লুকোচুরির লকডাউন!
লুকোচুরির লকডাউন!
এক তারিখ থেকে সব গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি খুলে দেয়া হচ্ছে। তার মানে হলো দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ৮ শো ফেব্রিকস ইন্ডাস্ট্রি, প্রায় সাড়ে ৪ শো ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি, প্রায় ২৫০ টি ডাইং ফ্যাক্টরি, এছাড়া দুহাজারের কাছাকাছি ওয়াসিং ও এ্যাক্সেসারিজ ফ্যাক্টরি ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য অফিস ও কারখানায় কর্মরত লোক মিলিয়ে ঢাকা ও এর আশেপাশে কোটিখানিকের বেশি লোক ঘরের বাইরে বেড়িয়ে যাবে। আর কারখানাগুলো চললে এর আশেপাশের খাওয়ার দোকান, মুদি দোকান, চায়ের স্টল কোনটাই বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এখন থাকলো বাকি ৫০ লাখ দোকান ব্যবসায়ী। এরাও মনে হয়না ধৈর্য ধরে বসে থাকতে পারবে।
এক তারিখ থেকে গণপরিবহন না চললে সবাই ছোট ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে যাতায়াত করবে, রাস্তায় লোকে লোকারণ্য থাকবে, রিক্সাভ্যান, বাইকে শেয়ার রাইড কোনো কিছুই আটকানো যাবে না। ফেরির সেই গিজগিজ করা লোকের ভীড়ের ছবিও আমরা কাল থেকে দেখবো। তার মধ্যে এখন ঢাকার বাইরের বেশিরভাগ করোনা রুগীই এখন ঢাকার চারিদিকের হাসপাতালে ছড়ানো। তার অর্থ দাড়ালো স্বাস্থ্যবিধি মানানোর কোনো পথই আর খোলা থাকলো না।
প্রশ্ন হলো ১৪ দিনের লকডাউনও যদি সরকার ঠিক মতো পালন না করাতে পারে তাহলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সেই ব্রেক তো আর আনা সম্ভব হলো না। তাহলে এইকয়দিনের অদ্ভুত এক লুকোচুরি খেলার কি দরকার ছিলো? এই কয়দিন সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করাটা তো তাহলে কোনো কাজেই আসলো না।
এছাড়া নৈতিকতার দিক দিয়ে বিচার করলে শুধু গার্মেন্টসের মালিকরাই কি এদেশের নাগরিক? আর অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, দোকান মালিক, পরিবহন মালিক, রেস্তোরাঁ মালিক এরা কি দেশের নাগরিক না? এদের জীবিকা আটকে দিয়ে, বেঁচে থাকার দায়িত্ব কি কেউ নিয়েছে?
এই অবিমৃষ্যকারী ও হঠকারী সিদ্ধান্ত করোনায় মৃত্যু মিছিলকে আরো লম্বাই করবে। এখন করোনার প্রতিদিনের সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ন্ত্রণ ও কমিয়ে দেখানো হবে না তো?
ইতিহাস বলে যে যেকোনো মহামারী বাড়তে বাড়তে একসময় চুড়ায় উঠে আর তারপর ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে আর তারপর এক পর্যায় একদম কমে গিয়ে মানবগোষ্ঠীর জন্য সহনীয় হয়ে আসে। মানুষ যদি মহামারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নাও নেয় তাহলেও এরকমই হয়।
চলুন আমরাও এসব লকডাউনের ভাওতাবাজির উপর নির্ভর না করে বিধাতা আর প্রকৃতির উপর সব ছেড়ে দিয়ে শুধু মাস্ক পড়ে, জীবাণু নাশক ব্যবহার করে, হাত ধুয়ে আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের রক্ষা করি দেখবেন সরকার একদিন বুকফুলিয়ে বিশ্বকে বলবে অত্যন্ত সুদক্ষ হাতে বাংলাদেশ মহামারী নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ বলবে, করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশ্বের রোল মডেল।
ওমর তাসিক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার দিন শেষ, চার উপায়ে মধ্য আয়ের দেশ