শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যার সাথে যুক্ত জাতির বিকাশ, রাষ্ট্রের জন্ম

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও বিশ্লেষক

১৮:৫৩, ৬ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৮:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০২১

২৭৪১

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যার সাথে যুক্ত জাতির বিকাশ, রাষ্ট্রের জন্ম

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নয়, একটি শহরের মানুষের সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠতে এবং ধীরে ধীরে সোজা হয়ে ওঠার ইতিহাস, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং রাজনৈতিক বিবর্তন এবং এই পিছিয়ে পড়া শহরের উত্থান। জাতীয় শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এ দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের উত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গৌরবময় ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের চিত্তের ও আবেগের একটা গভীর সম্পর্ক। এ দেশের মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্রাণকেন্দ্র্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত রয়েছে বাঙালি জাতির বিকাশ ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন; বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছেন; অসীম সাহসিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বাধীনতার সংগ্রামে ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে; প্রিয় মাতৃভূমির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে সকল বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁরা সদা-সর্বদা সক্রিয় রয়েছেন। তাই, দেশের সকল সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের লালনকারী প্রধান প্রতিষ্ঠানরূপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল। এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯২১ সালের ১ জুলাই, সীমিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর ছিলেন তৎকালীন প্রাদেশিক গভর্নর আলেকজান্ডার জর্জ রবার্ট বুয়ার। প্রথম উপাচার্য ছিলেন পি জে হার্টোগ। তিনি সতেরো বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন। পূর্ববাংলার জনগণের উচ্চ শিক্ষায় যে অগ্রগতি হয়েছিল তা বজায় রাখতে ঢাবি এর প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণেই পরবর্তীতে পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং এই আধুনিক শিক্ষার সহায়তায় তারা সরকারী চাকরিতে প্রবেশের সুযোগও পেয়েছিলেন। এটি কেবল অর্থনীতির উন্নতিই করেনি তবে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রণীও তৈরি করেছিলো।

ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মোগলটুলীতে বসবাস ছিল তার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সংযুক্ত ছাত্র ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমি ঢাকায় এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, আইন পড়ব। বই পুস্তক কিছু কিনলাম।’

এই বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। বঙ্গবন্ধুর কেবল শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্যও ছিলেন সমানে সমান। ১৯৪৮ সালের মার্চে ন্যায্য দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের করা আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। কর্মচারীরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট ডাকলে সংহতি জানিয়ে ছাত্রলীগ তাদের পাশে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধু তখন ছাত্রলীগের প্রাণভোমরা। এই ঘটনায় ২৭ জন ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্ষোভের শিকার হন। বঙ্গবন্ধুও ছিলেন ওই ২৭ জনের একজন। বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তাদের প্রত্যেককেই দিতে হবে ১৫ টাকা করে জরিমানা। ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে জরিমানা দেওয়ার লোক বঙ্গবন্ধু নন। কর্তপক্ষের চাওয়া অনুযায়ী, ক্ষমা চাইলে শাস্তি মওকুফ হতো; বঙ্গবন্ধু সেটাও চাননি।

সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু চলে গেলেন ভিসির বাসভবনে। আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে পুলিশ ডেকে আন্দোলনরত সবাইকে গ্রেফতার করিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান উপাচার্য ড. মোয়াজ্জেম। এবার বন্ডে সই করে কারামুক্তির সুযোগ আসে। শাস্তিপ্রাপ্ত সকলেই একে একে বন্ডে সই করে কারামুক্ত হয়েছিলেন। একমাত্র মানুষ, যিনি এই সুযোগটুকুও গ্রাহ্য করেননি, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফলস্বরূপ ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কার করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় চল্লিশ বছর পরও এই বহিষ্কারাদেশ বহাল ছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতির উপর জারি করা এই বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে দেশ স্বাধীনের পরও সময় নেওয়া হয় চার দশক। শেষে ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী হিসাবে গণ্য করে ওই বছর ১৪ আগস্টের সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর অধীনে ১৮তম সংবিধি সংযোজনের মধ্য দিয়ে ঢাবিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’ নামে স্বতন্ত্র একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সিনেট সদস্য ও সাংবাদিক নেতা জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল। বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন ও তার অনন্য অবদান এবং নেতৃত্বের উপর উচ্চতর গবেষণা ও চর্চা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল, সঙ্গীত, শিল্পকলা, আইন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের জন্য একাডেমিক মিউজিয়াম, সংগ্রহশালা, পরীক্ষাগার, কর্মশিবির স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসংখ্য ভাবনা ছিল। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১১ নম্বর আদেশের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। কেবল বঙ্গবন্ধুই নন; শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার পরিবারের আরও অনেকেই। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। পুত্রবধূ সুলতানা কামালও ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত একশ বছরে নিঃসন্দেহে বহু ভালো ভালো গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবর্ষে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরম্পরা আমাদের বহন করে নিয়ে যেতে হবে নতুন প্রজন্মকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারায় ও যুগের চাহিদার নিরিখে আমাদের পড়ার বিষয়, পাঠ্যসূচি, পাঠদান, গবেষণা ও নব নব উদ্ভাবন নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যে ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ’ চালু হয়েছে। এই স্কলারশিপের আওতায় আমাদের তরুণ শিক্ষকরা বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান বাড়ছে এবং দেশের উন্নয়নে তা কাজে লাগবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণায় আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে মুজিববর্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ ফর ফরেন স্টুডেন্টস-এর আওতায় দশজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশার কথা, এই বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিরন্তর তাগিদ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিভাগ, ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যায় সবার উপরে। সে ক্ষেত্রে পড়াশোনায় আগ্রহের গতিশীলতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করবো, যোগাযোগ ব্যবস্থার এই চরম উৎকর্ষের যুগে নতুন নতুন জ্ঞান ও উদ্ভাবন নিয়ে, সৃজনশীল বিষয়াদি নিয়ে বুদ্ধিদৃপ্ত ছাত্র-শিক্ষকরা নিজেদের শাণিত করবেন। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবেন।

ঢাবি সত্যিই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত চাহিদা পূরণ করে চলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে জাতির সেবা করে চলেছে। ঢাবির ভর্তি পরীক্ষাগুলি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। ঢাবি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সকলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ছিলো বিশ্বমানের। দ্বিতীয়ত, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ঢাবির গৌরবময় অতীত নিয়ে কথা বলার সময় কেউ তা এড়াতে পারে না। আমরা যখনই কোন আলোচনা সামনে আসে তখন আমরা সর্বদা অতীত সম্পর্কে কথা বলি। কেউ বলেন না কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় একবিংশ শতাব্দীর দাবিগুলির সাথে লড়াই করতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে, ঢাবির ছাত্র-ছাত্রীদের দেশ গঠনের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রস্তুত করা উচিত? এই প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন স্নাতক সফলভাবে কর্পোরেট বিশ্বে প্রবেশ করতে পারেন বা নতুন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অভিযোজন করবেন তা কেউ বলেন না।

কিছু বুদ্ধিজীবী সমালোচনা করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাঁদের দাবি, গণতন্ত্রের নামে ঢাবিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁরা দাবি করেন যে গত ১০০ বছরে ঢাবির অনেক কিছু বদলেছে। ঢাবি একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রের উৎস হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনো ‘একাডেমিক ডিসকোর্স’ নেই বলে মনে করেন। তবে তাঁরা এটি স্বীকার করেন যে এই বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তান আমলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালন করতে পারছেনা কিংবা অন্য বিশ্বদ্যিালয় থেকে পিছিয়ে পড়ছে সেটা বের করার সময়  এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত একটি শিক্ষার জায়গা এবং তারপরে একটি গবেষণা কেন্দ্র। তাঁদের কথাও উড়িয়ে দেয়া যায় না এই বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের আরো মনোনিবেশ করা উচিত।

বেশ কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয় প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, এর ফলে শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তা ছাড়া গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো ধরনের সেশনজটের মুখোমুখি হতে হয়নি যা একসময় ৪-৫ বছরের কোর্স ৭-৮ বছর লাগত। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাইকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, গবেষণাকাজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে এবং এ খাতে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা থেকে জোর দিয়েই বলা যায়, এই সমস্যাগুলোও খুব দ্রুতই এ বিশ্ববিদ্যালয় কাটিয়ে উঠবে এবং নিজের গৌরবকে করবে আরও সুসংহত হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল যুগে লিফট ও ইন্টারনেটসহ আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব সংযুক্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিভাগ, ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যায় সবার উপরে। সে ক্ষেত্রে পড়াশোনায় আগ্রহের গতিশীলতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করবো, যোগাযোগ ব্যবস্থার এই চরম উৎকর্ষের যুগে নতুন নতুন জ্ঞান ও উদ্ভাবন নিয়ে, সৃজনশীল বিষয়াদি নিয়ে বুদ্ধিদৃপ্ত ছাত্র-শিক্ষকরা নিজেদের শাণিত করবেন। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবেন।

বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শুভ ও অশুভ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছে, এটা আমাদের আশাবাদী করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদার, মানবিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবে এটাই আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা। আজ আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে, জয়তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এগিয়ে যাও নিরন্তর।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক, রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank