প্রেম ভালোবাসা কি জাতীয় সমস্যা!
প্রেম ভালোবাসা কি জাতীয় সমস্যা!
পর পর তিনটা নাটক দেখলাম। এখন নাটক দেখা অনেক সহজ। ৩৫ মিনিট কিংবা ৪০ মিনিট ব্যাপ্তি। অল্পের মধ্যেই ঘটনাগুলো শেষ হয়। ব্যস্ত সময়ে সবার জন্যই খুব ভালো বিনোদন মাধ্যম।
কিন্তু সমস্যা মনে হলো অন্য জায়গায়। প্রতিটা নাটকে একই অবস্থা- প্রেম, প্রেম আর প্রেম। এই প্রেম আবার পরিবারের প্রতি না, বন্ধুদের প্রতি না, সমাজের প্রতি না, কোন দায়িত্বের প্রতি না। শুধু তরুণ-তরুণীর প্রেম। যেন তরুণ-তরুণীদের আর কোন কাজ নাই। নাটকে তেমন কোনো চরিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী পর্যন্ত নাই।
ক্যামেরা, লোকেশন, গ্ল্যামারসহ অনেক কিছুতেই আমরা উন্নতি করলেও নাটকের ঘটনাগুলো মনে হচ্ছে একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এখানে পরিবর্তন দরকার। কারণ আমরা যা দেখি, সেটার প্রয়োগ অনেকেই নিজের মধ্যে করে থাকি।
তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না, জীবন থেমে যাবে, এগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন কথা। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। থামিয়ে রাখাও উচিত না। জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই।
ছোট একটা উদাহরণ দেই। পদ্মা নদী পার হচ্ছিলাম। ক্যানেলের পর লঞ্চটি যখন মূল নদীতে আসলো, নদীতে তখন প্রচন্ড স্রোত। লঞ্চ দুলছে। লঞ্চের ভেতরে কয়েকজন মহিলা ছিল। কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। সবাই উচ্চস্বরে দোয়া ইউনুস পড়ছেন।
এরকম একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন যদি আপনি কখনো হন, তখন আপনার মাথায় কি কি চিন্তা আসতে পারে? দয়া করে ভাবুন তো একবার।
আপনি কি জমানো টাকা-পয়সার চিন্তা করবেন, নাকি আপনার রেখে যাওয়া সম্পদ কিভাবে ভাগ বাটোয়ারা হবে, সেটা হিসেব করতে বসবেন? ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করবেন, কিভাবে অন্যদের টপকে আপনি উপরে উঠবেন? নাকি ব্যবসায় আরো কিভাবে লাভবান হওয়া যায়, সেই চিন্তা করবেন?
আমার বিশ্বাস, এরকম মুহূর্তে শুধু একটা চিন্তাই মাথায় আসে, যেটা আমার মাথায় এসেছিল, এই যাত্রায় মৃত্যুটা যেন না হয়। এবার যেন বেঁচে যাই।
আসলে আমরা জীবনকে বড় ভালোবাসি। এটা দোষের কিছু নয়। এমনটিই হওয়া উচিত। কারণ জীবন এক বারের জন্যই। আর বাকি যা কিছু আছে, সব মরীচিকার মত। জীবনের জন্যই সব। জীবন আছে বলেই প্রেম, অভিমান, স্বপ্ন, দুঃখ, আকাঙ্খা সবকিছু আছে। কিন্তু নাটকগুলো দেখে মনে হয়েছে, প্রেম ভালোবাসা যেন আমাদের জাতীয় সমস্যা। এছাড়া আমাদের তরুণ-তরুণীদের আর কোন কাজ নেই।
শুধুমাত্র প্রেম ভালোবাসার মধ্যে আটকে না থেকে গল্পগুলোর কাহিনীর মাঝে পরিবর্তন আনা দরকার। তাহলে আমাদের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও এক ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’
- সুনীল অর্থনীতি ও রূপকল্প-২০৪১
- শিক্ষার ধরন ও বেকারত্ব: দেশে অশিক্ষিতদের চেয়ে শিক্ষিত বেকার ৩ গুন
- ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
- ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১ ও দ্বিপক্ষিয় কূটনীতিক সম্পর্ক
- মিডিয়ার শক্তি বা আসক্তি: ম্যাজিক বুলেটের বাকের ভাই ও বদি
- গণমাধ্যমে গণরুচির বিকার
- হালকা বিনোদনের প্রাধান্যে সংস্কৃতির অবনতি
- বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণার দিন শেষ, চার উপায়ে মধ্য আয়ের দেশ