাখা ঐতিহ্যগত। করোনা ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়লো, তখন বিশ্বের দেশে দেশে এই বয়ষ্কদের কীভাবে রক্ষা করা যাবে সে নিয়েই দেখা গেছে বাড়তি চিন্তা। বিবিসি একটি খবরে জানাচ্ছিলো, সে সময় সন্তানদের জন্য একটি সময় বেঁধে দিয়ে যার যার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসার পরমর্শ দেয় দেশটির সরকার। কারণ একটি নির্দিষ্ট তারিখের পর সকল বয়ষ্ক মানুষের গৃহবন্দি অবস্থায় থাকা নিশ্চিত করা হবে। হয়েছেও তাই। ওই দেশে সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। তাই এই উদ্যোগ। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটা ভিন্ন। এখানে বয়ষ্করা সন্তানের সঙ্গেই থাকেন। সেখানে বাড়তি যেটুকু দরকার- করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে তারা যেহেতু সবচেয়ে সংবেদনশীল, তাদের প্রতি একটু বাড়তি নজর রাখা। সেই আহ্বানটিই জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

পঞ্চম বাক্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানেন- হুজুগে বাঙালি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক কাণ্ডই ঘটিয়ে ফেলতে পারে। সুতরাং তাদের অভয়বাণি শোনানোর পাশাপাশি ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে পড়ারও আহ্বানটি এসেছে তার পক্ষ থেকে। সাথে সাথে তিনি এও বলেছেন- ‘আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনার বিলোপ ঘটায়’। মনস্তত্ত্বও সে কথাই বলে। এবং যার প্রমাণ অনেকই রয়েছে আমাদের সামনে। ফলে সেটিও মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া একটি প্রধানতম দায়িত্ব বলেই মনে করেছেন দেশের সাধারণ মানুষের অভিভাবক। 

যষ্ঠ আহ্বানে তিনি বলেছেন- ‘আপনি, পরিবারের সদস্যগণ এবং প্রতিবেশিরা যেন সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন’। করোনার এই প্রাদুর্ভাবের সময়, নিজে সুস্থ থাকাই যথেষ্ট নয়, পরিবারের কেউ যাতে অসুস্থ না হয় সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি। আর এখন নিজে বা পরিবার ঝুঁকিমুক্ত থাকলেই চলবে না একটি যুথবদ্ধ সমাজে প্রতিবেশিকেও রাখতে হবে ঝুঁকি ও শঙ্কামুক্ত। সে কথাটিও স্মরণ করিয়ে দিতেও ভোলেননি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

‘আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে’- এটাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবশেষ আহবান। মানুষ বাঁচলে, দেশ বাঁচবে সুতরাং প্রতিটি মানুষই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। 

করোনা ভাইরাসের এই মহমারীকালে সাধারণের মাঝে সচেতনতা জাগ্রত করে তুলতে, তাদের নিজেদের মাঝে শক্তি ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সাতটি আহ্বান আমাদের প্রত্যেকের মন ও মননে প্রোথিত থাকুক। কাজে ও আচরণে ঘটুক তার সঠিক প্রয়োগ ও প্রতিফলন, এটাই কামনা করছি।
 
মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক 
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank