শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২১, তথ্যচিত্র

প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা

২৩:০৯, ২৯ মে ২০২১

১৫৩৬

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২১, তথ্যচিত্র

World Anti Tobacco Day 2021
World Anti Tobacco Day 2021

তামাকই পৃথিবীর একমাত্র পণ্য যা আইনগতভাবে বৈধ হলেও লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। তামাকের ক্ষয়-ক্ষতি কেবল এর ব্যবহারের মধ্যেই সীমিত নয়, তামাকচাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন- সবই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সমাজকে অপূরণীয় দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয়। কাজেই মানুষ ও পরিবেশের জন্য সমাজ তখনই কল্যাণকর হবে যখন তা হবে তামাকমুক্ত। 

৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তামাকের সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘Commit To Quit’।  বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে  ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে। ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে সংকল্পবদ্ধ বাংলাদেশ এবং এলক্ষ্য পূরণে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে করারোপ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

কেনো তামাক ছাড়বেন?

•    নিজের জন্য
শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারে করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায় এবং মুখ গহ্বর, ফুসফুস, খাদ্যনালীসহ প্রায় ২০ ধরনের ক্যানসার হয়। অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ গুণ। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস সংক্রমণে (সিওপিডি) ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৩ গুণ পর্যন্ত বেশি। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৪০ – ৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তামাক ছাড়ার অনেক সুফল রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি টানা ১ বছর তামাকমুক্ত থাকতে পারেন, তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক কমে আসে। ধূমপান ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি ধূমপায়ীর তুলনায় অর্ধেক কমে যায়৷ এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে তার প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় প্রায় ১০ বছর বেড়ে যায়।

•    পরিবার ও অন্যের জন্য 
বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার চিত্র খুবই ভয়াবহ। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪ কোটি ৮ লক্ষ (৩৯%) মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি। প্রায় ৩৭ শতাংশ নারী বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, অথচ নারী ধূমপায়ীর হার মাত্র ০.৮ শতাংশ। তামাকের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুস্বাস্থ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। 

তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়।তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ)। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠির মধ্যে এই হার মাত্র ২৪ শতাংশ। গ্যাটস ফলাফলে আরো দেখা গেছে, ২০০৯ সালের তুলনায় একজন বিড়ি ব্যবহারকারীর বিড়ি বাবদ মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে, সিগারেট ক্রয় করতে একজন ধূমপায়ীর গড় মাসিক ব্যয় হয় ১০৭৭.৭ টাকা। অথচ শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য একটি পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় যথাক্রমে মাত্র ৮৩৫.৭ এবং ৭০০ টাকা (খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১৬)। অর্থাৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহারের অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামাকের জন্য ব্যয়িত অর্থ শিক্ষা ও চিকিৎসা দারিদ্র্য তথা মানবদারিদ্র্য মোকাবেলায় ব্যয় করা গেলে পরিবারগুলোর জীবনমানে উন্নতি ঘটতো। বাংলাদেশে গৃহস্থালী ব্যয়ের ক্ষেত্রে তামাকের পিছনে ব্যয়ের ক্রাউডিং আউট প্রভাব বিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোকে তামাকমুক্ত পরিবারের তুলনায় শিক্ষা, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানি এবং যাতায়াতের চেয়ে চিকিৎসায় অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়।   এছাড়াও তামাকের ব্যবহার স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি, আয় ও উৎপাদনশীলতা  হ্রাস এবং একইসাথে পুষ্টি ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয় সীমিত করার মাধ্যমে পরিবারগুলোকে ক্রমশ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করে ফেলে (টোব্যাকো অ্যান্ড পোভার্টি, টোব্যাকোনোমিক্স পলিসি ব্রিফ, ২০১৮)।  

তামাকাসক্তি নিরসনের ভুল পথ ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি)
বিশ্বজুড়ে তামাকের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতেও ধূমপায়ীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। উদ্বেগের বিষয় হলো মানুষের তামাক ত্যাগের এই আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে ইতোমধ্যেই ব্যবসা শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। তারা ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি) যেমন: ভ্যাপিং, ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো ইত্যাদিকে সিগারেটের ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে বাজারজাত করছে এবং একইভাবে তা নীতি নির্ধারকদের সামনেও উপস্থাপন করছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলোর এসব দাবি এরই মধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত WHO Report on Global Tobacco Epidemic 2019– এ ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই বছর ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং-সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের তীব্র জটিলতা ও মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মহামারির আকার ধারণ করলে এই ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসগুলোর সত্যিকারের চেহারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। 
   
করণীয়
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের পূর্বেই ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানির ক্রমাগত হস্তক্ষেপ, জটিল ও দুর্বল কর-কাঠামো, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা এবং আইন বাস্তবায়নে শিথিলতা প্রভৃতি কারণে তামাক ব্যবহার হ্রাসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ এখন থেকেই গ্রহণ করা হলে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে, তামাকজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু হ্রাস পাবে এবং একইসাথে তা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

•    কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণ
o    সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের বিশেষ করে তরুণ ও দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া;
o    মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা;
o    একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করা, যা তামাকের ব্যবহার হ্রাস এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

•    তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন
o    ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; 
o    বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; 
o    তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; 
o    বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; 
o    ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) এর মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; এবং 
o    সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ।

তথ্যসূত্র
https://www.who.int/campaigns/world-no-tobacco-day/world-no-tobacco-day-2021
https://www.who.int/health-topics/tobacco#tab=tab_1
https://www.euro.who.int/en/health-topics/disease-prevention/tobacco/news/news/2020/2/tobacco-use-causes-almost-one-third-of-cancer-deaths-in-the-who-european-region
https://www.cdc.gov/tobacco/data_statistics/fact_sheets/health_effects/effects_cig_smoking/
https://www.who.int/news/item/28-05-2021-who-supports-people-quitting-tobacco-to-reduce-their-risk-of-severe-covid-19 
https://www.who.int/news-room/q-a-detail/tobacco-health-benefits-of-smoking-cessation
Global adult tobacco survey (GATS): Bangladesh, 2017. World Health Organization; 2018. Available at: https://ntcc.gov.bd/ntcc/uploads/editor/files/GATS%20Report%20Final-2017_20%20MB.PDF
https://academic.oup.com/ntr/advance-article/doi/10.1093/ntr/ntx248/4677311?guestAccessKey=84169f0f-7822-4584-8e94-258a311bd235 
Faruque GM, Wadood SN, Ahmed M, Parven R, Huq I, Chowdhury SR. The economic cost of tobacco use in Bangladesh: A health cost approach. Bangladesh Cancer Society. February 23, 2019. Available at: https://drive.google.com/file/d/1wJ2b9XISR0n412teaIhkTW5Kn2wugOW1/view
Husain MJ, Datta BK, Virk-Baker MK, Parascandola M, Khondker BH (2018) The crowding-out effect of tobacco expenditure on household spending patterns in Bangladesh. PLoS ONE 13(10): e0205120.
Chaloupka FJ and Blecher E. Tobacco & Poverty: Tobacco Use Makes the Poor Poorer; Tobacco Tax Increases Can Change That. A Tobacconomics Policy Brief. Chicago, IL: Tobacconomics, Health Policy Center, Institute for Health Research and Policy, University of Illinois at Chicago, 2018.
A Report of the Surgeon General 2016 on E-Cigarette Use Among Youth and Young Adults. Available at:  
www.cdc.gov/tobacco/data_statistics/sgr/e-cigarettes/pdfs/2016_sgr_entire_report_508.pdf
WHO report on the global tobacco epidemic 2019. Available at: https://apps.who.int/iris/bitstream/handle/10665/326043/9789241516204-eng.pdf?ua=1
https://www.cdc.gov/tobacco/basic_information/e-cigarettes/severe-lung-disease.html#latest-outbreak-information


 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank