নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেগুলো দূর করে একসঙ্গে মাঠে নামতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। জেল খাটছি। আমরা বার বার জেলে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা এখনো চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি। এই চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য আমাদের সংগঠনকে আরও দৃঢ় করতে হবে, নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে দূর করে ফেলতে হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে একজোট হয়ে নামতে হবে। কারণ এটা বিএনপির সমস্যা না, এটা বাংলাদেশের সমস্যা। এটা জাতির সমস্যা, এই জাতি ভবিষ্যতে টিকবে কি টিকবে না আপনার ছেলেরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে কি পাবে না, তারা স্বাধীনভাবে চলতে পারবে কি পারবে না, তার পুরোটাই নির্ভর করছে এই সরকারকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পরাজিত করতে না পারা পর্যন্ত।’

সোমবার (৩ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করে মহিলা দল।

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বার বার বলি সাহস থাকলে আসেন না, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কার কত জনপ্রিয়তা বোঝা যাবে। এই সরকারের শাসনকালে দলীয় সরকারের অধীনে তিনটা নির্বাচনেই প্রহসন হয়েছে। এরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। গত ১৫ বছরে একটা দানব সরকার সবকিছু ধ্বংস করেছে।’

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ আহমেদ আওয়ামী লীগের আসল চেহারা- এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘গত কিছুদিন পত্রিকা খুললেই বেনজীরের নজিরবিহীন দুর্নীতি। একইসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান। তাকেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে। আর তাদের তথাকথিত সংসদ সদস্যকে কলকাতায় নিয়ে টুকরো-টুকরো করেছে। এই হচ্ছে তাদের (আওয়ামী লীগের) চেহারা।’

প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন তার সাবেক প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা কোথায় থাকে যখন তাদের সাবেক প্রধানকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়। কার সম্মান কোথায় থাকে। আজ এরা দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ পত্রিকায় দেখলাম পাবনায় দুটি গরু বিক্রি হয়েছে ৪০ লাখ টাকায়। এদিকে মানুষ ডিম কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম দিতে পারছে না। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছে না। অন্যদিকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনছে। এটা কেন? এই দেশের অর্থনীতিকে এমন জায়গা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ধনীকে আরও ধনী করছে। আর গরিবকে আরও গরিব করছে।’

আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলতে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়ার ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এটাকে তারা মুছে ফেলতে চায়। আওয়ামী লীগ শুধু একজন মানুষকে মহিমান্বিত করার জন্য তাদের পুরো ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে। আমরা শেখ মুজিবের অবদানকে কখনো অস্বীকার করি না। কিন্তু কী করে অস্বীকার করা যাবে যার ঘোষণায় আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করেছিলাম, যারা এটা করতে চায়, এটা যে তাদের রাজনৈতিক সংকীর্ণতা সেটা প্রমাণ হয়।’

জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি করা বিএনপি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘তার আদর্শ সবচেয়ে বড়। এখানে আরেকজনের কথা বলতে চাই, তিনি হলেন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। যুদ্ধের সময় ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। আমি যখন তাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বলি, তখন আওয়ামী লীগের গাজ্বালা করে। কারণ তাদের নেত্রী তো মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমি কারও সমালোচনা করতে চাই না, যার যা অবদান সেটা স্বীকার করে নেওয়াই হচ্ছে মহত্ত্বের লক্ষণ।’

প্রাথমিক স্কুলের বইতে সরকার মিথ্যা প্রচার করে চলছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘সেখানে একজনের নাম ছাড়া কারও নাম নেই। সেখানে তাদের নেতা তাজউদ্দীন আহমদের নাম নেই। জেনারেল ওসমানীর নামও নেই। কেউ নেই। এক নেতা, এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, এটাই তারা আজ প্রচার করছে। তারা দীর্ঘকাল ধরে দেশকে শোষণ করছে, দুর্নীতি করছে।’

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সাহিদা রফিক, মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।